ঢাকার সড়কদ্বীপগুলোতে নানা রঙের বাতি। বিলবোর্ড আর ফেস্টুনে রাস্তার আশপাশটা দেখতে হয়েছিল বিয়ে বাড়ির মতোই। রাতের ঢাকা ছিল আরও চিত্তাকর্ষক। এই নগরীতে কত আয়োজনই না হয়েছে সেই অতীত কাল থেকে। কিন্তু ওরকম করে আর কখনোই উচ্ছ্বাসে মাতেনি এর বাসিন্দারা। ২০১১ আইসিসি বিশ্বকাপকে ঘিরে যেমন উৎসবে মেতেছিল ঢাকা। কেবল রাজধানীই তো নয়, বিশ্বকাপকে ঘিরে উৎসবমুখর ছিল পুরো দেশ। খুশির সওগাত বয়ে এনেছিল এই আয়োজন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেই চমক পূর্ণ করেছিলেন মুশফিকরা। ৬ ম্যাচের তিনটাতে জিতলেও গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে নিজেদের দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারেনি টাইগাররা।
'টেন্ডুলকারের জন্য বিশ্বকাপ।' ভারত জুড়ে রব উঠেছিল এমনই। যুবরাজ, শেবাগ, গম্ভীর, ধোনিদের হৃদয়েও বাজছিল এমন সুর। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সৈনিক একটা বিশ্বকাপ ছাড়াই অবসরে যাবেন! ওটাই যে ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকারের শেষ বিশ্বকাপ, তা জানা ছিল শত্রু-মিত্র সবার। টেস্ট এবং ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার হাতছানি (তখনো তার শততম সেঞ্চুরি করা হয়নি)। এতসব রেকর্ডের মালিক শেষে বিশ্বকাপ ছাড়াই বিদায় নিবেন ক্রিকেট থেকে! এটা যেন ক্রিকেটের জন্যই একটা লজ্জা হয়ে থাকছে। এমনটা মানতে পারছিলেন না কেউই। বিশেষ করে যুবরাজ সিং। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত হয়ে উঠেছিলেন এই ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার সেই বিশ্বকাপে। প্রতিটা ম্যাচেই ভক্তদের উপহার দিচ্ছিলেন বিশেষ কিছু। বল হাতে ১৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছিলেন ৩৬২ রান। তবে যার জন্য এতকিছু সেই শচীনও কিন্তু কম যাননি। ২টা সেঞ্চুরি এবং ২টা ফিফটিতে রান তুলেছিলেন ৪৮২। শচীন টেন্ডুলকারের শৈল্পিক ব্যাটিং এবং যুবরাজ সিংয়ের দুরন্তপনায় ভারত একে একে পেরিয়ে যাচ্ছিল সবকটি বাধা। বি গ্রুপে ৪ জয় তুলে পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রতিপক্ষ এর আগের তিন বিশ্বকাপে টানা তিন শিরোপাজয়ী প্রবল প্রতাপ অস্ট্রেলিয়া। তবে নিজেদের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ান আধিপত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় 'টিম ইন্ডিয়া'। কোয়ার্টার পেরিয়ে সেমিতেই ভারতীয়দের দেখা হয় চির শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে। আফ্রিদীরা দুরন্ত ক্রিকেট খেলে তখন দেশের মানুষের মন থেকে দূর করতে চাইছিলেন অশান্তির আগুন। তবে বিশ্বকাপটা যেন আক্ষরিক অর্থেই ছিল শচীন টেন্ডুলকারের জন্য। একটা কলঙ্ক মোচনের দায়িত্ব ছিল সবার মধ্যেই। পাকিস্তানকে ২৯ রানে হারিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। ফাইনাল প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসে শ্রীলঙ্কা। মুত্তিয়া মুরালিধরন তখন ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ নিশ্বাস ফেলছেন। একজন ক্রিকেট কিংবদন্তি হিসেবে শচীনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এ লঙ্কান স্পিনার। অবশ্য বিশ্বকাপ জয়ের পর্বটা তিনি সেরে নিয়েছিলেন ১৯৯৬ সালেই। ফাইনালে এই মুরালিকে কোনো সুযোগই দেননি ভারতীয়রা। লঙ্কানদের ছুড়ে দেওয়া ২৭৫ রানের লক্ষ্যে ভারতীয়রা পৌঁছেছিল ১০ বল হাতে রেখেই! শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর সতীর্থরা টেন্ডুলকারকে দিয়েছিলেন 'ল্যাপ অব অনার'।
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১১তে ভারতের শিরোপা জয় ছিল, ক্রিকেটেরই জয়। অস্ট্রেলিয়ান আধিপত্য শেষ করে ক্রিকেট দুনিয়ায় একটা ভারসাম্য নিয়ে এসেছিলেন ধোনিরা। আর শচীন টেন্ডুলকার পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের সেরা পুরস্কার। একজন কিংবদন্তি হিসেবে যে শিরোপা তার পাওনা হয়েছিল অনেক আগেই।
এক নজরে ২০১১ বিশ্বকাপ
চ্যাম্পিয়ন : ভারত
রানার্সআপ : শ্রীলঙ্কা
ম্যান অব দ্য ফাইনাল : মাহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : যুবরাজ সিং (ভারত)।
সর্বোচ্চ রান : তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)-৫০০।
সর্বোচ্চ উইকেট : শহিদ আফ্রিদী (পাকিস্তান)-২১