সমুদ্রে তুমুল ঝড়। হালে দক্ষ নাবিক। সমুদ্রের বুক চিরে ঝড়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তীরের দিকে ছুটে চলেছে জাহাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্য নাবিকের। তীরের খুব কাছে এসে যাত্রীসহ ডুবে গেল জাহাজ! প্রোটিয়া অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্সের অবস্থা ছিল সেই নাবিকের মতোই। পাকিস্তানি বোলারদের ঝড়ের মুখে যখন বিদায়ের মিছিলে শামিল হচ্ছিলেন আমলা-মিলাররা তখন বুক চিতিয়ে একাই লড়েছিলেন ভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটভক্তরা বিজয়ের ঘ্রাণ নিতে শুরু করেছিলেন। তখনই ঘটে বিপত্তি। সোহেলের করা ৩৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সরফরাজকে ক্যাচ দেন ভিলিয়ার্স। উইকেট পতনের পর মিসবাহদের বুনো উল্লাস দেখে হয়তো 'আহ্' শব্দটি বেরিয়ে এসেছিল ভিলিয়ার্সের বুকচিরে। ২৩২ রানের সহজ টার্গেটে পৌঁছা সম্ভব হলো না এমন এক দলের যারা আগের দুই ম্যাচে পর পর ৪০০ ঊধর্্ব ইনিংস খেলেছিল! ভিলিয়ার্সের পতনেই ম্যাচটা জিতে নিয়েছিল পাকিস্তান। আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো ৩৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ইমরান তাহিরের বিদায়ে। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ২৯ রানের এক অবিশ্বাস্য ম্যাচ জিতল পাকিস্তান। পাকিস্তানের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ ছিল অনেকটা জীবন-মরণের প্রশ্ন। হারলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যেত বিদায়! অবশ্য এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি ১৯৯২'র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ই কেবল তাদের এনে দিতে পারে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার ভয় বুকে নিয়েই অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে প্রবল শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান প্রমাণ করল, প্রোটিয়া বোলিং লাইনের বিপক্ষে দাঁড়ানোর সামর্থ্য তাদের নেই। তবে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই নিজেকে দুরন্ত প্রমাণ করলেন সরফরাজ। কেবল ব্যাট হাতেই নয় উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ৬টা ক্যাচ লুফে হলেন ম্যাচ সেরা। এক ইনিংসে পাকিস্তানি কোনো উইকেটরক্ষকের এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক ক্যাচ (আগের রেকর্ড মঈন খানের ৫টি)। অবশ্য ৬টি করে ক্যাচ নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে গিলক্রিস্ট, স্টুয়ার্ট, বাউচার, ধোনি, প্রায়র এবং বাটলারেরও। ঘুণে ধরা পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনে গতকালও দৃঢ়তা দেখালেন ৪০ বছরের বুড়ো অধিনায়ক মিসবাহ (৫৬)। এটা তার ৪২ নম্বর অর্ধশতক! বৃষ্টি বাধায় দুবার ম্যাচে থামতে হয়েছে পাকিস্তানকে (৩৭ ওভারের পর এবং ৪১তম ওভারে)। পাকিস্তান ৪৬.৪ ওভারে অলআউট হয়ে ২২২ রান করলে ডি/এল পদ্ধতিতে প্রোটিয়াদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩২। এই মামুলি লক্ষ্যে পৌঁছতে গিয়ে ২০২ রানেই থেমে যায় প্রোটিয়াদের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন। টার্গেট তাড়া করতে কতটা দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকা তারই প্রমাণ দিলেন ভিলিয়ার্সরা! বৃষ্টি আরও একবার পাকিস্তানকে বিপদ থেকে উদ্ধার করল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৪৬.৪ ওভারে ২২২ (মিসবাহ ৫৬, সরফরাজ ৪৯, স্টেইন ৩/৩০, মরকেল ২/২৫।
দ. আফ্রিকা : ৩৩.৩ ওভারে ২০২ (ভিলিয়ার্স ৭৭, আমলা ৩৮, রাহাত ৩/৪০, ইরফান ৩/৫২)।
ফল : ডি/এল পদ্ধতিতে পাকিস্তান ২৯ রানে জয়ী।