ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটিয়ে বিশ্বে আলোড়ন তুলেছেন মুস্তাফিজ। আবির্ভাবেই বিশ্বের কোনো ক্রিকেটার এমন পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। চারদিকে শুধু মুস্তাফিজের প্রশংসা। কারও খেয়াল আছে কিনা, ফুটবলেও এক মুস্তাফিজ শুরুতেই ক্রীড়াপ্রেমীদের নজর কেড়েছিল। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ওই তরুণ ফুটবলার পিডব্লিউডি থেকে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানে যোগ দেন। একেবারে অচেনা ফুটবলার হলেও ফেডারেশন কাপ ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে দুর্দান্ত দুটি গোল করে পিছিয়ে থাকা মোহামেডানকে ট্রফি এনে দিয়েছিলেন। এক ম্যাচ খেলেই রীতিমতো হিরো বনে যান। অনেকেরই আশা ছিল এ মুস্তাফিজই ফুটবলে বড় তারকা হবেন। দেশকে এনে দেবেন সম্মান। না, সেই আশা পূরণ হয়নি। এক ম্যাচে হিরো হয়েও পরবর্তীতে তার আর জৌলুস দেখা যায়নি। লিগে মোহামেডানে তার স্থান হয় রিজার্ভ বেঞ্চে। ক্রিকেটে শুধু মুস্তাফিজ নয়। একের পর এক নতুন ক্রিকেটারের দেখা মিলছে। তাইজুল, জুবায়ের, সোহাগ গাজী এরা শুরুতেই মাঠ কাঁপিয়েছেন। ক্রিকেটে প্রতিভার শেষ নেই। মুস্তাফিজের হুঙ্কারে মাঠ কেঁপেছে। কিন্তু ফুটবলে মামুনুলদের চারদিকে হাহাকারই বলা চলে।
ক্রিকেটে আলোর ঝলকানি। ফুটবলে শুধুই হতাশা। অথচ এক সময় ক্রিকেট চলত ফুটবলের আর্থিক সহায়তায়। ফুটবল যে কতটা রমরমা অবস্থায় ছিল বর্তমান প্রজন্মের কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না। আর এটাই তো স্বাভাবিক। কি আছে ফুটবলে, বড় কোনো টুর্নামেন্ট তো দূরের কথা সাফ অঞ্চলেই ট্রফি জেতাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ আক্ষেপ করে বলেন, ক্রিকেটের প্রতি অতি-মনোযোগী হওয়ায় ফুটবলে এ রুগ্নদশা নেমে এসেছে। না একদম বাজে কথা, ফুটবলকে শেষ করছে ফুটবলের লোকই। ফেডারেশনে বসার আগে কত না কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বসলে সব শেষ। ফুটবলকে এগিয়ে নিতে কর্মকর্তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। অবাক লাগে এরপরও বাফুফে সভাপতি টার্গেট দিয়েছেন ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলার। যে বাংলাদেশ মাঠে এখন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না তাতে আবার বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। সালাউদ্দিন বলেছেন, লক্ষ্য নিয়ে এগুলে সবই সম্ভব। মানলাম তার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে কোনো লক্ষ্য আছে কিনা তা নিজেই বলতে পারবেন না। বরং ফুটবল আরও অন্ধকারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মামুনুল, এমিলিদের নিয়ে এখন তো জাতীয় দল মাঠে নামছে। যে খেলোয়াড় সংকট দেখা যাচ্ছে তাতে সামনে জাতীয় দল গড়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ক্যারিয়ারে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছেন সাতক্ষীরার বালক মুস্তাফিজ। কিন্তু ফুটবলে কখনো কি বিস্ময় বালকের দেখা মিলবে? এ যে স্বপ্ন তা বাফুফের কর্মকাণ্ডে বোঝা যাচ্ছে। ভালো মানের ফুটবলার সংকট বলেই বাফুফে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেশাদার লিগে খেলা তিন বিদেশি ফুটবলারকে নাগরিকত্ব দেওয়ার। এ জন্য তারা সরকারের কাছে আবেদনও করবে। ফুটবলে এতটা খারাপ অবস্থা কখনো হয়নি। ক্রিকেটে মুস্তাফিজের পর আরেক নতুন মুখের দেখা মিলবে এটা নিশ্চিত। কেননা এখানে সবকিছু হয় পরিকল্পনা মাফিক। সংগঠকরা ব্যর্থ বলেই নতুন ফুটবলার সৃষ্টি হওয়ার পথটা বন্ধ হয়ে গেছে। যে অবস্থা চলছে তাতে ফুটবলকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, কি করব, আমাদের কপাল খারাপ বলেই চেষ্টা করেও ফুটবলকে এগিয়ে নিতে পারছি না। না, কপালের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজেরা আন্তরিক না বলে ফুটবলকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আর ক্রিকেট পরিকল্পনা করে এগুচ্ছে বলেই একের পর এক সাফল্য আসছে।