পল স্টার্লিং, এডি জয়েস এবং নেইল ও'ব্রেইনের হাত ধরে কাল আবার ফিরল আইরিশদের বীরত্বগাঁথা। নেলসনের স্যাক্সটন পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দিল আয়ারল্যান্ড। আইরিশরা যখন ক্যারিবীয়দের হারিয়ে সর্বোচ্চ সৌন্দর্য্যের নেলসনে আনন্দ-সাগরে অবগাহন করছিল, তখন হাজার মাইল দূরে ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের মুখোমুখিতে আফগানিস্তানকে পাত্তাই দিতে চাইলেন না মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। হাসিমুখে অথচ স্পষ্ট করে বলে দেন, আফগানিস্তান নিয়ে ভাবছেন না। ভাবছেন নিজেদের নিয়ে।
ভিন্ন কন্ডিশন। বাড়তি সুবিধা পাবেন পেসাররা। এমন ভাবনায় যখন ক্রিকেট মশগুল, তখন দেখা যাচ্ছে রান বন্যায় ভাসছে বিশ্বকাপ। সেঞ্চুরি হচ্ছে হররোজ। অথচ ক্রিকেট মহাযজ্ঞে নামার আগে রান খরায় ভুগছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। রান পেতে কষ্ট করতে হচ্ছে এনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসানদের। ব্যাটসম্যানদের এমন যখন চেহারা, তখন প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম ধারাবাহিক ক্রিকেটার 'মি. কুল' মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ- 'আফগানিস্তান ম্যাচ নিয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। আমরাও ভাবছি। তবে আমাদের ভাবনায় শুধু বিশ্বকাপ। এই ম্যাচটির জন্য আমরা দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করেছি। এখন সেটার বাস্তবায়ন করতে চাই। সত্যি বলতে আমরা আফগানিস্তানকে নিয়ে ভাবছি না। আমাদের ভাবনায় শুধুই আমরা।'
আফগানিস্তানকে পাত্তা দিতে না চাইলেও পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। দুই দলের যে একবার লড়াই হয়েছে, তাতে পাল্লা হেলে আছে আফগানিস্তানের দিকে। গত বছর ঘরের মাটিতে এশিয়া কাপে আফগানদের কাছে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩২ রানে। তাই মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের শক্ত প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের সূচনা ম্যাচে এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে নামা বাড়তি চাপের নামান্তর। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ চাপের কথা স্বীকার করেননি- 'বিশ্বকাপের সব ম্যাচেই চাপে থাকতে হয়। তার ওপর বিশ্বকাপের সূচনা ম্যাচ। টুর্নামেন্টে ভালো করতে হলে অবশ্যই জিততে হবে। সূচনা ম্যাচে যে কোনো দলের বিপক্ষেই চাপে থাকার কথা। আফগানিস্তান প্রতিপক্ষ বলে চাপ থাকছে। তবে সেটা আফগানিস্তান বলে নয়, সূচনা ম্যাচ বলে।'
অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ২৪ জানুয়ারি ব্রিসবেন আসে বাংলাদেশ। দুই সপ্তাহের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করে উড়ে যায় সিডনি। ব্রিসবেনে দুটি এবং সিডনিতে দুটিসহ মোট চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন রিয়াদরা। কিন্তু জয়ের দেখা পায়নি একটিতেও। যার একটি আবার আইসিসি সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ড। কাল সেই আইরিশরা অঘটন ঘটাল ক্যারিবীয়দের হারিয়ে। তাই আফগানিস্তান ম্যাচ নিয়ে অনেকেই ভাবছেন অন্যকিছু। সবাই যখন আরও একটি অঘটনের অপেক্ষায়, তখন ১১০ ম্যাচে ২১২৩ রান করা রিয়াদ হেসেই উড়িয়ে দিলেন বিষয়টিকে, 'অঘটন হবে কিনা আমি জানিনা। আমরা শুধু নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না।' অঘটনের সম্ভাবনা হেসে উড়িয়ে দিলেও দলের উপরের সারির ব্যাটসম্যানরা যে রান পাচ্ছেন না, সেটা অস্বীকার করেননি মাহমুদুল্লাহ, 'উপরের সারির ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন না সত্যি। চারটি প্রস্তুতি ম্যাচে দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেছেন উইকেটের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে। তারা চেষ্টা করছেন রানে ফিরতে। আশা করি আফগানিস্তান ম্যাচে কোনো সমস্যা হবে না ব্যাটসম্যানদের।'
দলের মূল শক্তি স্পিন। তাই তিন বাঁ হাতি স্পিনার নিয়ে এসেছে টিম মানেজমেন্ট। অথচ প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে এদের কোনো ভূমিকাই ছিল না। অথচ দলে স্পিন আধিক্য! কাল সাংবাদিকদের বলেই দিলেন, স্পিনার নয় পেসাররা ভালো সুবিধা পাবেন এখানে, 'আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে স্পিনারদের চেয়ে পেসাররা ভালো করবেন। ভালো করতে নিখুঁত লাইন লেন্থে বোলিং করতে হবে স্পিনারদের। দলের স্পিনাররাও জানেন, তাদের কি করতে হবে।' কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দুই সপ্তাহ আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রাখে টাইগাররা। অথচ, সময়টিকে পর্যাপ্ত বলতে রাজি নন মাহমুদুল্লাহ, 'দুই সপ্তাহের কন্ডিশনিং ক্যাম্প খুব বেশি কাজে লাগবে, তা নয়। এই সময়ের মধ্যে টেকনিকের উন্নতি করা সম্ভব নয়। আমাদের ভালো করতে হলে, নিজ থেকেই সেটা করতে হবে।'