সিলেট অঞ্চলে তরুণ-যুবাদের অঘোষিত লক্ষ্য থাকে 'লন্ডন যাবো'। পরিবারও চায় নিজের সন্তানকে লন্ডনে (যুক্তরাজ্য) পাঠিয়ে দিতে। এই লন্ডন যাওয়ার স্বপ্ন ছিল সিলেটের সুবিদবাজারের ছেলে বিপলু আহমেদেরও। তবে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে পরার পর থেকে লন্ডন আর টানে না তাকে। দেশের হয়ে খেলতে পেরেই গবির্ত বিপলু।
বিপলু আহমেদকে চেনা যায়? বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের পঞ্চম আসরে গেল সোমবার তার গোলেই লাওসের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেয়া গোলটি করেছিলেন তিনি।
সাত ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট বিপলু। তার বড় এক ভাই লন্ডনে বসবাস করেন। ভাইয়ের ইচ্ছা ছিল বিপলুকেও সেখানে নিয়ে যেতে।
বিপলু বলছিলেন, এখন আমার কাছে লন্ডনের চেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিই অনেক বেশি সম্মানের।
জাতীয় দলের জার্সির সম্মান বছর তিনেক আগে অনুধাবন করেন বিপলু আহমেদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পেয়ে পাসপোর্ট করাতে হয়েছিল বিপলুকে। ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দারুণ সম্মান পেয়ে অভিভূত হন তিনি।
বিপলু বলছিলেন, পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি দীর্ঘলাইন। তখন সেখানকার এক কর্মকর্তা আমার পরিচয় পেয়ে আমাকে সামনে নিয়ে যান। লাইনে থাকা মানুষরা তখন প্রতিবাদ করছিলেন। তবে সেই কর্মকর্তা যখন আমাকে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় পরিচয় দেন, এরপর সবাই আর প্রতিবাদ না করে আমাকে আগেভাগে কাজ শেষ করতে সুযোগ দেন। কিছু সময়ের মধ্যেই আমি কাজ সেরে ফেলি। তখনই বুঝতে পারি, জাতীয় দলের জার্সির মূল্য কতোটা।
বাংলাদেশের চেয়ে যুক্তরাজ্যে তো ফুটবলের উন্নতির সুযোগ বেশি, এমন প্রশ্নেও টলেননি বিপলু, 'উন্নতি করতে চাইলে সব জায়গাতেই করা যায়। এটা নির্ভর করে নিজের উপর।'
বড় ভাই বাবলু আহমেদের প্রেরণায় ফুটবলে আসা বিপলুর। এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার যুব ফুটবল দিয়ে ওঠে এসেছেন। মোহামেডানের যুব দলে ছিলেন প্রথমে। পরে মোহামেডানের মূল দলেও জায়গা করে নেন। তিন মৌসুম মোহামেডানে খেলার পর বর্তমানে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে আছেন বিপলু।
নিজের বেড়ে ওঠার মাঠে (সিলেটে) গোল করতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত বিপলু। ম্যাচ শেষে বলছিলেন, 'বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছিলাম। তখনই মনে স্বপ্ন ছিল, আমিও একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবো, সিলেটের মাঠে গোল করবো। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি দারুণ খুশি।'
কিছুদিন আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে গোল করেছিলেন বিপলু। তবে সেই ম্যাচের আন্তর্জাতিক মর্যাদা না থাকায় গোলটি স্বীকৃতি পায়নি। এবার বঙ্গবন্ধু কাপে করা গোলটিই তাই তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল।
অতি সম্প্রতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে তিনটি ম্যাচেই খেলেন বিপলু। এরও আগে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়ান গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়েও খেলেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/০৩ অক্টোবর ২০১৮/আরাফাত