আগের রাতে ক্রিকেটপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎসাহ দিয়েছেন। সাহস জুগিয়েছেন। আত্দবিশ্বাসী হতে বলেছেন। বলেছেন প্রতিটি ম্যাচে শেষ পর্যন্ত লড়তে। প্রধানমন্ত্রীর জোগানো সাহসকে সঙ্গী করে আগামীকাল রাতে বিশ্বকাপ মিশনে ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে কাল মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মুখোমুখিতে পুরনো দিন ভুলে সামনে এগোনোর কথা বলেন টাইগার অধিনায়ক। তবে এটাও বলেছেন, ক্রিকেট মহাযজ্ঞে ভালো-মন্দ নির্ভর করছে প্রথম ম্যাচের ওপর। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ১৮ ফেব্রুয়ারি, প্রতিপক্ষ আনকোরা আফগানিস্তান। তাই ক্রিকেট মহাযজ্ঞের সবগুলো ম্যাচ নিয়ে বাড়তি ভাবনায় না গিয়ে শুরুতে প্রথম ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চাইছেন মাশরাফি।
টানা পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ছেন মাশরাফিরা। আগের চারবারের তুলনায় এবারের উন্মাদনা একটু বেশিই। দেশের ক্রিকেটমোদীদের এই উন্মাদনার কথা বেশ ভালো করে জানেন অধিনায়ক মাশরাফি। জানেন বলে পুরনো সবকিছুকে মাটি চাপা দিয়ে শুরু করতে চাইছেন নতুন করে, 'চার বছর আগের (২০১১ সালের বিশ্বকাপ) কথা মনে রেখে লাভ নেই। নতুন বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। আগেরটি না ভেবে নতুন করে শুরু করতে চাই।' ১৯৯৯ সালে প্রথমবার খেলতে নেমে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়েছিল। ২০০৩ সালে জয়ের দেখা পায়নি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা। সেবার ভারতের মতো দলকে হারিয়ে সুপার এইট খেলেছিল টাইগাররা। সুপার এইটে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকেও। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলেও সুপার এইটে দর্শক হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার তাই নতুন করে শুরু করতে চাইছেন মাশরাফি, 'ইচ্ছাতো শেষ পর্যন্ত খেলা। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো দল থাকার পরও দ্বিতীয় রাউন্ড খেলতে চাই। যদিও অনেক কঠিন কাজ। অবশ্য কঠিন কাজটা সহজ হবে তখনই, যখন শুরুটা ভালো হবে। তাই আমি মনে করি শুরুর ম্যাচ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।'
বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানদের বিপক্ষে গত বছর এশিয়া কাপে হেরেছিল ঘরের মাঠে। এক হিসেবে প্রতিশোধের ম্যাচও। সেসব কিছু না ভেবে বিশ্বকাপের ম্যাচ মনে করে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন টাইগার অধিনায়ক, 'আমাদের গ্রুপে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দল। তারপরও আমি বিশ্বাস করি যারা বিশ্বকাপ খেলবে, তারা প্রমাণ করেই এসেছে। তাই হালকাভাবে নেওয়ার কোনো কিছুই নেই। স্কটল্যান্ড নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। সেটা করছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। আমি মনে করি বিশ্বকাপে ভালো করার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। তারপরও মনে রাখতে হবে, এমন একটি টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে মানসিক শক্তির প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় বিষয়, এসব আসরে যে চাপ নিতে পারবে সে ভালো করবে। আমি মনে করি পরের রাউন্ডে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে আমাদের। তবে সবকিছু নির্ভর করছে আফগানিস্তান ম্যাচের ওপর।'
টাইগার অধিনায়ক বিশ্বাস করেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার। সঙ্গে এটা মনে করেন, দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে সিনিয়র ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স করা জরুরি, 'সিনিয়র ক্রিকেটারদের দায়িত্ব অনেক। সিনিয়র ক্রিকেটারদের মাঠে ও মাঠের বাইরে অনেক কাজ থাকে। অবশ্য সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণদেরও ভালো করতে হবে। আমি মনে করি আমাদের তরুণদের ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে। যদিও তাদের অভিজ্ঞতা কম।' বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মাশরাফি। ২০০৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলেন টাইগার অধিনায়ক। এরপর ২০০৭ সালে খেলেন। ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি ২০১১ সালে। এবার অধিনায়ক। তাই বেশ ভালো করেই জানেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলগুলোর শক্তির বিষয়টি, 'আমাদের দল যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছে, তারমধ্যে ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালের দলটি শক্তিশালী। এবার নতুন বিশ্বকাপ। ২০০৭ সালে শক্তিশালী গ্রুপ ছিল। শুরুটা ভালো হয়েছিল বলে সাফল্য পেয়েছিলাম। এবারও যদি শুরুটা ভালো করতে পারি, তাহলে সফল হব।' আগের দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন সদস্য হয়ে। এবার খেলছেন অধিনায়ক হয়ে। তাই এবারের বিশ্বকাপের আবেদন অন্যগুলোর চেয়ে একটু আলাদা মাশরাফির কাছে। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে দলকে নেতৃত্ব দিলেও কাজটি অনেক বেশি কঠিন মনে করে মাশরাফি, 'বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া সব সময়ই কঠিন। পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা না থাকলে নেতৃত্ব দেওয়া খুবই কঠিন। শেষ পাঁচ ম্যাচ আমি জিতেছি। কিন্তু এখনই ওই জায়গাটা তৈরি হয়নি। বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারলে খারাপ লাগবে। তাই আমার চেষ্টা থাকবে সেরাটা খেলার।' ২০১৪ সালে হারতে হারতে তলানিতে এসে ঠেকেছিল টাইগারদের মনমানসিকতা। মাশরাফির হাত ধরে সেই ধাক্কা সামলে এখন আত্দবিশ্বাসী ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপে সেই আত্দবিশ্বাস নিয়েই যাচ্ছেন মাশরাফিরা। স্বপ্ন অনেক লম্বা। এখন বাকি শুধু বাস্তবায়ন।