ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ, ‘ভ্রমণক্লান্ত’ সাকিবকে দেখা গেলো না মাঠে। দল যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে হারছে, সাকিব নাকি তখন ব্যস্ত অনুশীলনে। নানা গণমাধ্যমের খবর অন্তত সেকরমটাই বলেছিল।
প্রথম ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। বল হাতে মুস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদের চরম ভরাডুবির পরও পাকিস্তানকে ১৬৭ রানে থামাতে পেরেছিল টাইগাররা।
তাসকিন আহমেদ, মেহেদী মিরাজ, নাসুম আহমেদ সেদিন দুর্দান্ত বল করেছিলেন। ব্যাট হাতে দুই ওপেনার ব্যর্থ হলেও লিটন কুমার দাস ও আফিফ হোসেন ধ্রুব বেশ ভালোই করেছিলেন বলা যায়। ইয়াসির রাব্বিও খেলেছিলেন ২১ বলে ৪২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। যদিও তাতে হার এড়ানো যায়নি। ২১ রানে হারে টাইগাররা।
সেই ম্যাচেও কোনো গেম প্ল্যান ছিল না টাইগারদের। যার মূল্যও দিয়েছেন সোহান। হাতের নাগালের জয়টা ফসকে গেছে চালের ভুলে।
ক্রিকেট তো মাথার খেলা। দাবায় যেমন বুদ্ধিদীপ্ত চাল চালতে হয়। ক্রিকেটেও তেমন মাথা খাটানোর যথেষ্ট দরকার আছে। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা, শক্তির জায়গা এবং সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স ঘেটেই মাঠে নামতে হয়। তবে খেলার ধরণ বলেছে নুরুল হাসান সোহানরা প্রথম ম্যাচে তেমন কিছু করে মাঠে নামেননি। তাদের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট ও টিম ডিরেক্টরও হয়তো পূর্ব পরিকল্পনার কোনো প্রয়োজন বোধ করেননি।
সাকিব আল হাসান অধিনায়কত্বে ফেরায় বাংলার ক্রিকেট ভক্তরা ভেবেছিলেন এবার একটা প্রোপার গেম প্ল্যান নিয়েই মাঠে নামবে টিম টাইগার। কিন্তু মাঠের খেলায় তার কোনো প্রমাণ মেলেনি।
সাকিব ওপেনিংয়ে সাব্বিরের জায়গায় শান্তকে এনেছেন। শান্ত রানও করেছেন! তবে সেই ২৯ বলে ওয়ানডেসুলভ ৩৩ রানের ইনিংস টি-টোয়েন্টিতে কার্যকর কিছু নয়। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। মিরাজও টানা দুই ম্যাচে ব্যর্থ। এশিয়া কাপ আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার সফলতায় আশায় বুক বাঁধা ভক্তরাও তাই হতাশায় ফিরছেন।
এমনকি পজিশন বদলে সাতে নামা সাকিব আল হাসানও ব্যাট হাতে করতে পেরেছেন মাত্র ৭ রান। বল হাতে সাকিব কিপ্টে থাকলেও ব্রেক থ্রু আনতে পারেননি। শরীফুল, তাসকিনরাও যথেষ্ট নির্বিষ বোলিংয়ে খরুচে ছিলেন। একে তো স্বল্প পুঁজি, অন্যদিকে ভোতা বোলিং। সবমিলিয়ে ১৩ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় কিউইরা।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার টিমটাকে বুঝতে ও সাহসী করে তুলতে যতোটুকু পাশে ও কাছে থাকা দরকার, ততোটা কাছে-পাশে থাকছেন না সাকিব। নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সাকিব আচরণেও হয়তো কিছুটা এলিট। ‘সাধারণ’ মাশরাফি বা রিয়াদের কাছে ক্রিকেটারদের যে প্রবেশাধিকার ছিল, হয়তো সাকিবে সেটা নেই। যদিও দলে জায়গা পোক্ত করতে সোহানরা সবসময়ই ‘সাকিব ভাই’ ‘সাকিব ভাই’ জপমাল্য আওড়ে যাচ্ছেন। সার্বিক পরিস্থিতির ভিন্নরূপ সেই কথিত সাকিবভক্তিকে যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধই করছে। কারণ যে নেতা দলের এতো খোঁজ খবর রাখেন বলে তার সতীর্থরা দাবি করেন, মাঠের খেলায় তো সেই ঐক্যের প্রমাণ মেলে না বরং ছন্নছাড়া ভাবটাই পরিষ্কার।
ফলে একটা গ্যাপ তৈরি হচ্ছে বোঝাপড়ায়। আর সেই েফাঁকতালটাই অভিজ্ঞ সাকিবের অধিনায়কত্বে চির ধরিয়ে দুর্বল করে দিচ্ছে। সাথে ক্রিকেট বোর্ডের দায়সারা মনোভাবও সমানভাবে দায়ী এই অবনতির জন্য।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল