বাংলাদেশে তখন শেষ রাত। মেলবোর্নে সকাল ৮টা। সকালের কুয়াশা ভেদ করে উঠে আসা সূর্যকিরণে আলোকিত অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল নগরী। এমন মধুমাখা সকালে রওনা দিলাম রাজধানী ক্যানবেরার উদ্দেশে। যার আরেক নাম 'সিটি অব টেরিটরি'। ভার্জিন এয়ারওয়েজের বিমানটি যখন আকাশে উড়ল, তখনই পাশে বসা সুদর্শনা 'এলিজাবেথ' বলে ওঠেন, 'ইন্ডিয়ান?' 'না' বলতেই সুন্দর ফর্সা মুখে কে যেন কালিমা লেপে দিল! 'বাংলাদেশ' বলতেই সুন্দর মিষ্টি হাসি দিল। এমন সুন্দর হাসি, যা ভুলিয়ে দিল পুরো দিনের ক্লান্তি।
এরপর অনেক গল্প। বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না। তবে ক্রিকেট সম্পর্কে বেশ খোঁজ-খবর রাখেন। ক্রিকেটের কথা উঠতেই বললেন, তোমাদের সাকিব খুব ভালো ক্রিকেটার। তার মুখে সাকিবের নাম শুনে বিস্মিত হলাম। পর মুহূর্তেই ভাবলাম, সাকিবকে তো চেনারই কথা অস্ট্রেলিয়ানদের। কিছুদিন আগে সাকিব বিগ ব্যাশে খেলেছেন মেলবোর্ন রেনেগেডসের পক্ষে। রেনেগেডসের পক্ষে খেলেছেন বলেই সাকিব জনপ্রিয়। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জন্যই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবেন এলিজাবেথ, 'আমি রেনেগেডসের সমর্থক। রেনেগেডসে খেলেছেন সাকিব, তাই তাকে সাপোর্ট করব। এ জন্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমি বাংলাদেশের জয় চাই।' এলিজাবেথের মুখে সাকিবের বন্দনা শুনে বিস্ময় জাগলো আরও। দেখলাম অনেক খবর রাখেন সাকিব সম্পর্কে। বাংলাদেশে সাকিবের অনেক সমালোচক। অথচ মেলবোর্নবাসীর কাছে ভীষণ প্রিয় বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার- 'মেলবোর্নের শিশু-কিশোরদের কাছে ভীষণ প্রিয় সাকিব। রেনেগেডসে যখন খেলেছেন সাকিব, তখন প্রায়ই তিনি ছোট ছোট ছেলেদের ক্রিকেট টিপস দিতেন। এ জন্যই মেলবোর্নের শিশু-কিশোরের কাছে জনপ্রিয় সাকিব।
মেলবোর্ন সুন্দরীর কাছে সাকিব বন্দনা শোনায় বেশ ভালো লাগল, মনটা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। পূর্ণ পেশাদার মানসিকতার অস্ট্রেলিয়ানদের মন জয় করে নেওয়া সাকিব যে দলের প্রাণভোমরা- কাল শিল্পীর ক্যানভাসে অাঁকা কিটসপ্যাক ওভালেও বলেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও সাকিবের জনপ্রিয়তা অনেক। বোঝা গেল, অনুশীলন দেখতে আসা গুটি কয়েক বাংলাদেশির চিৎকার শুনে, 'সাকিব, সাকিব, আই লাভ ইউ!' ভক্তদের এমন
ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারও। হাত নেড়েছেন, অটোগ্রাফ দিয়ে মনোবাসনা পূরণ করেছেন।
ক্রিকেট মহাযজ্ঞের এবারের আসরে যেমন নজর থাকবে বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথদের ওপর। তেমনি থাকবে সাকিবের প্রতিও। অসি ললনা এলিজাবেথের সাকিব বন্দনা
বাংলাদেশের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে বলতেই হাসলেন। টিম বাসে ওঠার আগে ছোট্ট করে বললেন, 'ও আমাদের গর্ব'।