এক দশক আগে হাবিবুল বাশার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এসেছিলেন অধিনায়ক হয়ে। এবার যখন পা রাখেন অপরূপ সৌন্দর্যের ওয়েস্ট ইন্ডিজে, তখন তিনি টিম ম্যানেজার ও নির্বাচক। ক্যারিবীয় সফরে সাবেক অধিনায়কের দায়িত্ব ক্রিকেটারদের দেখভাল করার পাশাপাশি পারফরম্যান্স যাচাই-বাছাই করা। সেটা করছেনও। তবে সেন্ট লুসিয়ার গ্রস আইলেটে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫০০ নম্বর টেস্টে প্রতিপক্ষ হয়ে নামার আগে উত্তরসূরিদের উদ্দীপনায় টনিক জুগিয়েছেন অতীত ইতিহাসের গল্প বলে। তার নেতৃত্বেই গ্রস আইলেটে টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। ২০০৪ সালের ওই টেস্টে আবার সেঞ্চুরিও করেছিলেন বাশার। সেই লড়াকু ড্রয়ের গল্প শুনিয়েই আত্মবিশ্বাসী করেছেন দলকে। সেন্ট লুসিয়ার সুখস্মৃতিই এবার মুশফিকুর রহিমদের একমাত্র উজ্জীবনী পথ্য।
তলানিতে চলে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে একাদশে আজ একাধিক পরিবর্তন আনছে টাইগাররা। চর্মরোগের জন্য খেলবেন না ইমরুল কায়েস। তার জায়গায় ফিরছেন প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকানো এনামুল হক বিজয়। যদি ইমরুল খেলতেন, তাহলে একাদশের বাইরে বসে থাকতে হতো ওয়ানডাউনে খেলতে নামা শামসুর রহমান শুভকে। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬৬ রানের ইনিংস খেলে। আর্নেস ভেলে ১০ উইকেটে হারের ম্যাচটির দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকের সঙ্গে জুটি বেঁধে মাহমুদুল্লাহ ১৩০ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছিলেন। মাহমুদুল্লাহর হাফ সেঞ্চুরিটি করেন দীর্ঘ ২১ মাস পর। তিনি একাদশে টিকে থাকায় বাদ পড়ছেন কিংসটাউনে অভিষিক্ত শুভাগত হোম। অবশ্য তার পারফরম্যান্সও যাচ্ছেতাই। শুভাগতকে বসিয়ে একাদশ সাজানো হচ্ছে তিন পেসার দিয়ে। ফিরছেন পেসার রবিউল ইসলাম শিবলু। গত টেস্টে দুই পেসার খেলানোর ফল হাড়ে হাড়ে টের পায় টাইগাররা। আইসিসির চোখে বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হলেও এই টেস্ট খেলছেন আল-আমিন। কিংসটাউনে তার বোলিং অ্যাকশনকে সন্দেহজনক বলে আইসিসি। অবশ্য শোধরানোর সময় নির্ধারিত না হওয়ায় খেলার সুযোগ পাচ্ছেন এই ডান হাতি পেসার। তবে তার খেলা হবে না ইনচেন এশিয়ান গেমসে। তার জায়গায় খেলবেন রুবেল হোসেন। রুবেল অবশ্য এই টেস্টেও খেলছেন। এদিকে ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে সেন্ট লুসিয়া টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ হাতি ওপেনার ক্রিস গেইল।
ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। এরপর কিংসটাউনে ১০ উইকেটে হার। ৩১ নম্বর ইনিংস হারের দ্বারপ্রান্তে চলে আসা টাইগাররা বেঁচে যায় অনেকগুলো রেকর্ডের জন্ম দেওয়া মুশফিকের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে। সেঞ্চুরি করে এখন তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের মালিক। ১৫ টেস্টে তার রান ১১৪২। সেঞ্চুরি দুটি এবং হাফ সেঞ্চুরি ৭টি। আগের রেকর্ডটি বাশারের। অধিনায়ক হিসেবে ১৮ টেস্টে বাশারের রান ১০৪৪ এবং সেঞ্চুরি একটি ও হাফ সেঞ্চুরি ৮টি। কিংসটাউনে মুশফিকের ইনিংসটি ছিল ১১৬ রানের।
১০ বছর আগে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে গ্রস আইলেটে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন বাশাররা। বাশারের ১১৩ ও আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা মোহাম্মদ রফিকের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে গেইলের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও স্বাগতিকদের ইনিংস থেমে গিয়েছিল ৩৫২ রানে। ৬৪ রানে এগিয়ে ৯ উইকেটে ২৭১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ওটাই প্রথম ইনিংস ঘোষণা। ম্যাচটি ড্র করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিনা উইকেটে ১১৩ রান তুলে। ওই টেস্টের ফলই এবার আত্মবিশ্বাসহীন মুশফিকদের একমাত্র উজ্জীবনী টনিক।