রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরার গল্প

রণক ইকরাম

ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরার গল্প

ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সিরিয়া-তুরস্ক। ভূমিকম্পের পর ছয় দিন পেরিয়ে গেছে। তবুও প্রতিদিনই ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হচ্ছে জীবিত মানুষ। তাদের উদ্ধারে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। প্রাণ ফিরে পাওয়া এই মানুষগুলোর অবিশ্বাস্য উদ্ধার বিশ্বকে নাড়া দিচ্ছে। এমন ঘটনা বারবার দেখেছে বিশ্ব। অলৌকিক বলা হলেও প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষের জন্য নতুন কিছু নয়। এর পরও অনেক বেঁচে থাকাই অবিশ্বাস্য লাগে। চারদিক অন্ধকার। আলো নেই, বাতাস নেই। খাবার তো দূরে থাকুক- অক্সিজেন আর পানিরও অভাব। তার পরও অফুরন্ত প্রাণশক্তি আর বেঁচে থাকার অদম্য বাসনা থাকলে বেঁচে থাকা যায়। এ রকম কিছু অবিশ্বাস্য বেঁচে থাকার গল্প নিয়ে আমাদের এ আয়োজন।

   

ভূমিকম্পের থাবায় বিধ্বস্ত আর ধ্বংসস্তূপের নগরীতে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ১০টি প্রদেশ। এসব অঞ্চলে ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। দুই দেশজুড়ে কেবলই স্বজন হারানোর হাহাকার। একের পর এক শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং তার জেরে শক্তিশালী আফটারশক। উদ্ধারকারীদের অনুমান, মৃতের সংখ্যা ২৪ হাজার পার হয়ে যাবে। কিন্তু ধ্বংস ও মৃত্যুর মিছিলের মধ্যেও রয়েছে জীবনে ফেরার গল্প। সিরিয়ার এক ছোট্ট মেয়ে রাঘদ ইসমাইলের কাহিনি এ রকমই। ভয়াবহ ভূমিকম্পে মাসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে সে হারিয়েছে। এখন সে ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্ধারকারীদের কোলে। সিরিয়ার আজাজে ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে তাকে উদ্ধার করার সময় সবাই দেখে আনন্দিত হন। আসলে আঁচড়ই লাগেনি ১৮ মাসের ইসমাইলের গায়ে। এমনি বেঁচে ফেরাদের তালিকায় রয়েছে অসংখ্য শিশু-কিশোর। অনেক বয়স্ক ও মধ্যবয়স্ক নারী-পুরুষ আছেন বেঁচে থাকার অবিশ্বাস্য গল্পের চরিত্রে। আন্তর্জাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান হোয়াইট হেলমেটের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, যখন দুই বছরের ওই শিশুকে টেনে তোলা হচ্ছে তখন আশপাশের সবাই ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করছেন। সবার মুখে হাসি। উদ্ধারকারীদের সঙ্গে সঙ্গে হাসছে ওই শিশুটিও। এমনকি এক আত্মীয়কে দেখে হাসিমুখে তার কাছে যাওয়ারও চেষ্টা করছে সে। তুরস্কের ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের সম্মিলিত উদ্ধারকারী দল। তুরস্কে ভূমিকম্পের ১০৪ ঘণ্টা পর এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর কাহরামানমারাসের কিরিখান এলাকার বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ওই নারীকে বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।

৪০ বছর বয়সী ওই নারীকে উদ্ধারের পর আশপাশের সবাইকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এ ঘটনার আগে ভূমিকম্পের ১০১ ঘণ্টা পর একই পরিবারের ছয়জনকে করা উদ্ধার হয়। ১২৯ ঘণ্টা পরও উদ্ধার করা হয় ভূমিকম্পে আটকেপড়া আরও এক পরিবারকে। ভূমিকম্পের চার দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় সদ্য জন্ম নেওয়া এক শিশু ও তার মাকে। হাজারো মৃত্যুর মিছিলে একটি জীবিত প্রাণ উদ্ধার করা হলে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন উদ্ধারকারীরা। ঘটনাস্থলে থাকা আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দলের নেতা স্টিভেন বেয়ার বলেন, এখন আমি অলৌকিকতায় বিশ্বাস করি। উদ্ধার অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।  চার দিনে অনেককে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবে আশার খবর হচ্ছে, এখনো প্রাণের সন্ধান মিলছে।

 

নাকশা বিবি

বেঁচে ছিলেন ৬৩ দিন

দেশ : পাকিস্তান

দুর্ঘটনা : ভূমিকম্প

খাবার : পচা খাবার, পানি

২০০৫ সালে পাকিস্তানে আঘাত হানে ভয়াবহ ভূমিকম্প। যার আঘাতে দুমড়েমুচড়ে ধসে পড়ে বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা। এই ভূমিকম্প থেকে রেহাই পায়নি ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীরও। কিন্তু কে জানত ভূমিকম্পের এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর আরও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল সবার জন্য! ভূমিকম্পে নিখোঁজ নানাজনের মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া গেলেও ৪০ বছরের এক নারীর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। এত দিন পর ওই মহিলার বেঁচে থাকার কথা কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। কিন্তু সবার কল্পনাশক্তিকে ভুল প্রমাণ করে বাস্তবেই জীবিত ফিরলেন ওই মহিলা। তার নাম নাকশা বিবি। ৬০ দিন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের নিচে একটি রান্নাঘরে আটকে ছিলেন তিনি। সেখানে নড়াচড়ার মতো উপায় না থাকলেও সামান্য অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছিল। সবচেয়ে বড় বিষয় ভূমিকম্পে নাকশা বিবি কোনো আঘাত পাননি। ভাগ্য আরও ভালো ছিল এ জন্য যে, আটকেপড়া ঘরটি ছিল একটি রান্নাঘর। বাইরে থেকে ঢোকা সামান্য অক্সিজেনের সহযোগিতায় কাটল কয়েক ঘণ্টা। ক্ষুধা লাগতেই ঘরে রাখা খাবারের খানিকটা খেলেন। এরপর খানিকটা পানি। অনেক চিৎকার-চেঁচামেচির পরও কেউ আসেনি তাকে উদ্ধার করতে। এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। একেকটি দিনকে একেকটি মাস মনে হতো।  এক সময় পচে যাওয়া খাবার খেতে লাগলেন। পানিও আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছিল। তবু মনের ভিতর আশা নিয়ে চালিয়ে গেছেন যুদ্ধ। অবশেষে আবর্জনার জঞ্জাল সরাতে গিয়ে তাকে অবিশ্বাস্যভাবে উদ্ধার করা হয়।

 

ইভানস মোনসিগনাক

বেঁচে ছিলেন ২৭ দিন

দেশ : হাইতি

দুর্ঘটনা : ভূমিকম্প

খাবার : মলমূত্র মিশ্রিত পানি

২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেশটিকে এলোমেলো করে দেয়। রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার সেই ভূমিকম্পে পোর্ট অব প্রিন্স শহরটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ভূমিকম্পের ১১ দিনের মাথায় উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। এর আগেই পাঁচ দিনের মাথায় উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘ। কিন্তু কে জানত এমন মৃত্যুগহ্বরের মাঝখান থেকেও কেউ একজন মাথা তুলে দাঁড়াবেন প্রায় এক মাসের মাথায়। অবিশ্বাস্য সেই ঘটনাটিই ঘটেছে ইভানস মোনসিগনাকের বেলায়। হাইতি ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে ২৭ দিন পর্যন্ত আটকে ছিলেন ইভানস। দুই সন্তানের বাবা ইভানসের এই জীবিত থাকা বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের একটি ধংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় তাকে। ইভানস যে স্থানটিতে আটকে পড়েছিলেন, তার ঠিক নিচ দিয়ে বয়ে গিয়েছিল নর্দমার মলমূত্রমিশ্রিত পানি। একসময় এটিই হয়ে ওঠে তার বেঁচে থাকার অবলম্বন।  সেই নর্দমার পানি ও ইট-পাথরের টুকরো খেয়ে বেঁচেছিলেন ইভানস। গণমাধ্যমেও সেই বিভীষিকাময় ঘটনা উঠে আসে।

 

পার্ক সিউইং হিউন

বেঁচে ছিলেন ১৬ দিন

দেশ : দক্ষিণ কোরিয়া

দুর্ঘটনা : ভূমিধস

খাবার : বৃষ্টির পানি

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ভবন ধসের ঘটনাটি ছিল সন্ত্রাসী হামলা। আর সাধারণভাবে ভবন ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশের সাভারে। এর আগ পর্যন্ত হতাহতের দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ায় স্যামপং স্টোর ধসে পড়ার ঘটনাটি। ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে একদিন হঠাৎ ধসে পড়ে একটি বহুতল শপিং কমপ্লেক্স। ওই ঘটনায় প্রায় ৬০০ মানুষ নিহত হন। আহত হন অনেকে। সেই সঙ্গে অসংখ্য মানুষ চাপা পড়েন ভবনের ধংসস্তূপের নিচে। এই ধ্বংসস্তূপে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে চাপা পড়েন পার্ক সিউইং হিউন নামের এক কোরিয়ান নারী। পাঁচ দিন পর্যন্ত জীবিত প্রাণের সন্ধানে উদ্ধারকাজ চালানো হয়। কারণ বিজ্ঞান ও মেডিকেল শাস্ত্রমতে, এমন প্রতিকূল পরিবেশে ৭২ ঘণ্টার বেশি বেঁচে থাকা কঠিন। কিন্তু কখনো কখনো ভাগ্যের জোর, আর অদম্য প্রাণশক্তি ঠিকই পাল্টে দেয় সব ধারণা। ঠিক এমনটিই ঘটে হিউনের সঙ্গে। ভবন ধসে পড়ার ১৬ দিন পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার হন তিনি। এই নারী কেবল বৃষ্টির পানি পান করে এতগুলো দিন বেঁচেছিলেন।

 

পেড্রিটো ডি

বেঁচে ছিলেন ১৪ দিন

 দেশ : ফিলিপাইন

দুর্ঘটনা: ভূমিকম্প

খাবার : পানি ও নিজের প্রস্রাব

নিয়তি কাকে কখন কী অবস্থায় নিয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। কিন্তু কখনো কখনো সৃষ্টিকর্তার করুণা বড্ড বিচিত্র ও নির্মম লাগে। বেঁচে থাকার জন্য কোনো মানুষ নিজের মূত্র পান করতে পারে- এমনটি শুনলেই গা শিউরে ওঠে। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে পেড্রিটো ডি-এর ক্ষেত্রে। তার ঘটনাটি ফিলিপাইনের। দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে জীবিত বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে তার অবস্থান পঞ্চম স্থানে। এ ক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিটি একজন পুরুষ। ঘটনাটি ১৯৯০ সালের। এ ঘটনাটির সঙ্গেও ভূমিকম্পের ভয়াবহতা জড়িত। ভূমিকম্পে চারদিক গুঁড়িয়ে এক করে দেয়। আর সেই ধংসস্তূপে আটকা পড়ে অসংখ্য মানুষ। কেউ আহত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার হন, আবার কারও বা লাশ উদ্ধার হয়। চারদিকে যখন স্বজন হারানো কান্নার রোল ঠিক তখনই ঘটনার ১৪ দিন পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে জীবিত উদয় হন পেড্রিটো ডি।  ভূমিকম্পে ধসে পড়া হোটেলের নিচে চাপা পড়েছিলেন তিনি। ঘটনার ১৪ দিন পর বিস্ময়করভাবে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। পেড্রিটো এত দিন বেঁচেছিলেন পানি ও নিজের প্রস্রাব পান করে।

 

কোচ ও ১২ কিশোর

বেঁচে ছিলেন ১৭ দিন

দেশ: থাইল্যান্ড

দুর্ঘটনা: গুহায় ভূমিধস

খাবার: নিজেদের খাবার ও পানি

এ ঘটনাটি আলোচিত ১২ কিশোর ও তাদের কোচকে নিয়ে। সময়টা তখন ২০১৮ সালের জুন। ফুটবল অনুশীলন শেষে কোচ ও কিশোররা স্থানীয় থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশ করে। এটি থাইল্যান্ডের দীর্ঘ গুহাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিশোরদের প্রত্যেকের বয়স ১১ থেকে ১৬ এবং কোচের বয়স ২৫। আবহাওয়াও সেদিন থমকে ছিল। প্রবল বৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়। কিশোরের দল ও তাদের কোচ গুহা থেকে বের হওয়ার জন্য বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু বৃষ্টি থামার লক্ষণ মোটেও ছিল না। এরপর গুহার ভিতরে পানি ঢুকতে থাকে। এক সময় ১২ কিশোর ও তাদের কোচ পানি থেকে বাঁচতে গুহার চার কিলোমিটার ভিতরে অবস্থান নেয়। ভাগ্য সহায় ছিল না। বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে এবং গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ‘থাম লুয়াং’ গুহায় কিশোরেরা নিজেদের কাছে থাকা খাবার ও পানি খেয়ে বেঁচে ছিল। পরবর্তীতে আতঙ্কিত বাবা-মায়ের আকুতিতে থাই সরকার কিশোরদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে।  বৈরী আবহাওয়ার মাঝে প্রাণপণ চেষ্টায় কোনো ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে ফিরিয়ে আনে আটকেপড়া ওই কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচকে।

 

শাহার বানু

বেঁচে ছিলেন ৯ দিন

দেশ: ইরান

দুর্ঘটনা: ভূমিকম্প

খাবার: পানি

ঘটনাটি অবিশ্বাস্য। বেঁচে থাকার তালিকায় এটি আগের অন্য ঘটনাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। কারণ এ ঘটনায় ফিরে আসা ব্যক্তিটি ৯০ বছর বয়স্ক একজন বৃদ্ধা। ভাবা যায় ৯০ বছর বয়সী একজন নারী এমন প্রতিকূল পরিবেশে ৯ দিন পর্যন্ত বেঁচেছিলেন! ঘটনাটি ইরানের। আর এটিও ভূমিকম্পের ঘটনা। ২০০৪ সালে ইরানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সবকিছু ল-ভ- হয়ে যায়। অসংখ্য ঘরবাড়ি দালানকোঠা সব ধসে পড়ে। নিহত হয় অসংখ্য মানুষ। আর সেই ভয়াল ভূমিকম্পে নিজের ধসে পড়া বাড়ির নিচে চাপা পড়েন ৯০ বছরের বৃদ্ধা শাহার বানু মাজানদারানি। সাধারণ পরিবেশেই এমন বয়সী একজনের চলাচল আর বেঁচে থাকা কঠিন। আর ভূমিকম্পের পর আবদ্ধ অবস্থায় এমন কঠিন পরিবেশে এই নারী কীভাবে বেঁচে ছিলেন, সেটি সবার কাছেই এক অপার বিস্ময় হয়ে ধরা দেয়। ৯ দিন পর অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় অক্ষত অবস্থায় সেখানকার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় এই নারীকে। ৯০ বছর বয়সী শাহার বানু মাজানদারানি আটকে থাকা স্থানে সামান্য কিছু পানি পান করেই ৯ দিন কাটিয়ে দেন। সেখানে থেকে থেকে তার মনে হচ্ছিল যেন তিনি মারা যাচ্ছিলেন।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিকই তিনি বেঁচে ফেরেন।

 

ভেসনা ভালভিক

৩৩ হাজার ফিট উচ্চতা থেকে লাফ দিয়ে বেঁচে ছিলেন

দেশ: সার্বিয়া

দুর্ঘটনা: বিমান বিধ্বস্ত

এ ঘটনাটি বিমান দুর্ঘটনার। পৃথিবীতে যত অলৌকিক ঘটনার অবতার হয়েছে এ ঘটনাটি তার  অন্যতম। ভেসনা ভালভিক নামের মহিলা একজন সার্বিয়ান ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। যিনি কোনো প্যারাসুট ছাড়াই ৩৩ হাজার ফুট উঁচু থেকে লাফ দিয়ে বেঁচে ছিলেন। ঘটনাটি ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারির। সেদিন জেট ফ্লাইট ৩৬৭ নামক বিমানটি স্বাভাবিকভাবেই আকাশে উড়াল দেয়। কিন্তু বিমানে ব্যাগেজের একটি ব্রিফকেসে আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে। অতি দ্রুত বিমানটি পাইলটদের নিয়ন্ত্রণ হারায়। একপর্যায়ে বিমানটি চেক স্লোভাকিয়ার সাবস্কা কেমিনিস নামক স্থানে বিধ্বস্ত হয়। কিন্তু বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ভেসনা ভালভিক কোনো প্যারাসুট ছাড়াই লাফ দেন। ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে বাতাসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ভেসনা। তবুও তিনি প্রাণে বেঁচে ছিলেন। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও বেশ কয়েক মাস কোমায় ছিলেন এই সার্বিয়ান ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। বিমান থেকে লাফিয়ে মাটিতে পড়ামাত্র তার শরীর দুমড়েমুচড়ে যায়। মেরুদন্ড ভেঙে যায়।  টুকরো টুকরো হয়ে যায় হাড়। বাকি জীবনটা ভালভিক ক্ষতবিক্ষত দেহ আর পঙ্গুত্বকে বরণ করেই বেঁচে ছিলেন।

 

বাহিয়া বাকারি

৯ ঘন্টা ধ্বংসস্তূপ আঁকড়ে সাগরে বেঁচে ছিল

দেশ : ইয়েমেন

দুর্ঘটনা : বিমান বিধ্বস্ত

মিরাকল গার্ল খ্যাত মেয়েটির নাম বাহিয়া বাকারি। ইয়েমেনের ফ্লাইট ৬২৬ এয়ারবাস এ-৩১০ বিধ্বস্ত হওয়ার পর একমাত্র বেঁচে ফেরা মানুষ ফরাসি এই মেয়েটি। ঘটনাটি ২০০৯ সালের ৩০ জুনের। সেদিন ১৫৩ যাত্রী বহন করা ফ্লাইট ৬২৬ ইয়েমেন থেকে কমরোস দ্বীপপুঞ্জে যাচ্ছিল। বাহিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার মা, যিনি মেয়েকে নিয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর জন্য কমরোস রওনা করেছিলেন। তবে ভাগ্য নিরুপায়, হঠাৎ বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটির দিকে নেমে আসতে শুরু করে। ঝাঁকুনি বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে বিপদের আতঙ্ক রূপ নেয় মৃত্যুর শঙ্কায়। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কমরোসের উত্তর উপকূলে ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তে বিস্ফোরণে দিগি¦দিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে বিমানের ধ্বংসাবশেষ। যাত্রীদের প্রায় সবাই প্রাণ হারালেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ১২ বছর বয়সী বাহিয়া বাকারি। বাকারির সামান্য সাঁতারের অভিজ্ঞতা থাকলেও সেটা তার বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না।  পাশে ছিল না কোনো লাইফ ভেস্টও। উদ্ধার করার আগে মেয়েটি সাগরে ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ভাসমান বিমানের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে আঁকড়ে ছিল। প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত বাহিয়াকে হাসপাতলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর