দীর্ঘ ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে চালু হয়েছে মেট্রোরেল। গত রবিবার সকাল থেকে চলতে শুরু করেছে ঢাকা মেট্রো। গত কয়েকদিনের তীব্র যানজটে ভোগান্তির শেষ ছিল না নগরবাসীর। মেট্রোরেল চালু হতেই নগরজীবনে ফিরেছে স্বস্তি। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘রবিবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা প্রান্ত থেকে মেট্রোরেল চালু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক আছে। মেট্রোরেলের সূচিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, আগের সময়েই চলবে।’
রবিবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেনটি মতিঝিলের উদ্দেশে ছাড়ে। আর মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। চালু হলেও মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে আপাতত মেট্রোরেল থামবে না। এই দুই স্টেশনে আপাতত যাত্রীসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হলে ওই দিন বিকাল ৫টায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর হয়। ১৭ আগস্ট থেকে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তখন মেট্রোরেল চালু না হওয়ার কারণ ছিল নিম্নপর্যায়ের কর্মীদের কর্মবিরতি। দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বাসের পর মেট্রোরেলের কর্মচারীরা ২০ আগস্ট থেকে কাজে যোগ দেন।
প্রথম দিনের মেট্রোরেল চলাচল পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সচিবালয় স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল যাতে ভাঙচুর না হয়, সে জন্য এটাকে কেপিআই হিসেবে একটা আপগ্রেট করার চেষ্টা করছি, যাতে নিরাপত্তা বাড়ে। এই সেবাকে এসেনশিয়াল সার্ভিস হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, যাতে করে কেউ এভাবে সার্ভিসটাকে ব্যাহত করতে না পারে।’
উপদেষ্টা জানান, ‘জাপানের রাষ্ট্রদূত তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন কীভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা যায়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ হবে। মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে, তা মূল্যায়ন করে চালুর বিষয়ে একটা সুনির্দিষ্ট সময়রেখা দিতে।
মেট্রোরেল চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের মধ্যে। রবিবার সকালে উত্তরা, মিরপুর ১১ নম্বর ও শেওড়াপাড়া স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গিয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি নিয়মিত মতিঝিল যাই মেট্রোতে করে। এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। মাঝখানে বন্ধ থাকায় বেশ ঝামেলা হয়েছে। বাসে যেতে দীর্ঘ সময় যানজটে বসে থাকতে হতো। এখন আবার ট্রেন চালু হওয়ায় আমাদের ভোগান্তি কমল।’ সেনপাড়ার বাসিন্দা সালমা আকতার বললেন, ‘মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আবার আগের মতো ধাক্কাধাক্কি করে সকালে দীর্ঘ যানজট ঠেলে অফিসে যেতে হতো। এটা চালু হওয়ায় আমাদের এলাকায় প্রাণ ফিরে এসেছে। কিছু মিথ্যা তথ্যও সামনে চলে এসেছে। বলা হচ্ছিল, মেট্রো চালু হতে অনেক সময় লাগবে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেগুলো ভুল বা অপতথ্য ছিল। মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুইটি নওসীন শেওড়াপাড়া স্টেশন থেকে মতিঝিল যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘মেট্রোরেল একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসে, ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। বাসে গেলে তো আমাদের সময় বেশি লাগত, কষ্ট বেশি হতো। অনেক সময় অফিসে যেতে দেরি হয়ে যেত। এখন আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলো।’
সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ নম্বর ও কাজীপাড়া স্টেশন আপাতত বন্ধ থাকছে। সেই কারণে মিরপুর এলাকায় শেওড়াপাড়া ও মিরপুর ১১ নম্বর স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বেশিই দেখা গেল। মিরপুর ৬ নম্বর এলাকার বাসিন্দা কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই রাস্তায় মানুষের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এটা থেকে আমরা আবার মুক্তি পেলাম। তবে আমাদের কাছাকাছি স্টেশন বন্ধ থাকায় ১১ নম্বর পর্যন্ত আসতে হচ্ছে।’