ভিপিএন ব্যবহার জরুরি?
কফি শপ কিংবা শপিং মল; ফ্রি ওয়াই-ফাই যে কারও জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। হ্যাকাররা গোপনে আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করাতে পারে অথবা এমনকি একটি ভুয়া হটস্পট সেটআপ করতে পারে। ফলে তারা আপনার অনলাইনের সব কার্যক্রম দেখতে পারে...
আমাদের যাপিত জীবনে-দৈনন্দিন চলাফেরায় সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। ইমেইল চেকিং, মেসেঞ্জারে যোগাযোগ কিংবা টিকটকে ভিডিও শেয়ারিং-আপনার অবস্থান যেখানেই থাকুক, নিশ্চিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ খুঁজছেন? কফি শপ হোক বা শপিং মল; বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইতে যুক্ত হওয়াটা আপনার কাছে সুযোগ মনে হতে পারে। কিন্তু যদি আপনার ফোনের সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকে, তাহলে তা করবেন না। কেননা, হ্যাকাররা গোপনে আপনার এবং ইন্টারনেটের মাঝে নিজেদের বসিয়ে দিতে পারে। ফলস্বরূপ অনলাইনে আপনার কার্যক্রম সব বিষয়ে নজরদারি রাখতে পারে। এজন্য তারা ব্যবহার করতে পারে আসল মনে হওয়ার ম্যালওয়্যার, এমনকি ভুয়া হটস্পট সেটআপও। এটি এমন সময় যখন ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
‘ভিপিএন’ মূলত বেশির ভাগ মানুষের ইন্টারনেট নিরাপত্তা টুলের অংশ হওয়া উচিত। নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য প্রাথমিকভাবে এগুলো প্রযুক্তিগতভাবে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে।
ভিপিএন কী?
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) এমন এক পরিষেবা, যা আপনার অনলাইন কার্যকলাপ ইন্টারনেটে অন্য কারও কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। একটি ভিপিএন আপনার ট্র্যাফিক ডেটা এনক্রিপ্ট করে, যা অন্য কাউকে এটি পড়তে বাধা দেয় এবং এটিকে সারা বিশ্বের সুরক্ষিত সার্ভারগুলোতে ব্যক্তিগত টানেলের মাধ্যমে রুট করে। যদি সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহার কোনো সিটি বাসে চড়ার মতো মনে হয়, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার হবে কোনো দামি লিমুজিনে চড়ার মতো। যে কেউ বাসের যাত্রী হতে পারেন এবং এর গন্তব্য সবারই জানা থাকে। অন্যদিকে লিমুজিন মানুষের কাছে ব্যক্তিগত। এটি কী বহন করছে বা কোথায় যাচ্ছে জানা প্রায় অসাধ্য।
কেন ভিপিএন ব্যবহার জরুরি?
গোপনীয়তা এর প্রধান কারণ। আপনি যদি হোটেল লবি বা কফি শপের বিনামূল্যে পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের সংযোগ স্থাপন করেন, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করলে কেউ আপনাকে নজরে রাখতে পারবে না। চাইলে আপনি আপনার বাড়িতেও ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। যদি এটি আপনার জন্য উদ্বেগের কারণ না হয়। ভিপিএন ব্যবহারের আরেকটি বড় কারণ আপনার অবস্থান ‘স্পুফ’ করা এবং আপনার ফোন বা কম্পিউটার অন্য কোথাও আছে তা না জানানো। ভিপিএন প্রদানকারীর সার্ভার থাকা দেশগুলোর তালিকা থেকে একটি বেছে নিন। ব্যস, আপনার একটি ভিনদেশি আইপি ঠিকানা থাকবে, যা একটি ওয়েবকে মনে করাবে যে আপনি বাংলাদেশের কোনো ডেস্কে না থেকে নিউইয়র্কে, লন্ডনে, সিঙ্গাপুর অথবা জার্মানিতে আছেন। ভিপিএন কঠোর ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণযুক্ত দেশগুলোতে মানুষকে সেন্সরশিপ এড়াতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন ভিপিএন সবকিছু লুকিয়ে রাখবে না। যেমন : আপনি আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে যদি লগইন করেন, গুগল তা জানবে।
ভিপিএন কি অবৈধ?
বেশির ভাগ দেশে ভিপিএন সম্পূর্ণ বৈধ। তবে উত্তর কোরিয়া এবং চীনের মতো যেখানে কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করে বা অনলাইন নজরদারি এবং সেন্সরশিপ চালায়, সেখানে এগুলো বেআইনি বা সীমাবদ্ধ।
আপনি কীভাবে ভিপিএন বেছে নেবেন?
শত শত না হলেও কয়েক ডজন ভিপিএন পরিষেবা অন্তর্জালে তাদের পরিষেবা প্রদান করে আসছে। তবে মনে রাখবেন, সবগুলোই আবার বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এটি কিছু অসাধু অপারেটর দ্বারাও পরিচালিত হতে পারে। প্রযুক্তি পর্যালোচনা ওয়েবসাইটগুলোর গোপনীয়তা নীতি, এনক্রিপশন প্যাক্টিস, ব্যবহারের সহজতা, গতি, মূল্য এবং অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করেছে। পর্যালোচনাকারী ওয়েবগুলো নির্দিষ্ট ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ভিপিএনকে র্যাঙ্কিংয়ে রাখে, যেমন : স্ট্রিমিং। সারা বিশ্বে বেশ কয়েকটি সুপরিচিত বা প্রতিষ্ঠিত প্রদানকারীদের মধ্যে রয়েছে NordVPN, Mullvad, Proton, Surfshark, ExpressVPN Ges Private Internet Access। এদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দেখতে হবে।
তার একটি ‘কিল সুইচ’, যা ভিপিএন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সব ইন্টারনেট ট্রাফিক বন্ধ করে দেয়, ডেটা বাইরে যেতে বাধা দেয়। কনজিউমার রিসার্চ গ্রুপ ঈড়সঢ়ধৎরঃবপয-এর নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা আইনজীবী পল বিশপ বলেন, ‘কিল সুইচ’ এক শক্তিশালী নিরাপত্তা ফিচার, কারণ এটি আপনাকে কখনই অরক্ষিত রাখবে না। তবে তিনি মনে করেন, কিছু লোক একে বিরক্তিকর মনে করে। কারণ, যদি আপনার ফোন নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে, তাহলে সংযোগ সাময়িক বন্ধ হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা ‘নো-লগিং’ গ্যারান্টির ভিপিএন-এর সুপারিশ করেন। যা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দেবে যে, আপনার কোনো অনলাইন কার্যকলাপ রেকর্ড করা হবে না। তবে একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে ভিপিএন অপারেটরের এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে কি না-তা যাচাই করা সহজ নয়, তাই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অডিট করা হয়েছে এমন ভিপিএনগুলো দেখুন।
তথ্যসূত্র : অ্যাসোসিয়েড প্রেস (এপি)