২০০৭ সালে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তামিম ইকবালের ইনিংসটি এখনো নস্টালজিয়ায় নিয়ে যায় ক্রিকেটপ্রেমীদের। ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন এই বাঁ হাতি ড্যাসিং ওপেনার। হাফ সেঞ্চুরির যে ইনিংসটি খেলেছিলেন তামিম, তাতে জহির খানকে মারা দুটি ছক্কা এখনো শিহরণ জাগায়। তামিমের ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকানো দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন ধারাভাষ্যকাররাও। সেদিনকার তরুণ তামিম এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মর্তুজাদের মতো তারকা ক্রিকেটার থাকার পরও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে তামিম টাইগারদের অন্যতম ভরসা। সেই তামিম এখন লড়ছেন ফিটনেস ফিরে পেতে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য হলেও কাল দলের সঙ্গে ব্রিসবেনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েননি। যাবেন আজ সকালে। গন্তব্য ব্রিসবেন নয়, মেলবোর্ন। সেখানে ডা. ডেভিড ইয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করে ২৯ জানুয়ারি যোগ দিবেন দলের সঙ্গে। মাশরাফিদের সঙ্গে যেতে না পেরে মনোকষ্টে ভোগা তামিম চাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করতে। নিজে না পারলেও বিশ্বাস করেন, এবার কেউ না কেউ দেখা পাবেন সেঞ্চুরির।
বাঁ হাঁটুর মিনিসকাসের অস্ত্রোপচার শেষে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি পুরোপুরি। অনুশীলন করেছেন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে। পুরো সুস্থ না হওয়ায় দলের সঙ্গী হননি। এক সঙ্গে যেতে না পারায় কষ্ট পেয়েছেন বাঁ হাতি ড্যাসিং ওপেনার, 'এতো বড় ইভেন্টে এক সঙ্গে সবার যাওয়ার বিষয়টি একেবারেই অন্যরকম। কিন্তু যেতে না পারায় কষ্ট লাগছে। অবশ্য যেতে না পারার কারণ ট্রিটমেন্ট। এটাও আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখনো শতভাগ ফিট নই। ইনজেকশন নেওয়ার পর আশা করছি দ্রুত রিকভারি করব। প্রথম ম্যাচের আগে যদি ফিট হয়ে যাই তাহলে ভালোই হবে।'
রাতে ঢাকা ছেড়েছে দল। কিন্তু সকালে অনুশীলন করেছেন তামিম। অনুশীলনে তিনি সাবলীল ব্যাটিং করেছেন বোলিং মেশিনে। ব্যাটিং করার পর ফিটনেস নিয়ে সন্তুষ্ট তামিম, 'আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা আছে। অনুশীলনে আমি সবধরনের শটস খেলেছি। অস্ত্রোপচারের আগে যে ব্যথা ছিল হাঁটুতে, সেটা এখন নেই। সেটা না থাকলে আমি অনেকদূর এগিয়ে যাব।' অফিশিয়াল সংবাদ সম্মেলনে টাইগার কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে জানিয়েছিলেন, দুটি অনুশীলন ম্যাচে চান তামিমকে এবং শতভাগ ফিট না হলে তামিমকে না খেলানোর কথাও স্পষ্ট করে দেন। কোচের ওই মন্তব্যে নাখোশ নন বাঁ হাতি ওপেনার, 'আমিও মনে করি কমপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা উচিত আমার। চেষ্টা করব ব্রিসবেনে একটি খেলার। আমি মনে করি ওখানকার উইকেটের আচরণ অন্যরকম। কোচ যা বলেছেন, সেটা মোটিভেশন কিংবা চাপ নয়। সত্যি বলতে কোনো আনফিট ক্রিকেটারই যাবেন না। এত বড় ইভেন্টে ফিট ক্রিকেটারই খেলবেন। আমি শতভাগ ফিট হয়েই খেলব। কেননা ফিল্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
১৯৯৯ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। ২০০৩ সাল ছাড়া প্রতিটি আসরেই উৎসব, উচ্ছ্বাসে মেতেছে। এক ম্যাচে তিন তিনটি হাফসেঞ্চুরিও করেছে। কিন্তু সেঞ্চুরি? এখন পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেছে। এবার সেই অধরা সেঞ্চুরি করতে চান তামিম ইকবাল। যদি নিজে করতে নাও পারেন, তারপরও বিশ্বাস করেন সতীর্থদের কেউ না কেউ সেঞ্চুরি করবেনই, 'বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো সেঞ্চুরি নেই। আশা করি আমি এবার সেটা করতে পারব। যদি নাও পারি, আমার বিশ্বাস দলের কেউ না কেউ সেটা করবে।' টানা পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ। তিনটি বিশ্বকাপ খেলার একমাত্র রেকর্ড মোহাম্মদ আশরাফুলের। আশরাফুলের পাশে নাম লেখাচ্ছেন তামিম। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মুশফিকুর রহিমেরও এটা তৃতীয় বিশ্বকাপ।
তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে নামলেও নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, 'প্রথম বিশ্বকাপে আমি কোনো টার্গেট সেট করিনি। তবে বিশ্বকাপ খেলার ভাবনায় আমি খুবই খুশি ছিলাম। দ্বিতীয় বিশ্বকাপে টার্গেট সেট করলেও সফল হইনি। তাই বলব না আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। এবার অস্ট্রেলিয়ায় নতুন বিশ্বকাপ। ভিন্ন কন্ডিশন। অতীতে দেখা গেছে আমার শুরুটা ভালো হয়নি। এবার আশা করছি সুন্দর হবে।'
বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা সব সময়ই থাকে। এবারের উন্মাদনা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশবাসীকে এবার ফের উৎসাহ, উৎসবে মাতাতে সঙ্গী হতে চান তামিম।