ক্রিকেটকে ঘিরেই শুধু সাফল্য। শক্তিশালী দেশগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জিতে লাল-সবুজের পতাকা উড়াচ্ছে টাইগাররা। সেদিক দিয়ে ফুটবল বড্ড পেছনে পড়ে যাচ্ছে। বলা যায় অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে জনপ্রিয় এ খেলাটি। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। এ ব্যর্থতার মধ্যেও আশার আলো জেগে উঠেছে। জাতীয় দল অর্থাৎ সিনিয়ররা নিজেদের ঠিকমতো মেলে ধরতে না পারলেও কিশোর ফুটবলারদের দাপটে ক্রীড়াপ্রেমীরা মুগ্ধ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এতটা খারাপ অবস্থা যে বড় কোনো টুর্নামেন্ট নয়, সামান্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনাল খেলাটা যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অথচ অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শতভাগ সাফল্যের পরিচয় দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। আগের দুই আসরে বাংলাদেশ জ্বলে উঠতে পারেনি। কিন্তু এবার ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য।
সিলেটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কা ৪-০, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ২-১ গোলে পরাজিত করে শাওনরা। সেমিফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও আফগানিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে। ফুটবলে যে রুগ্ন দশা তাতে শিরোপা নয় বাংলাদেশ ফাইনাল খেলতেও ভুলে গিয়েছিল। কিশোররা দাপট দেখিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। আজ বিকালে ভারতের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এটা ঠিক গ্রুপ পর্বে জয় পেয়েছে বলে ফাইনালেও শাওনরা ভারতকে হারাবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। কিন্তু টানা তিন ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের আত্দবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে অবশ্যই শিরোপা জেতা সম্ভব।
কিশোর ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে আলাপ হচ্ছিল এক সময়ে দেশ কাঁপানো ফুটবলার শেখ মো. আসলামের সঙ্গে। বর্তমানে তিনি বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যও। আসলাম বলেন, বাংলাদেশের জুনিয়র লেভেল সব সময়ই ভালো। নজর দেওয়া হয় না বলে পরবর্তীতে তারা হারিয়ে যায়। অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে যারা খেলছে তাদের সংগ্রহ করা হয়েছে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে। ধাপে ধাপে বাছাই করে গঠন করা হয়েছে চূড়ান্ত দল। ডেভেলপমেন্ট কমিটি এক্ষেত্রে কাজটি করেছে ভালো ভাবেই। আসলাম বলেন, এটা ঠিক দেশে ফুটবলার সংকট চলছে। কিন্তু এ নিয়ে হা-হুতাশ করার কিছু নেই। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ছেলেদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দিতে পারলে ভবিষ্যতে জাতীয় দল নিয়ে আমি চিন্তার কিছু দেখছি না। এই কিশোরদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলে এরাই দেশের ফুটবলের চেহারা পাল্টে দেবে।
আজকের ফাইনাল সম্পর্কে আসলাম বলেন, টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স বিচার করলে বাংলাদেশকে ফেবারিট বলতেই হবে। গ্রুপ পর্বে তারা ভারতকে পরাজিত করেছে। ফুটবলে বড় দিক হচ্ছে সমন্বয় বা টিম স্পিরিট। বাংলাদেশ তা প্রতিটি ম্যাচে দেখাতে পারছে। এ জন্য কোচ জিলানীকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। তিনি ছেলেদের গুছিয়ে খেলাচ্ছেন। সত্যি বলতে কি বাংলাদেশ এতটা গতিময় খেলা খেলবে তা আমি ভাবতেও পারেনি। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমি মনে করি বাংলাদেশ সহজভাবেই শিরোপা জিততে পারবে। তবে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে শিরোপা ধরে রাখতে ভারতও মরণ কামড় দেবে। নিশ্চয় তারা ভুল সংশোধন করে মাঠে নামবে। আমার মনে হয় সিলেটের দর্শকরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনাল উপভোগ করতে পারবেন।