কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হারের পর থেকেই গুঞ্জন চলছিল, আর্জেন্টিনার জার্সিতে নাকি আর খেলবেন না লিওনেল মেসি। কারণ বার্সার জার্সিতে যেমন জ্বলে উঠতে পারেন ফুটবলের এ ক্ষুদে জাদুকর, আর্জেন্টিনার জার্সিতে ঠিক ততটাই ম্লান। কিন্তু বার্সার জার্সি গায়েও স্প্যানিশ সুপার কাপ শিরোপাটি হাতছাড়া হলো ক্ষুদে ফুটবল জাদুকরের।
স্প্যানিশ সুপার কাপে প্রথম পর্বে ৪-০ ব্যবধানে হারা দল কখনও শিরোপা জিততে পারেনি। অবিশ্বাস্য কঠিন কাজটি করার জন্য তার দলকেই সঠিক মনে করেছিলেন বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকে। শুরু থেকেই অসম্ভব মনে হওয়া লক্ষ্যটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত স্বপ্নই থেকে গেছে। তাদেরকে আরেকবার জয়বঞ্চিত করে দ্বিতীয়বারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেছে আথলেতিক বিলবাও।
সোমবার কাম্প নউয়ে দ্বিতীয় পর্বে ৫-০ ব্যবধানের জয় দরকার ছিল বার্সেলোনার। কিন্তু জিততেই পারল না স্প্যানিশ সুপার কাপের সফলতম দলটি। ১১বার এই শিরোপা জেতা দলটি বিলবাওয়ের সঙ্গে এদিন ১-১ গোলে ড্র করে।
এর আগে প্রথম পর্বে নিজেদের মাঠে গত মৌসুমের লা লিগা ও কোপা দেল রের চ্যাম্পিয়নদের ৪-০ গোলে হারিয়েছিল বিলবাও।
প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। দ্বিতীয়ার্ধে আরিতস আদুরিসের গোলে সমতা ফেরায় অতিথিরা।
দ্বিতীয় পর্বের এই ম্যাচে বার্সেলোনার প্রথম একাদশে ছয়টি পরিবর্তন আনেন এনরিকে। টানা দুই ম্যাচে চারটি করে গোল হজমের পর গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগানের বদলে ক্লাদিও ব্রাভোকে ফেরান তিনি। এছাড়া নিয়মিত একাদশে ফেরেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ইভান রাকিতিচ, জেরার্দ পিকে, সের্হিও বুসকেতস ও জেরেমি মাথিউ।
গোলের জন্য কতটা মরিয়া বার্সেলোনা তা জানান দেয় শুরুতেই। কিন্তু সাফল্যের দেখা পেতে প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় চলতি বছর চার শিরোপা জেতা দলটিকে।
ষষ্ঠ মিনিটেই গোলের দেখা পেতে পারত বার্সেলোনা। পেদ্রো রদ্রিগেসের শট এক জনের গায়ে লেগে একটুর জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। আর কর্নার থেকে জেরার্দ পিকের শট ক্রসবারে লেগে ব্যর্থ হয়।
বেশির ভাগ সময় বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে একের পর এক আক্রমণ রচনা করে বার্সেলোনা। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণসীমায় গিয়ে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। পেদ্রো, ইনিয়েস্তাদের শটগুলো লক্ষ্যে থাকছিল না, ক্রস বার উচিয়ে যাওয়া প্রচেষ্টাগুলো হতাশাই বাড়াচ্ছিল কেবল।
৩৮তম মিনিটে উল্টো গোল পেয়ে যাচ্ছিল আথলেতিক বিলবাও। হাভিয়ের এরাসো নিজে শট না নিয়ে ফাঁকায় দাঁড়ানো আদুরিসকে পাস দিলে বার্সেলোনার কাজটা আরও অনেক বেশি কঠিন হয়ে যেত। গত ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা স্ট্রাইকারকে বল না বাড়িয়ে নিজে শট নিয়ে সুযোগটি নষ্ট করেন এরাসো।
প্রথম সেশনে ৭৭ শতাংশ সময় বল ধরে রাখা বার্সেলোনার আটটি সুযোগের মাত্র একটি খুঁজে পায় ঠিকানা। ৪৪তম মিনিটে ইভান রাকিতিচের বাড়ানো বল বুক দিয়ে নামিয়ে মেসিকে দেন লুইস সুয়ারেস। ছয় গজ দূর থেকে বল জালে পাঠাতে কোনো ভুল করেননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে বার্সেলোনা। কিন্তু বিলবাওয়ের রক্ষণভাগে গিয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছিল তাদের সব প্রচেষ্টা। পাল্টা আক্রমণে সুযোগ তৈরি করছিল অতিথিরাও। কিন্তু ব্রাভোর দৃঢ়তায় হতাশ হতে হচ্ছিল তাদেরও।
৫৬তম মিনিটে পিকে সরাসরি লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বার্সেলোনা। অতিথিদের সবাই মিলে রক্ষণ সামলানোয় এরপর আর পেরে উঠা সম্ভব ছিল না স্বাগতিকদের জন্য।
মরিয়া এনরিকে শেষ চেষ্টা হিসেবে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময় পেদ্রো ও রাকিতিচের বদলে সান্দ্রো রামিরেস ও মুনির এল হাদ্দাদিকে নামান। কিন্তু ৭৫তম মিনিটে আদুরিসের গোল বার্সেলোনার ফিকে আশাটুকুও শেষ করে দেয়। এরই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় এক বছরে ছয় শিরোপা স্বপ্নও।
বাকি সময়টুকু গোল পায়নি কোনো দলই। ৮৬তম মিনিটে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে ছয় মিনিট আগেই মাঠে নামা কিকে সোলা।
তবে তাতে বিলবাওয়ের উল্লাসে কোনো বাধা আসেনি। গত মৌসুমে বার্সেলোনার কাছে কোপা দেল রের ফাইনালে হারা বিলবাও মধুর প্রতিশোধ নিয়ে ৩১ বছরের মধ্যে প্রথম শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতে।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ আগস্ট, ২০১৫/ এস আহমেদ