আয়ারল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি দেখেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ক্যানবেরা থেকে হাজার মাইল দূরে নেলসনে দুই দল যখন লড়াই করছিল, তখন মানুকা ওভাল স্টেডিয়াম লাগোয়া অনুশীলন মাঠে ব্যাটিং-বোলিং করছিলেন তামিম-মুশফিকরা। তাই জানতে পারেননি আয়ারল্যান্ডের বীরত্ব গাঁথা। অবিশ্বাস্য এক জয়ে ক্রিকেট মহাযজ্ঞ মিশন শুরু হয়েছে আইসিসির সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ডের। এমন এক জয় চাপে ফেলে দিয়েছে ফেবারিট অপরাপর দেশগুলোকে। তবে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আইরিশদের এই জয়কে চাপ নয়, অনুপ্রেরণা হিসেবেই নিচ্ছেন। এই অনুপ্রেরণা নিয়ে খাইবার পাশের দেশ আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শুভ সূচনা করতে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা মাশরাফিদের।
১৯৯৯ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। বিপরীতে আফগানিস্তানের অভিষেক। তারপরও প্রবল প্রতিপক্ষ! টেস্ট খেলুুড়ে দেশের প্রতিপক্ষ সহযোগী দেশ! অথচ ক্রিকেটপ্রেমীদের ললাটে চিন্তার কুঞ্চিত রেখা! অদ্ভুত। গত বছর এশিয়া কাপে প্রথম মুখোমুখিতেই বাজিমাত করেছিল আফগানরা। এই পরিসংখ্যানই ফেবারিটের উত্তপ্ত চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানকে। মাঠের বাইরে কে কি ভাবছেন, এ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন টাইগার অধিনায়ক- 'যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচেই চাপ থাকে। আফগানিস্তান ম্যাচে আমাদের ওপর চাপ থাকবে বলে মনে করি না। তবে ম্যাচটিকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। ওদেরকে আমরা যোগ্য প্রতিপক্ষ ভেবেই মাঠে নামব। দলের সবাই খুবই সিরিয়াস। সবাই ভালো করতে মুখিয়ে আছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা।' এশিয়া কাপে দুই দলের প্রথম লড়াইয়ে বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়েছিল আফগানিস্তান। ওই ম্যাচের প্রতিশোধ নেয় টি-২০ বিশ্বকাপে। তবে সেটা ছিল ২০ ওভারের ম্যাচ। তাই আজকের ম্যাচ নিয়ে বাড়তি একটা চাপ থাকছেই। যদিও মুখে স্বীকার করছেন না টাইগার অধিনায়ক। তারপরও অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট বলে ভাবতেই হচ্ছে ক্রিকেটামোদীদের!
নিউজিল্যান্ডের নেলসনে পল স্টার্লিং, নেইল ও'ব্রেইনের ব্যাটে এক সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ক্যারিবীয়দের খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দেয় আইরিশরা। আইরিশরা তিন শতাধিক রান তাড়া করে অনায়াশেই জিতেছে ম্যাচ। ২০১১ সালেও কেভিন ও'ব্রেইনের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত এক জয় পেয়েছিল আইরিশরা। অথচ আফগানিস্তানের মতোই আইসিসি সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ড। টেস্ট খেলুড়ে দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আইরিশদের অবিশ্বাস্য জয়ে চাপে পড়ারই কথা টাইগারদের। বরং জয়টাকে চাপ মনে করে অনুপ্রেরণা মনে করছেন মাশরাফি, 'আয়ারল্যান্ডের জয়কে আমরা চাপ হিসেবে দেখছি না। অনুপ্রেরণা হিসেবেই নিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা আমাদের জন্য খেলব। জয়ের জন্য খেলব।'
আজ ম্যাচ বলে কাল অনুশীলন ছিল না টাইগারদের। তারপরও ব্যাটিং ও বোলিং করেছেন ক্রিকেটাররা। শুধু বোলিং করেননি চার পেসার মাশরাফি, আল-আমিন, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। দীর্ঘ সময় ব্যাটিং ও বোলিং করেন দলের সবচেয়ে বড় আস্থার প্রতীক সাকিব আল হাসান। ব্যাটিং করেছেন তামিম, মুশফিকরাও। ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও সিরিয়াস ছিলেন সবাই। অনুশীলনেই বোঝা গেছে সবার জয়ের ক্ষুধা। কাল অফিশিয়াল সংবাদ সম্মেলনে জয়ের জন্য পুরো দল মুখিয়ে আছে বলেন টাইগার অধিনায়ক, 'দলের সবাই খুবই ভালো আছেন। সবাই জানেন কার কি কাজ। শুধু একাদশ নয়, একাদশের বাইরে যারা থাকবেন, তারা সবাই সিরিয়াস। সবচেয়ে বড় কথা আমরা জয়ের জন্য খেলব। জয় পেতে পুরো দলই মুখিয়ে আছে।' জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর গত আড়াই মাস কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন ক্রিকেটাররা। বাঁ হাঁটুর মিনিসকাসের ইনজুরির জন্য মাঠের বাইরে ছিলেন তামিম। অস্ট্রেলিয়া আসার আগে অস্ত্রোপচার করেন বাঁ হাতি ড্যাসিং ওপেনার। সেই ধাক্কা সামলে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৮১ রান করেন। ইনজুরি কাটিয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালী তামিম বলেন টাইগার অধিনায়ক, 'তামিম মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তামিম। আত্মবিশ্বাসীও। তামিম ছাড়াও দলের সব ক্রিকেটারই ভালো আছেন।'
শুরুতে সব দলের ধারণা ছিল যে, এবারের বিশ্বকাপ হবে বোলারদের। কিন্তু আসর শুরুর পর দেখা গেল রান বন্যায় ভাসছে। যে দলের ব্যাটসম্যানরা ফর্মে রয়েছেন, তারাই জয় পাচ্ছে অবলীলায়। তাই টস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টাইগার অধিনায়ক অবশ্য সে পথ মাড়াননি, 'প্রত্যেকের মতো আমাদেরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে। আমার মনে হয় এখানকার উইকেটে টস খুব বড় কোনো ভূমিকা রাখবে না। এখানকার উইকেটগুলোর আচরণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই থাকবে। তাই টস নিয়ে না ভেবে আমরা ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।'