প্রায়ই শোনা যায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলুর হয়ে কারো মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও প্রতিনিয়ত হার্ট ফেইলুরের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ থেকে ২০ বছর পর হৃদরোগীদের সবচেয়ে বেশি রোগী হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হবে।
ফেইলুরের কারণ : হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা যে কোনো ভাবে যদি এমন পর্যায়ে কমে যায়, যাতে হার্ট শরীরের প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় তখন উপরোক্ত অবস্থাকে হার্ট ফেইলুর বলা হয়। বহুবিধ কারণে হার্ট ফেইলুর হয়ে থাকে যেমন- হার্ট দুর্বল হয়ে যাওয়া, শরীরের রক্ত প্রবাহের চাহিদা অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়া এবং খুব বেশি রক্ত শূন্যতা, হার্ট ফেইলুরের অন্যতম তিনটি কারণ।
হার্ট দুর্বলের কারণ : যেমন হার্ট অ্যাটাক, হার্টের বাল্বের সমস্যা, হার্টের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব কারণে হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কারণ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ (হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর রোগ)-৬০%, তারপর উচ্চ রক্তচাপ-১১%, ধূমপান-১৬%, হৃৎপিণ্ডে বাল্বের সমস্যা (বাতজ্বরজনিত)-১২%।
ফেইলুরের উপসর্গ : সাধারণভাবে হার্ট ফেইলুর খুব ধীরে ধীরে হার্টের অবস্থার অবনতি ঘটায়, যার জন্য রোগী অনেক সময় পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে থাকে। এ অবস্থায় রোগীর হার্ট ফেইলুরের উপসর্গগুলো অনুভূত নাও হতে পারে। ধীরে ধীরে যে সব উপসর্গগুলো রোগীর শরীরে দেখা দেয় তা হচ্ছে শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হওয়া, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, পরবর্তীতে স্বাভাবিক কাজকর্মে ক্লান্তি বোধ করা এবং অবশেষে অল্প পরিশ্রমে রোগী ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। রোগীর শ্বাসকষ্ট হওয়া আরেকটি উপসর্গ। প্রাথমিক অবস্থায় রাতে শোয়ার সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া তার সঙ্গে হালকা কাঁশি থাকতে পারে।
শরীরে পানি জমে যাওয়া : প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর পেটে পানি জমতে থাকে। পেটে পানি জমার জন্য রোগীর পেট ফেঁপে যায়, হজমে সমস্যা দেখা দেয়, পেটে অত্যাধিক গ্যাস উৎপন্ন হয়ে থাকে। হার্ট ফেইলুরের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর হাত, পা ও মুখে পানি জমে- হাত, পা ও মুখ ফুলে যায়। এসব উপসর্গের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। হার্ট ফেইলুরের তীব্রতা আরও বেশি বাড়লে রোগীর ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে, হার্টের চতুর্দিকেও পানি জমে যেতে পারে, এমতাবস্থায় রোগী সারাক্ষণ শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে, রোগীর চলাফেরা উঠা-বসা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসা : খাদ্যে লবণ গ্রহণের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা; এর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রোগীর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। যেমন- হালকা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, ব্রিদিং এঙ্ারসাইজ (শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম) ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং হার্ট ফেইলুরের জন্য মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
লেখক : সিনি. কনসালটেন্ট, (কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ফোন : ০১৯৭১-৫৬৫৭৬১