শুরু হয়ে গেল আইসিসি বিশ্বকাপ-২০১৫। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত এই ক্রিকেট মহাযুদ্ধে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণ করছে ১৪টি দেশ। বাংলাদেশ লড়তে যাচ্ছে এ গ্রুপের অন্য পাঁচটি দেশ সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন শক্তিধর অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডসহ আইসিসি'র সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ড এবং দ্রুত উন্নতির দিকে অগ্রসরমান আফগানিস্তানের বিপক্ষে। উপমহাদেশের স্লো এবং স্পিননির্ভর উইকেটের বাইরে বাংলাদেশ খেলা শুরু করতে যাচ্ছে ফাস্ট এবং বাউন্সি উইকেটে। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের পারফরমেন্স ছিল হতাশজনক। তামিম ইকবালের ফিরে আসা দলের ব্যাটিং শক্তিকে অবশ্যই প্রেরণা জুগিয়েছে। সেই সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সামপ্রতিক সময়ে বেশ ফর্মেই আছেন। বাউন্সি উইকেটে খেলে বাংলাদেশ অভ্যস্ত নয়। তারপরও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ খেলবে তিন পেসার মাশরাফি, রুবেল ও তাসকিনকে নিয়ে। সেক্ষেত্রে এক থেকে আট নম্বার পর্যন্ত আমরা যাদের খেলাব তাদের মধ্যে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব-আল-হাসান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রয়েছেন। হয়তো নাসির কিংবা সাবি্বরকে খেলানো হতে পারে। আমাদের তিন পেসারের মধ্যে কোনো অলরাউন্ডার নেই, যেমন আছে অস্ট্রেলিয়ার জনসন কিংবা নিউজিল্যান্ডের কোরে এন্ডারসন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলে পেস অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান কিংবা সীমার ফরহাদ রেজার অভাবটা চোখে পড়বেই। বাংলাদেশের ক্রিকেট কৌশল এবং ঐতিহ্য অনুযায়ী আমরা স্পিননির্ভর দল। কিন্তু অজি এবং কিউই ফাস্ট ও বাউন্সি উইকেটে স্পিন জাদু কতটুকু কাজ করবে সেটা মোটামুটি ধারণা করা যায়। বাংলাদেশ তিন পেসার নিয়ে খেলবে-এটার পক্ষপাতি আমি নই। সেই সঙ্গে তিনজন বাঁ হাতি ন্যাটা স্পিনার খেলানোর পক্ষপাতিও আমি নই। ইতিমধ্যেই আমাদের ব্যাটিং শক্তিতে ধারাবাহিকতার অভাব চোখে পড়েছে। ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার পর্যন্ত শক্তিশালী পার্টনারশিপ গড়ে উঠছে না। বাউন্সি উইকেটে ফুটওয়ার্ক দুর্বলতা এনামুল হক বিজয়ের পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে শক্তিশালী ওপেনিং জুটি দৃশ্যমান হচ্ছে না। তিন নম্বার পজিশনটা সে ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ইনফর্ম এবং সতর্ক ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কন্ডিশনে অভিজ্ঞ মুশফিককে খেলানো যেতে পারে। আমাদের ব্যাটিং অর্ডার যেন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকতেই হবে। সাকিবের ওপর অতিরিক্ত ভরসা না রেখে টিম ওয়ার্কের ওপর গুরুত্ব দিতেই হবে। বাংলাদেশ যাদের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছে তারা পেস বোলিংয়ে তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য যদি হয় দ্বিতীয় রাউন্ড, সেক্ষেত্রে স্কটল্যান্ড এবং আফগানিস্তানকেই টার্গেট করতে হবে। কিন্তু চরম অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে টার্গেট করা মোটামুটি বোকামির পর্যায়ে পড়ে। তাছাড়া স্কটল্যান্ড এবং আফগানিস্তান দ্বিতীয় পর্বে ওঠার জন্য নিশ্চয়ই বাংলাদেশকেও টার্গেটে রেখেছে। অথাৎ দ্বিতীয় পর্বে উঠতে হলে বাংলাদেশকে বড় কোনো ধরনের আপসেট ঘটাতেই হবে। কারণ শক্তি এবং কন্ডিশনের ব্যাপারটা মাথায় রাখলে স্কটল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে সমীহ করেই খেলতে হবে। দলের সবচেয়ে সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ টাইগার অধিনায়ক মাশরাফিকে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করতে হবে। গতানুগতিক অধিনায়কত্বের বাইরে গিয়ে তাকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে দল পরিচালনা করতে হবে। শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি অপ্রত্যাশিত জয়ই বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে পারে দ্বিতীয়পর্বে। শুভকামনা থাকলো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতি। শাবাশ বাংলাদেশ- এগিয়ে যাও টাইগার্স।