প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডের দিকে তাকালে ধ্বংসস্তূপের মতোই মনে হচ্ছিল। ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান। বাকি দুই উইকেটে বাংলাদেশের স্কোর শেষ পর্যন্ত কত হয় তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। অবশ্য আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল হক আশার কথা বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের বোলাররাও ভালোভাবে ডিফেন্স করতে জানে। নাসির এখনো উইকেটে আছে। এখনো ৩০০ রান হওয়া সম্ভব।' তাই হতাশার মাঝেও প্রত্যাশার ফানুস বেশ ফুলে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন তো মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কোনো বলই মাঠে গড়ায়নি। বৃষ্টিবাধায় পণ্ড দিনের খেলা। গতকাল সারা দিনই ছিল থেমে থেমে বৃষ্টি। দুপুর ১২টার দিকে দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দেন ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। আশা-আতঙ্ক সব যেন ধুয়ে গেল বৃষ্টিতে!
বৃষ্টি শুরু হয়েছিল আগের দিন রাত থেকেই। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে মাত্রাটা বেড়ে যায়। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের কারণে গোটা দেশেই ছিল বৃষ্টি। তবে টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি নষ্ট হওয়ায় বাংলাদেশের লাভ নাকি ক্ষতি হয়ে গেল? সেটা হয়তো সময়ই বলে দেবে। তবে আতঙ্ক যে কিছুটা কমে গেল তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
কালকের বৃষ্টি টাইগার ভক্তদের আক্ষেপের কারণ হতে পারত, যদি প্রথম দিন শেষ বিকালে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে পারতেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম দুই সেশন দুর্দান্ত লড়াই করেও শেষ বিকালে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের কারণে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটি নিজের করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। টাইগারদের শেষ ৩১ রানে পড়েছিল ৪ উইকেট। অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন বাজে শট খেলতে গিয়ে।
টেস্ট ক্রিকেট ধৈর্যের খেলা। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলে একের পর এক সাজঘরে ফিরেছেন। ৪ উইকেটে ২১৫ থেকে বাংলাদেশের স্কোর হয়েছিল ৮ উইকেটে ২৪৬। এখনো ভরসার প্রতীক হয়ে উইকেটে ১৩ রানে অপরাজিত রয়েছেন নাসির হোসেন। প্রথম দিন শেষ মুহূর্তে মোহাম্মদ শহীদ আউট হওয়ার পর মুস্তাফিজুর রহমানকে আর ব্যাট হাতে নামতে হয়নি।
তবে আজও খেলা মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস, আজও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কোমেনের আঘাতে সৃষ্ট নিম্নচাপটি কেটে যেতে দুই দিন সময় লাগতে পারে।
বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দুই দিন খেলা মাঠে গড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। তবে ওই ম্যাচে বৃষ্টি শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটামোদীদের আক্ষেপে পরিণত হয়েছিল। কেননা ম্যাচে প্রথম তিন দিনই ছিল টাইগারদের আধিপত্য। একটা সম্ভাবনাও তৈরি করেছিল টাইগাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে সব পণ্ড হয় যায়। এবার বৃষ্টিবাধা হয়ে দাঁড়াল ঢাকা টেস্টেও। অথচ প্রথম দিন শেষ বিকালে ছিল চনচনে রোদ। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই ঝরতে থাকে ইলশেগুঁড়ি। তারপর গতকাল সকাল থেকে অবিরাম বর্ষণ।
পিচ ঢেকে রাখা হলেও আউট ফিল্ডে বেশ পানি জমে গিয়েছিল। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেক ভালো বলেই একটা ক্ষীণ আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি একনাগাড়ে পড়তে থাকায় সে আশায় গুড়েবালি!
বৃষ্টির কারণে দুই দলের ক্রিকেটাররা হোটেল থেকেই বের হননি। লবিতে, রুমে আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছেন তারা।
পুরো একটা দিন নষ্ট হওয়ায় চট্টগ্রাম টেস্টের মতো ঢাকা টেস্টের ভাগ্যও একই সরলরেখায় চলতে শুরু করেছে। কেননা প্রথম দিন মুশফিকদের ব্যাটিং দেখে বোঝা গেছে উইকেটে বোলারদের জন্য আহামরি কিছু নেই। বল অনায়াসে ব্যাটে আসে। রান করা কঠিন হলেও উইকেটে টিকে থাকার জন্য ব্যাটসম্যানদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। তাই ড্রয়ের সম্ভাবনাই জোরালো। যদিও এখনই কিছু বলার উপায় নেই। টেস্ট ক্রিকেটের পরতে পরতে থাকে রোমাঞ্চ। কখন কীভাবে নাটকীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা বলা কঠিন।