এই ছবিটা প্রতীকী, তবুও বর্তমানে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের কাপ্তান সাকিব আল হাসানের অবস্থা যেন এমনই। অদৃশ্য কোন এক সুতোয় তার হাত বাঁধা পড়েছে। হরেক চেষ্টায়ও খোলা যাচ্ছে না সেই বাঁধন। সাকিবও হয়তো জানেন না আসলে মুক্তি মিলবে কীসে?
এশিয়া কাপের মঞ্চ, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের উত্তাপ ছড়ানো ব্যাটিং। ‘ভোরের আলোই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে’ সেই সূত্র যারা মেনে আসছেন এতকাল, তারা ভেবেছিলেন নিশ্চয়ই আজ ভিন্নরক কিছু হবে। টাইগারদের হাসির ঝলকে মগ্ন হবে আরব আমিরাত থেকে পুরো বাংলা।
মেহেদী মিরাজের চমক জাগানিয়া শুরু। ২৬ বলে ৩৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস তার। সাকিবের তাল বুঝে ধরে খেলা। মুশফিক ব্যর্থ হলেও আফিফ হোসেন ধ্রুব’র চমক লাগানো ইনিংস সেই ব্যর্থতার ক্ষত ভুলিয়ে দিয়েছ। ২২ বলে ৩৯ করেছেন ধ্রুব, স্ট্রাইকরেট ১৭৭-এর বেশি। মাহমুদউল্লাহ মন্থর, তবে ম্যাচ পরিস্থিতির ডিমান্ড অনেকটা তেমনই ছিল।
রিয়াদের স্থবিরতাও গতি দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত। ৯ বলে ২৬৬-এর বেশি স্ট্রাইকরেটে করেছেন ২৪ রান। তাসকিন আহমেদও ছয় বলে ১১। সবমিলিয়ে দুবাইর মাঠে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৮৩। জিততে লঙ্কানদের চাই ১৮৪ রান।
গল্পের এই পর্যন্ত বলাই যায়, বহুদিন বড় মঞ্চে এমন সুদিন দেখেনি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। এমন সাহসী টাইগারদের দেখা পাওয়াও বিরল।
এরপর বোলিংয়ে আঠারো ওভার পর্যন্ত নানা উত্থান-পতন ঘটেছে। শুরুতেই তাসকিনের ওভারে ক্যাচ ছেড়েছেন অভিজ্ঞ উইকেট কিপার মুশফিকুর রহিম। তারপরও ঘটেছে নো আর ওয়াইড কাণ্ড। একের পর এক জীবন পেয়েছেন কুশাল মেন্ডিস। ম্যাচটা দুই দেশের দিকে ঝুলেছে পেন্ডুলামের মতো।
তারপরও ১৮তম ওভার শেষে আশা জেগেছিল। ক্রিজে থাকা একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটার দাসুন শানাকা আউট, তখন শ্রীলঙ্কার স্কোর ১৫৯/৭। মানে মাঠে যারা আছেন তারা মূলত বোলার, ব্যাট চালানোর ক্ষমতা নেই বললেই চলে।
জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার দুই ওভারে দরকার ২৫ রান, হাতে দুই উইকেট, বোলারদের হাতেই ব্যাট। সমীকরণটা লঙ্কানদের জন্য বড্ড কঠিন। সাকিব ভরসা করে বল দিলেই সেই এবাদত হোসেনের হাতে, যিনি দুই ওভার বল করে তিন উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের ব্যাকফুটে ফেলেছিলেন। যদিও তার ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারটা ছিল খরুচে।
নিজের শেষ ওভারে এসে তৃতীয় ওভারের চেয়েও ছন্নছাড়া এবাদত। ১৯তম ওভারে ওয়াইড, নো বল মিলিয়ে এলোমেলো বোলিংয়ে দিলেন ১৭ রান। খেলার যবনিকাপাত মূলত সেখানেই। তারপর স্পিনার শেখ মাহেদীও নো বলময় ওভারের দুই বলেই লঙ্কানদের ৮ রান দিয়ে দিলেন। ফলে হারতে বসা ম্যাচ শ্রীলঙ্কা জিতল ২ উইকেটে, সাথে ৪ বল হাতে রেখে। এখানে চাইলে অনেকেই সাকিবের অধিনায়কত্বের ভুল খুঁজতে পারেন, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়।
এভাবেই এবারের এশিয়া কাপের মিশন শেষ সাকিবের বাংলাদেশের। তবে ক্রিকেট তো আর শেষ নয়, মাস দেড়েক পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ; আবারও নামতে হবে মাঠে। আর আগে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ খেলবে ত্রিদেশীয় সিরিজ।
সবমিলিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। হেরে ভেঙে যাওয়ার সময় নেই সাকিবের কাছে। বিসিবি সভাপতির হুমকিময় সংবাদ সম্মেলনও হয়তো এই মুহূর্তে কার্যকর কিছু নয়। এখন যতো কম সময়ে যতো বেশি উন্নতি করা যায়, সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে। প্রাকটিস, প্রাকটিস আর প্রাকটিস।
জীবনানন্দ দাশের সেই কবিতার লাইনের মতোই যুক্তি খুঁজতে হবে মনননে-মগজে ‘তবুও তো পেঁচা জাগে; গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে, আরেকটি প্রভাতের ইশারায়—অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল