টেস্টখেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ে ছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ- এ নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে অনেকের। কিন্তু সমর্থন রয়েছে পরিসংখ্যানের। দুই দেশ এখন পর্যন্ত যে ২৫ ওয়ানডে খেলেছে, তাতে সাতটিতে জয় বাংলাদেশের এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৬টি। ১০ টেস্টে বাংলাদেশের দুই জয়ের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের ছয়টি এবং পাঁচ টি-২০ ম্যাচে টাইগারদের জয় দুটি এবং হার তিনটি। এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নেই। তাই অন্য দেশগুলোর তুলনায় ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে স্বপ্ন দেখতে সাহস করে টাইগাররা। এবারও স্বপ্ন দেখছেন মুশফিকুর রহিম, চন্ডিকা হাতুরাসিংহেরা। জয়ের সেই স্বপ্ন নিয়েই আজ রাত ৯টায় তিনটি ওয়ানডে, একটি টি-২০ ও দুটি টেস্ট খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছেন মুশফিকরা। প্রায় ৩৬ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে ১৫ আগস্ট গ্রেনাডায় পা রাখবেন হাতুরাসিংহের শিষ্যরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। ডাবলিনের ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল সাত উইকেটে। এরপর গত ১৫ বছরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২৪টি ওয়ানডে খেলেছে। তবে লিজেন্ড গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারার দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম সিরিজ খেলে ১৯৯৯-২০০০ সালে। হেরেছিল সিরিজটি। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে ২০০২ সালে। দ্বীপপুঞ্জে প্রথম সফরে যায় ২০০৪ সালে। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলেও খালেদ মাসুদ পাইলট ও মো. রফিকের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ড্র করেছিল একটি টেস্ট। ২০০৯ সালের সফরটি বাংলাদেশের সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে আজীবন। টেস্ট এবং ওয়ানডে দুটি সিরিজেই টাইগাররা হোয়াইটওয়াশ করেছিল ক্যারিবীয়দের। এরপর আরও দুটি সিরিজ খেলেছে এবং লড়াই করেছে সমানে সমান। দুই দেশের সর্বশেষ সিরিজ ২০১২-১৩ মৌসুমে এবং ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল মুশফিক বাহিনী।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ পুনরুদ্ধারে এবার শক্তিশালী দল গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শক্তিশালী দল গঠন করেছে ক্রিস গেইলদের নিয়ে। তিন ফরমেটে জিততে শক্তিশালী দল নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। যদিও দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান যাচ্ছেন না সফরে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কোচের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত ও অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ সাকিব। সে জন্যই দলের সঙ্গী হতে পারেননি। তারপরও টাইগার অধিনায়ক মুশফিক সিরিজে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন, 'আমরা যদি সেরাটা খেলতে পারি, তাহলে বেশ কয়েকটি ম্যাচে জিততেও পারব।' দলের সদস্য হয়ে এর আগেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছেন মুশফিক। খেলেছেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এবার যাচ্ছেন দলনায়ক হয়ে। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচ দিয়ে অধিনায়কত্বের অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। ওই ম্যাচের উইনিং শটটি এসেছিল মুশফিকের ছক্কায়। কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই প্রথম অফিসিয়াল সফর হাতুরাসিংহের। দেড় মাস কঠোর পরিশ্রম করেছেন শিষ্যদের নিয়ে। দলের অনুশীলন নিয়ে সন্তুষ্ট কোচ টার্গেট করেছেন তিন
ফরমেটে জয়ের, 'আমরা জয়ের জন্য খেলব এবং তিন ফরমেটেই জিততে চাই।'
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফর শুরু ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডে গ্রেনাডায় ২০ ও ২৩ আগস্ট। ২৫ আগস্ট তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে সেন্ট কিটসে। ২৭ আগস্ট সেন্ট কিটসে একমাত্র টি-২০ ম্যাচ। সবগুলো ম্যাচই ফ্লাডলাইটের আলোয়। ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচের জন্য আগেই ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে এই দল থেকে পাঁচজন ক্রিকেটার ফিরে আসবেন। তাদের জায়গায় যাবেন নতুন পাঁচ ক্রিকেটার।
ওয়ানডে স্কোয়াড : মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, শামসুর রহমান শুভ, মুমিনুল হক সৌরভ, রুবেল হোসেন, নাসির হোসেন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মো. মিঠুন, আবদুর রাজ্জাক রাজ, মাশরাফি বিন মর্তুজা, সোহাগ গাজী, তাসকিন আহমেদ, ইমরুল কায়েস ও আল-আমিন।