চলতি আইপিএলে রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সেয়ের জন্য বুধবার (১৩ এপ্রিল) কামব্যাক করার একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। কিন্তু সেটা হতে দিলেন না মায়াঙ্ক আগারওয়ালরা। টসে হারলেও ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়ল পাঞ্জাব কিংস। আর উল্টোদিকে ঈশান কিষাণদের এই আইপিএলের সফরটা আরও কঠিন হয়ে উঠল। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নদের এমন দশা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়ে গেছে।
টসে জিতে শুরুতে মায়াঙ্কের পাঞ্জাব কিংসকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত। পুনের মাঠে এদিন জমজমাট ছিল পাঞ্জাবের ওপেনিং জুটি। শুরু থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে খেলা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন শিখর-মায়াঙ্ক জুটি। পাওয়ার প্লে'র মধ্যে বুমরাহ-উনাদকাটরা চাপে ফেলতে পারেনি প্রীতির দলকে। দুই ওপেনার মিলে স্কোরবোর্ডে ৯৭ রান তোলার পর প্রথম ধাক্কা খায় পাঞ্জাব। ৩২ বলে ৫২ রানের অধিনায়োকচিত ইনিংস খেলে বিদায় নেন পাঞ্জাব নেতা মায়াঙ্ক। ৬টি চার ও ২টি ছয় দিয়ে অর্ধশতরানের ইনিংস সাজিয়েছিলেন মায়াঙ্ক। দশম ওভারে এসে মুম্বইকে প্রথম সাফল্য দেন মুরুগান অশ্বিন। এর পর আসেন জনি বেয়ারস্টো। তবে তিনি রান পাননি। ১৪ ওভারে জয়দেব উনাদকাট তুলে নেন বেয়ারস্টোর (১২) উইকেট। বেয়ারস্টো ফিরলে মাঠে আসেন লিয়াম লিভিংস্টোন। তবে ফর্মে থাকা লিভিংস্টোন সেট হওয়ার সময়টুকুও পাননি। ৩ বলে ২ রান করে ফিরতে হয় তাকে। বুমরার নিখুঁত ইর্য়কারে উড়ে যান লিয়াম লিভিংস্টোন।
চতুর্থ উইকেটে ২১ রান ওঠে। লিভিংস্টোন ফিরলে শিখর ধাওয়ানকে সঙ্গ দিতে আসেন জিতেশ শর্মা। মারমুখী ধাওয়ানকে শেষ পর্যন্ত ১৭তম ওভারে সাজঘরে পাঠান বাসিল থাম্পি। ৫০ বলে ৭০ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন তিনি। শিখরের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছয়। পাঞ্জাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার শাহরুখ খান আজও জ্বলে ওঠেননি। ৬ বলে ১৫ রান এসেছে শাহরুখের ব্যাট থেকে। তবে শেষ বেলায় শাহরুখের সঙ্গে জুটিতে গুরুত্বপূর্ণ ৪৬ রান যোগ করে দলকে ১৯৮ রানে পৌঁছে দেন জিতেশ শর্মা। তিনি ৩০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
রান তাড়া করতে নেমে পাঞ্জাবের মতো বড় ইনিংস গড়তে ব্যর্থ হয় মুম্বাইয়ের ওপেনিং জুটি। পাওয়ার প্লে'র মধ্যে ২ ওপেনারের উইকেট হারিয়ে ফেলে মুম্বাই। শুরু থেকেই বেশ ছন্দে দেখা গিয়েছিল মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। কিন্তু হিটম্যানকে বিধ্বংসী হতে দেননি প্রোটিয়া তারকা কাগিসো রাবাডা। ১৭ বলে ২৮ রান করে যান ক্যাপ্টেন রোহিত। ঈশান কিষাণ নিষ্প্রভ ছিলেন। মাত্র ৩ রান করে বৈভব আরোরার শিকার হন ঈশান। তবে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান ডিওয়াল্ড ব্রেভিস ও এন তিলক ভার্মা জুটি। তৃতীয় উইকেটে ৪১ বলে ৮৪ রান ওঠে। বিস্ফোরক 'বেবি এবি'খ্যাত ব্রেভিসকে এদিন দেখল মুম্বই সমর্থকরা।
মুম্বাইয়ের হয়ে তৃতীয় ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ব্রেভিস। সেই সুযোগটার সদ্ব্যাবহার করলেন প্রোটিয়া ক্রিকেটার। ২৫ বলে ৪৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্রেভিস। তবে রাহুল চাহার নবম ওভারে বল হাতে এলে ২৯ রান তোলেন ‘বেবি এবি’। এক ওভারে পর পর চারটিটে ছয় ও ১টি চার মেরে গ্যালারিতে ঝড় তুলে দিয়েছিলেন ব্রেভিস। তবে সেই ঝড় খুব দ্রুত থামিয়ে দেন ওডেন স্মিথ। ছন্দে ছিলেন তিলক ভার্মাও। তবে সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন তিলক। ২০ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ রান করেন তিনি। এরপর সূর্যকুমারের সঙ্গে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন কায়রন পোলার্ড। তবে বিশ্রী ভাবে রান আউট হন ক্যারিবিয়ান তারকা। ১০ রান আসে পোলার্ডের ব্যাটে।
তখনও একটা জয়ের আশা ছিল মুম্বাইয়ের। কারণ ক্রিজে ছিলেন সূর্যকুমার যাদব। তবে ভাগ্যদেবী যেন কোনও মতেই প্রসন্ন হচ্ছেন না রোহিতের দলের ওপর। ১৯তম ওভারে কাগিসো রাবাডা তুলে নেন স্কাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ৪৩ রান করে হতাশ সূর্য মাঠ ছাড়েন। শেষ ওভারে মুম্বইয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২২ রান। কিন্তু শেষ ওভারেই ওডেন স্মিথ একটার পর একটা উইকেট তুলে নিয়ে মুম্বইয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেন। জয়দেব উনাদকট (১২), জশপ্রীত বুমরাহ (০) ও টাইমাল মিলস (০)-দের শেষ ওভারে ফেরান স্মিথ। এবং ১২ রানে ম্যাচ জিতে ২ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাঞ্জাব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাঞ্জাব: ১৯৮-৫ (শিখর ধাওয়ান ৭০, মায়াঙ্ক আগরওয়াল ৫২, বাসিল থাম্পি ২-৪৭, মুরুগান অশ্বিন ১-৩৪, জশপ্রীত বুমরা ১-২৮)।
মুম্বাই: ১৮৬-৯ (ডিওয়াল্ড ব্রেভিস ৪৯, সূর্যকুমার যাদব ৪৩, তিলক ভার্মা ৩৬, ওডেন স্মিথ ৪-৩০, কাগিসো রাবাডা ২-২৯, বৈভব আরোরা ১-৪৩)।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ