ছেলে সাহেলের বয়স মাত্র পাঁচ মাস। তার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো নয়। টাইফয়েডে আক্রান্ত সাহেল ভর্তি ঢাকার একটি হাসপাতালে। ছোট্ট সাহেলকে সুস্থ করতে প্রতিদিন ইনজেকশন দিতে হচ্ছে তিনটি করে। সন্তানের এমন অবস্থায় বাবা মাশরাফি পাশে নেই। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে হাজার মাইল দূরে অস্ট্রেলিয়ায়। প্রিয় সন্তানের পাশে থাকতে একবার চলেও যেতে চেয়েছিলেন দেশে। কিন্তু পারেননি। পারেননি দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার টানে। রয়ে যান দলের সঙ্গে। শুধু থাকছেন না, দুর্দান্ত দল পরিচালনা এবং বোলিং করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। তার অসাধারণ নেতৃত্বে ক্রিকেট মহাযজ্ঞে নিজেদের সূচনা ম্যাচে উড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানকে। আফগানদের গুঁড়িয়ে মাশরাফি বাহিনী এখন নির্ভার। কিন্তু টাইগার অধিনায়কের মন ভালো নেই। একদিকে দেশের প্রতি কর্তব্য, অন্যদিকে প্রিয় সন্তানের আরোগ্য লাভ। এমন পরিস্থিতিতে দোটানায় থাকা মাশরাফির মন কষ্টের আগুনে পুড়ছে। কাল ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে টাইগার অধিনায়কের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মনের ভিতরকার অবস্থা! এমন অবস্থায় থেকেও মাশরাফির সব মনোযোগ এখন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের দিকে। যদিও ঘূর্ণিঝড় মার্সিয়ার আঘাতে আজকের ম্যাচের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে ম্যাচের ভবিষ্যৎ। ম্যাচ না হলেও দুই দলের মাঝে ভাগাভাগি হবে পয়েন্ট। তাতে লাভ হবে বাংলাদেশের। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার রাস্তায় এগিয়ে যাবে এক পা। এমন সুযোগের হাতছানি সত্ত্বেও টাইগার অধিনায়ক যে কোনো মূল্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে চাইছেন। খেলার জন্য প্রার্থনা করছেন স্রষ্টার কাছে।
কুইন্সল্যান্ডের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ ও কাল বৃষ্টির সম্ভাবনা ১০০ ভাগ। উন্নত দেশগুলোর আগাম সতর্কবাণী কখনো ভুল হয় না বলেই ম্যাচের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে সবাই। কাল মাশরাফি যখন মুখোমুখি হন মিডিয়ার, তখন প্রায় সবগুলো প্রশ্নই ছিল বৃষ্টি, কার্টেল ওভার ও পয়েন্ট ভাগাভাগি নিয়ে। সব প্রশ্নের উত্তরে টাইগার অধিনায়ক শুধু জানিয়েছেন, ব্রিসবেনের উলন গাব্বার বাউন্স উইকেটে অস্ট্রেলিয়ান গতির বিপক্ষে খেলার জন্য মুখিয়ে আছে পুরো দল। ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, তারা মাঠে নামতে চান এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
বৃষ্টির জন্য টাইগার ক্রিকেটাররা নামতে পারেননি গাব্বার সবুজ ঘাসে। ব্যাটিং ও বোলিং করেছেন বেজমেন্টে তৈরি ইনডোর স্টেডিয়ামে। ব্যাটিং ও বোলিং করার পর টাইগাররা ফিরে যান হোটেলে। ফেরার আগে ম্যাচ খেলার কথা মাশরাফি বলেন আকুতির সুরে, 'শেষ পর্যন্ত যদি ম্যাচটি না হয়, তাহলে খুবই হতাশ হব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে আছি। যদি খেলা না হয়, তাহলে হয় তো আমরা এক পয়েন্ট পাব। কিন্তু আমরা এভাবে পয়েন্ট চাইছি না। আমরা খেলতে চাইছি।' রাতে কিংবা পরের দিন যদি বৃষ্টি নাও হয়, তখন মাঠে খেলা গড়াবে। কিন্তু সেটা কত ওভারের হবে, বলতে পারছেন না কেউই। শেষ পর্যন্ত যদি ২০ ওভারের ম্যাচ হয় সেক্ষেত্রে ফেবারিট কে? এ প্রশ্নে মাশরাফি বলেন, '২০ ওভারের ম্যাচ হলেও অস্ট্রেলিয়াই ফেবারিট। তবুও আমরা খেলতে চাচ্ছি।'
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯ ওয়ানডে খেলে জিতেছে সাকুল্যে একটি। তাও ১০ বছর আগে কার্ডিফে আশরাফুলের অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে। কাল ওই ম্যাচটির কথা স্মরণ করিয়ে আপসেটের কথা জানতে চাওয়ায় টাইগার অধিনায়ক বলেন, 'ওটা আমাদের মধুর স্মৃতি। কিন্তু সেটা অনেক আগের বিষয়। এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আমার বিশ্বাস নিজেদের দিনে যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখি।' অস্ট্রেলিয়ায় ২০০৩ ও ২০০৮ সালে দুটি সিরিজ খেলেছে টাইগাররা এবং বিধ্বস্ত হয় পুরোপুরি। কিন্তু খেলেনি ব্রিসবেন কিংবা মেলবোর্নে। আজ প্রথম খেলবে ব্রিসবেনে। খেলবে বলে এক্সাইটেড সবাই, 'ব্রিসবেনে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে শুধু সাকিবের। আমরা কেউই খেলিনি। ব্রিসবেনে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি আমরা সবাই। চাইছি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে এবং এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই বিশ্বকাপের অন্য ম্যাচগুলোতে।'