লং অনে দাঁড়ানো নাসির হোসেনকে পানি খাওয়াচ্ছিলেন আরাফাত সানি। এমনটি হওয়ার কথা ছিল না কাল। উল্টো নাসিরের পানি খাওয়ানোর কথা সতীর্থদের! কিন্তু সেটা হয়নি। শেষ বেলার নাটকে আরাফাতকে ক্লিন বোল্ড করে নাসির জায়গা করে নেন একাদশে। অপরূপ সৌন্দর্যের নেলসন স্যাঙ্টন ওভালে একজন বাড়তি স্পিনারের খেলার যে সম্ভাবনা ছিল, সেটা ডুবে গেল তাসমান সাগরে! আরাফাত সুযোগ না পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে টিম ম্যানেজমেন্টের মেধা নিয়ে।
পেসাররা সুবিধা পাবেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উইকেটে; বিশ্বকাপ শুরুর আগেই জেনেছিলেন বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু স্কোয়াড নির্বাচনে তিন বাঁ হাতি স্পিনার নিয়ে জন্ম দিয়েছিলেন বিস্ময়ের। সাকিব আল হাসান ছাড়া তাইজুল ইসলাম ও আরাফাত সানির ওয়ানডে অভিজ্ঞতা মাত্র ১২ ম্যাচ। এমন বোলারদের নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে আসা হাস্যকরই! তিন বাঁ হাতি স্পিনারের আধিক্য থাকলেও গত চার ম্যাচে খেলেছেন একজন, সাকিব। বাকি দুজন আরাফাত ও তাইজুল পানি টানছেন এবং নেটে বোলিং করছেন। দুই বাঁ হাতি স্পিনার কি শুধুই নেট বোলার! অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড উইকেটে যখন ধুমিয়ে রান করছেন ব্যাটসম্যানরা, সেঞ্চুরির নহর বইয়ে দিচ্ছেন। তখন ক্রিকেট মহাযজ্ঞে বাংলাদেশ এসেছে দুই 'শো কেস বয়' নিয়ে। যাদের কাজ শুধুই নেটে বোলিং করা! হঠাৎ করে একাদশে এমন পরিবর্তনের ব্যাখায় টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, 'আমরাও চেয়েছিলাম একজন বাড়তি স্পেশালিষ্ট স্পিনার খেলাতে। ম্যাচের আগের দিন উইকেটে ঘাস দেখে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। তাই তিনজন স্পেশালিষ্ট বোলার নিয়ে খেলেছি। কাজটি কঠিন ছিল। তারপরও আমরা ভালো করেছি। তবে আমাদের বোলিং আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল।' স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে টাইগার অধিনায়ক বলেছিলেন, স্কটিশদের বিপক্ষের জয়ের আত্দবিশ্বাস নিয়ে ইংল্যান্ডের মোকাবিলা করতে চান। কাল আত্দবিশ্বাসী জয়ের পর টার্গেট করেছেন ইংল্যান্ডকে, 'ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল। তাদের হারানোর মতো ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এ জন্য আমাদের সবাইকে নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে।'
আরাফাত খেলবেন, ম্যাচের আগ পর্যন্ত জানতেন। বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে গত পাঁচদিন ধরে ঘষে মেজে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। পরশু অনুশীলন শেষে খেলছেন কি না জানতে চাইলে, শুধু হাসি দেন। প্রকারান্তরে জানিয়েও দেন। খেলার স্বপ্ন নিয়ে যখন ঘুমাতে যাবেন, তখনই দুঃস্বপ্ন এসে তাড়া করে। সকালে দ্বাদশ ম্যান হিসেবে মাঠে নামতে হয়েছে। পানি খাওয়াতে হয়েছে নাসিরদের। গুঞ্জন, আরাফাতের জায়গায় নাসিরকে খেলাতে চাপ দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার চাপেই কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহসহ টিম ম্যানেজমেন্ট আরাফাতের নাম কেটে নাসিরের নাম লিখেন। খেললেন না কেন? প্রশ্নোত্তরে এবার কোনো উত্তর নেই আরাফাতের। আগের দিনের মতো হাসি। তাতে শুধু কষ্ট! এই পার্থক্য।
আরাফাত কিংবা তাইজুলকে না খেলানোয় অবাক হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আতহার আলি খান, 'আমার একাদশে একজন বাড়তি স্পিনার থাকেন। আমি নির্বাচক হলে তাইজুলকে খেলাতাম। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট কেন এমন করলেন, একমাত্র তারাই বলতে পারবেন।' টিম ম্যানেজমেন্টের অবশ্য ব্যাখ্যা রয়েছে, জয় নিশ্চিত করতে নেওয়া হয় আট ব্যাটসম্যান। অদ্ভুত যুক্তি! এমন যুক্তি আসলে বাংলাদেশেই সম্ভব! একজন বাড়তি স্পিনার না খেলালেও কাল স্কটিশদের ব্যাটিং আক্রমণ সামলাতে অধিনায়ক মাশরাফি ব্যবহার করেছেন সাত বোলার। এর মধ্যে তিন পেসার মাশরাফি, তাসকিন ও রুবেল একত্রে বোলিং করেন ২৩ ওভার। বাকি ২৭ ওভার করেন চার স্পিনার। অথচ তার তিনজনই অকেশনাল স্পিনার। নাসির ৫, সাবি্বর রহমান রুম্মন ৭ ও মাহমুদুল্লাহ করেন ৫ ওভার। নতুন বলে মাশরাফির সঙ্গে ওপেন করেন সাকিব। স্পিন দিয়ে যখন ওপেন করানো হল এবং ব্যবহার করা হলো চার স্পিনার। তখন একজন স্পেশালিষ্ট স্পিনার না খেলানোর কোনো যৌক্তিকতা আছে কি?