বিশ্বকাপে আমার অভিষেক হয়েছিল ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানে। সেবার আমি ঠিক কি পরিমাণ চাপে ছিলাম তা আর মনে করতে চাই না। জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং ও ম্যালকম মার্শালকে ছাড়া প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর। তিন ক্যারিবীয় তারকার দুইজন অবসর নিয়েছিলেন, আর একজনকে এই টুর্নামেন্ট থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। সিনিয়র বোলারদের সব দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল আমার কাঁধে।
গ্রুপ পর্বের প্রথম তিন ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচেই আমরা হেরে যাই। এটা আমাদের কাম্য ছিল না। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেমিফাইনালে যেতে ব্যর্থ হয়।
আমরা টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে যাই। ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালান ল্যাম্ব আমার শেষ ৯ বল থেকে ২৯ রান নিয়েছিল, যা ইংল্যান্ডকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ওই ম্যাচে ইংল্যান্ড শেষ ১০ ওভার থেকে করেছিল ১০০ রান। তিন বল বাকি থাকতেই তারা দুই উইকেটে জিতে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে করাচিতে আমরা খুব সহজেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিলাম। কিন্তু দিন তিনেক পরেই আমরা হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছিলাম। শেষ বলে জিতেছিল পাকিস্তান। শেষ ব্যাটসম্যান সেলিম জাফরকে আমি রান আউট করতে পারিনি। আবদুর কাদির দুই রান নিয়ে জয় তুলে নেয়। সেটি ছিল বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম জয়। এর আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ বিশ্বকাপে তারা আমাদেরকে হারাতে পারেনি।
শেষ বলে নাটকীয় ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত ম্যাচে আমিই ছিলাম সেরা। তবে শেষ তিন বলে পাকিস্তান ১২ রান নিয়েছিল। আমার করা শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিল কাদির। সেটি মিস তো হয়ই, চার-ই হয়ে যায়। তারপরের বলেই ছক্কা। আর শেষ বলে কাদির যখন দুই রান নিয়ে আমাদেরকে হারিয়ে দিল তখন যেন গোটা বিশ্ব আমার মাথার ওপর ভেঙে পড়েছিল। ক্রিকেটে এতো কষ্ট আর কখনো পাইনি। আমার সেই ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল বিশ্বকাপ জয় করা, তা আর হলো না, এটা ভাবতেই কান্না পেয়েছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ৭৫ ও ৭৯-তে বিশ্বকাপ জিতেছিল তখন আমি খুবই ছোট। জ্যামাইকাতে বসেই ফাইনাল ম্যাচ দুটি দেখেছি। কিন্তু ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলে তখন আমি পেশাদার ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি। খুব চেয়েছিলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতুক। কিন্তু পারেনি। তবে পরবর্তীতে যা করে দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, টানা ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ জিতে।