কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে করা কুৎসিত প্রচারণা। ঢাকাতে ইউটিউব ও ফেসবুক অফিস না আসার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এমনকি সরকার থেকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা ঢাকায় অফিস স্থাপন করছে না। অবাধে ব্যবসা করে ফাঁকি দিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার কর। বুষ্টিংয়ের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিভিন্ন চক্র ও দেশে থাকা তাদের সহযোগীদের। এ বিষয়ে আরও কঠোর নজরদারির পক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো সাফল্য দেখাতে পারছে না। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্ত্রী বলছেন, যে কোনো মূল্যে তাঁরা সব কিছু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সূত্রমতে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন ফেসবুক ইউটিউব ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করতে দেশ-বিদেশের ব্লগারদের হায়ার করেছে সরকারবিরোধীরা। তারা প্রতিদিনই কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে একাধিক আইটি বিশেষজ্ঞ বলছেন, বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশে এভাবে অবাধে সামাজিক মাধ্যমে নোংরামির সুযোগ নেই। এমনকি আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশেও সে দেশের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে যা খুশি তা লেখা বলা যায় না। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশে সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি রয়েছে। চীন তাদের দেশে অনেক কিছু অনুমোদনই দেয়নি। বাংলাদেশে সবকিছু অবাধ থাকায় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে বিশেষ গোষ্ঠী। বিভিন্ন সংস্থা ধারণা করছে, হেফাজত জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষ বিশাল বাজেট নিয়েই নেমেছে। বিদেশে থেকেই তারা বেশি অপকর্ম করছে। কানাডা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক চক্র এ ব্যাপারে বেশি সক্রিয়। লন্ডন ও নিউইয়র্ক থেকেও যা খুশি তা ইউটিউব ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ চক্রের দেশীয় এজেন্টরা বিভিন্ন গ্রুপ খুলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের মূল টার্গেট প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ নষ্ট ও সরকারকে বিব্রত করা। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৪ এর নির্বাচনের আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে সরকার কঠিন সংকটে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু সরকার নয়, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধেও অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষ চক্র। আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক মাধ্যম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের অপপ্রয়াস আরও বাড়বে। এখনই সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, জাতির জনক ও তাঁর পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ ব্যাপারে দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। বিদেশে অবস্থান করে যেসব বাংলাদেশি এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়। প্রয়োজনে ইন্টারপোলেরও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। সাইবার বিশেষজ্ঞ তৈরি করার জন্য নেওয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ। এক্ষেত্রে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি এবং ডিবির সাইবার ডিভিশন। নিয়মিতভাবে চলছে সাইবার প্যাট্রলিং। ইন্টারনেটের ‘গেটওয়ে’-তে ফিল্টারিং বসানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে ডিএমপির পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েদের স্মার্টফোন কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিলে তার ওপর মনিটরিং করতে হবে। বাচ্চারা কোন কোন সাইটে প্রবেশ করেছে তা দেখার দায়িত্বও কিন্তু অভিভাবকদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামাজিক এই যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করা হয়েছিল যাতে এর ব্যবহারকারীরা অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়ন ও বুদ্ধিভিত্তিক কোনো বিষয়ে গঠনমূলক বক্তব্য দিতে পারেন। সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে আমি মনে করি, কুৎসা রটানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করা উচিত নয়। এখানে ব্যবহারকারী চাইলেই প্রকৃত তথ্যনির্ভর তথ্য না দিয়ে একজন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিতে পারেন। যেখানে মূলধারার গণমাধ্যম একটি বিষয়ে গবেষণা করে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো তথ্যনির্ভরতা নেই। এক্ষেত্রে কারা সামাজিক মাধ্যমে তথ্য দিচ্ছেন এবং এর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কেও আমাদের নিশ্চিত হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু কোড অব কনডাক্ট থাকতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরকারের জন্য কোড অব কনডাক্ট দেওয়া সমস্যার। কারণ এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে কোনো তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যম যাই হোক না কেন এটি খুব তথ্যবহুল হতে হবে। এক্ষেত্রে কুৎসা রটানোর সুযোগও কমে আসবে। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার সম্পর্কেও ব্যবহারকারীকে সচেতন হতে হবে। ভাষাটি যেন শোভন হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        