সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল ক্রিকেটারদের। মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রিকেটারদের সাধারণ মানুষের সে কী উচ্ছ্বাস! ছাদ খোলা (ওপেন টপ) গাড়িতে করে গোটা ঢাকা ঘুরেছিলেন ক্রিকেটাররা। লাখো জনতা আকরাম-বুলবুলদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠায় আজ সেই মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আবারও ক্রিকেটারদের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আয়োজনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি।
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। আর এবার সেই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছেন ক্রিকেটাররা। সে কারণেই তাদের জন্য এই গণসংবর্ধনা।
আয়োজন বিশাল হলেও সংবর্ধনায় খুব বেশি কিছু থাকছে না। দুপুর ২টায় টিমের গাড়িতে করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে ক্রিকেটাররা উপস্থিত হবেন অনুষ্ঠানস্থলে। এরপর বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে তাদের বরণ করে নেবে। একে একে মঞ্চে উঠবেন স্বপ্ন-সারথীরা। সবার আগে মঞ্চে উঠবেন পেসার শফিউল ইসলাম সুহাশ। সবার শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আজকের সংবর্ধনায় থাকতে পারছেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি আইপিএল খেলতে ভারতে গেছেন।
প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হবে বিশ্বকাপে সাফল্যের চিত্রগুলো। রুবেলের সেই দুর্দান্ত বোলিং অ্যাকশন এবং মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরি দুটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হবে। মঞ্চে উঠে ক্রিকেটাররা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করবেন জনতার উদ্দেশে। শুভেচ্ছা বক্তব্যও রাখবেন তারা। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এবং ক্রীড়া উপ-মন্ত্রী আরিফ খান জয়ের থাকার কথা। এ সম্পর্কে কাল বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'অর্থমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন। তা ছাড়া যেহেতু এটি গণসংবর্ধনা তাই অনেককেই আমরা আমন্ত্রণপত্র দিয়েছি।' অনুষ্ঠান শেষে বর্ণিল আতশবাজি করার কথাও জানিয়েছেন সুজন। তবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ থাকবে দেশসেরা পাঁচটি ব্যান্ডের শিল্পীদের সুরের মূর্ছনা। ক্রিকেটার ও অতিথিদের বক্তব্যের পরই শুরু হবে সংগীতানুষ্ঠান।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ভালো খেলা উপহার দেওয়া। তবে বিশ্বকাপ খেলার উদ্দেশে দেশত্যাগের ক্রিকেটাররা কোয়ার্টার ফাইনালের কথা বললেও তাতে তেমন জোর ছিল না। কেননা একে তো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের প্রতিকূল আবহাওয়ায় খেলা তার ওপর বাংলাদেশ ছিল কঠিন গ্রুপে। কিন্তু টাইগাররা এবার যেন অসাধ্য সাধন করেছে। ইংল্যান্ডের মতো দলকে তারা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এটি।
২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সুপার এইট নিশ্চিত করলেও তা বিশ্ববাসীর কাছে ছিল অনেকটা অঘটন। কিন্তু এবার মাশরাফিরা রীতিমতো ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়ে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করেছে। প্রতিটি ম্যাচেই নাজেহাল করেছে প্রতিপক্ষকে। এই আসরে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটাও বাংলাদেশের। গোটা বিশ্বই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন করে চিনল। ক্রিকেটের রথী-মহারথীরাও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
গতকাল চট্টগ্রামে একটি গণসংবর্ধনা আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য তা শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে মাশরাফিদের সাফল্যের পর পেশাজীবী অনেক সংগঠনই মাশরাফিদের সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সিরিজের জন্য বিসিবি অনুমতি দেয়নি। তবে সবাইকে একসঙ্গে নিয়েই আজকের এই গণসংবর্ধনা আয়োজন করেছে ক্রিকেট বোর্ড।