স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও ফরিদপুরের নগরকান্দার একটি গ্রামে আজও পৌঁছেনি কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া শহীদ নগর ইউনিয়নের অবহেলিত এ গ্রামটি হচ্ছে শেখরকান্দি। সরেজমিনে এ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটিতে নেই কোনো পাকা সড়ক। বর্ষা এলেই কাঁচা পথগুলো কাদায় পরিণত হয়, আর তখনই শুরু হয় দুর্ভোগের অধ্যায়। নৌকা কিংবা হাঁটু কাদা নিয়ে চলাই এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেখরকান্দি ও আশপাশের আরও ছয়-সাতটি গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রতিদিন পাড়ি দেন এই দুঃসহ পথ। শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগীসহ সবার জীবন জড়িয়ে আছে এই কর্দমাক্ত সড়কের সঙ্গে।
স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘বৃষ্টি হলেই স্কুলে যেতে কষ্ট হয়। কাদা পেরিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় জামা ভিজে যায়’।
শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, বেশি বিপাকে পড়তে হয় বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের। গুরুতর রোগী কিংবা প্রসব বেদনায় কাতর গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে নিতে হলে কাঁধে করেই নিয়ে যেতে হয়। কারণ, এই গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে না, ভ্যান চললেও আটকে যায় কাদায়। এমন পরিস্থিতিতে আত্মীয়স্বজনও গ্রামে আসতে চায় না। আসলেও রাস্তার দুরবস্থার কারণে অনেকেই ফিরে যান। গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা যেন একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে থাকি। আত্মীয়রাও আমাদের এড়িয়ে চলে’।
শুধু যাতায়াত নয়, বিপদে-আপদেও বঞ্চিত শেখরকান্দির মানুষ। মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ফায়ার সার্ভিস অফিস থাকলেও রাস্তা না থাকায় অগ্নিকান্ডে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গ্রামে পৌঁছাতে পারে না। নিজেরাই বাঁশের ডোল, বালতি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
এই গ্রামেই রয়েছে ঐতিহাসিক দিঘলিয়ার বিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই বিলেই পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল শেখরকান্দির সাহসী মানুষেরা। সেই যুদ্ধজয়ের গর্বিত ইতিহাস আজ ধূসর হতে বসেছে, কারণ এই গ্রামে উন্নয়নের মূল স্রোতধারা থেকে বাদ পড়ে আছে।
৮২ বছর বয়সী বাচ্চু শেখ বলেন, ‘এই মাটিতে আমরা যুদ্ধ করেছি। অনেকেই জীবন দিয়েছে দেশের জন্য। অথচ আজও চোখে দেখিনি পাকা রাস্তা। মরার আগে যদি দেখতে পারি, সেটাই হবে আমার বিজয়’।
গ্রামের ইউপি সদস্য শামসুল হক জানান, ‘বহুবার রাস্তা নির্মাণের দাবি জানিয়েছি স্থানীয় প্রশাসনকে। আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু কাজ হয়নি’।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দবির উদ্দিন বলেন, ‘শেখরকান্দি গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে শিগগিরই’।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল