ব্রিসবেন থেকে মেলবোর্ন আসার পথে বিমানে দেখা ভারতীয় দর্শকদের সঙ্গে। প্রতিপক্ষ প্রবল শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকা। কিছুটা ভয়ে ছিল ভারতীয় ভক্তরা! পাশে বসা ভদ্রলোক জানালেন, খুব একটা চিন্তা করার কিছু নেই। এ ম্যাচে হারলেও ভারতের নকআউট পর্ব তো নিশ্চিত। তবে ম্যাচটা জিততে পারলে ভালোই হবে। ম্যাচের শেষে সেই ভদ্রলোক নিশ্চয়ই উৎসবে মেতেছেন। মার্সিয়ার আঘাতে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও গতকাল মেলবোর্নে হয়ে গেল বিশ্বকাপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচগুলোর একটা। এ ম্যাচে বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাধারণত 'চোকার্স' নামেই জানে ভক্তরা। চাপের মধ্যে তারা কখনোই তেমন একটা ভালো খেলে না। এমনকি ১/২ রানে হারের ঘটনাও তাদের ইতিহাসে কম নয়। তবে বিশ্বকাপের মহামঞ্চে প্রোটিয়াসরা বড় ধরনের পরাজয়ের মুখোমুখি কখনো হয়নি। রানের দিক থেকে এর আগে শত রানের পরাজয় কখনো দেখতে হয়নি তাদের। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২০০৭ বিশ্বকাপে ৮৩ রানে হেরেছিলেন গ্রায়েম স্মিথরা। ওইটাই ছিল তাদের করুণতম বিশ্বকাপ পরাজয়। গতকাল ভারত দক্ষিণ আফ্রিকার এ লজ্জাজনক ইতিহাসে যোগ করল বাড়তি মাত্রা। ১৩০ রানে উড়িয়ে দিল প্রোটিয়াসদের।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হাজার হাজার ভারতীয় দর্শক। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রিয় দলের খেলা দেখতে ছুটে এসেছেন তারা। ভক্তদের হতাশ করেননি ধাওয়ান, কোহলি এবং রাহানেরা। রোহিত শর্মাকে হারিয়ে শুরুতেই যে বিপদে পড়েছিল ভারত তা থেকে দ্রুতই দলকে মুক্তি দিয়েছিলেন কোহলি-ধাওয়ান। কোহলি ৪৬ রানে সাজঘরে ফিরে গেলেও ধাওয়ান ১৩৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কারজয়ী এ ইনিংসে ১৬ চার মেরেছেন এ ভারতীয় হার্ড হিটার। ছক্কা হাঁকিয়েছেন ২টি। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতের রানের গতি মাঝে মধ্যেই থেমে গেছে। শেষদিকে তারা তেমন একটা রান তুলতে পারেনি। রাহানের ৭৯ রানের ইনিংসটাও ভারতকে ৩০৭ রানের বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছে। ৩০৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে হাশিম আমলা, ডি কক, ডু প্লেসিস, ভিলিয়ার্স, মিলার আর ডুমিনিদের নিয়ে সাজানো বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। প্লেসিসের ৫৫ এবং ভিলিয়ার্সের ৩০ রান ছাড়া বাকি কেউই উল্লেখযোগ্য কোনো রান করতে পারেননি। অশ্বিন (৩ উইকেট), ইশান্ত শর্মা (২ উইকেট) এবং সামি (২ উইকেট) প্রোটিয়াসদের ব্যাটিং লাইনে ধস নামান। ৪০.২ ওভারে ১৭৭ রানেই থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। এ জয় ভারতকে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে অনেকদূর এগিয়ে দিল।
ম্যাচ জয়ের পর ভারতীয় অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি বললেন, 'আমার কাছে ফলাফলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমাদের ইতিবাচক ক্রিকেট। আমরা যেভাবে খেলেছি তা সত্যিই অসাধারণ। বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে এমন দারুণ পারফরম্যান্স আমাদের যোগ্যতাকেই প্রমাণ করে।' ধোনিরা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপের ফেবারিট হিসেবে ভারত এবারও দারুণ কিছু করে দেখাতে পারে। অন্যদিকে পরাজিত দলপতি এবি ডি ভিলিয়ার্স বললেন, 'রান আউটই আমাদেরকে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের বোলাররা দারুণভাবেই লড়াই করেছিল তবে ব্যাটিংয়ে এসেই আমরা ব্যর্থ হয়েছি।' তবে সামনের ম্যাচগুলো জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে চায়।