বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অদ্ভুতুড়ে মানুষখেকোদের গল্প

তানভীর আহমেদ

অদ্ভুতুড়ে মানুষখেকোদের গল্প

মানুষখেকো। শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। বহুকাল আগে থেকেই মানুষখেকোর ঘটনাগুলো মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে এসেছে। এর পেছনের কারণ ছিল গহিন বনের হিংস্র ও ক্ষুধার্ত মাংসাশী প্রাণীরা। শিকারি মানুষের সঙ্গে লড়াই করে চলতে হতো তাদের। মানুষখেকোর কথা উঠলেই আমাদের চোখে হিংস্র প্রাণীর ছবি ভেসে ওঠে। বিশেষ করে বাঘ, ভালুক, হাঙর ও কুমিরের কথা না বললেই নয়। এদের খাদ্য তালিকায় মানুষ খাদ্য হয়ে ওঠার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেসব ছাড়াও পৃথিবীতে নানান জায়গা রয়েছে যেখানে মানুষ গেলে আর ফিরে আসে না। এমন গুহা রয়েছে যেটাকে সবাই চেনে মানুষখেকো গুহা বলে। গহিন অরণ্যের নির্দিষ্ট কোনো স্থানে ছিল চোরাবালি। সেখানে পা ফেললেই মানুষ কিছুক্ষণ পরে অদৃশ্য হয়ে যেত। এমন অনেক গাছের কথাও হয়তো শুনেছেন যেটা লতা দিয়ে মানুষকে পেঁচিয়ে ধরে গিলে ফেলত!  এসবের কোনোটা সত্যি হলেও কোনোটা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে একটু বাড়াবাড়ি কথার অলংকারসমেত। তো সব মিলিয়ে নানান বিষয় নিয়ে মানুষখেকোর ভয়ানক উপাধি মেলা কয়েকটি ঘটনা ও স্থান নিয়ে আজকের রকমারি-

 

আইসল্যান্ডের লেক

একটি সুন্দর লেক। দেখে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- অন্য ১০টি লেকের চেয়ে এটাতে আলাদা কী আছে? খুব আলাদা কিছু নেই। এই লেকটির একটি বিশেষত্ব আছে। এখানে মানুষ নামলে আর ফেরে না! একটু চমকে উঠলেও উঠতে পারেন। সত্যিই এটি মানুষখেকো লেক। এই লেকটিতে যারাই গোসল করতে নেমেছেন তারা আর উঠে আসতে পারেননি। এভাবে বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার পর খবরটা চাওর হয়ে ওঠে।

এই যুগে কোনো রহস্যই অমীমাংসিত রাখা চলে না। তাই এই লেকটিকে ঘিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। মানুষ খাওয়ার এই অদ্ভুত লেকটি রয়েছে আইসল্যান্ডে। লেকটির বিশেষ গুণ হলো- এটি অনেকটাই বালুচরের মতো। কেউ ফাঁদে পড়লেই তাকে বালুর নিচে টেনে নিয়ে যাবে।  এই লেকটির ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটা ফাঁদ। যেখানকার পানিগুলো মাঝখান দিয়ে নিচের দিকে চলে যায়। ঠিক বালুচরের মতো করে। ফলে বুঝতেই পারছেন কেন মানুষ এই লেকে নামলেই অদৃশ্য হয়ে যায়।

 

মানুষখেকো জাতি!

মানুষখেকো মানুষের কথা ভাবতেই অনেকে ভয়ে কুঁকড়ে ওঠেন। পাপুয়া নিউগিনিতে ২৯ জনকে আটক করা হয় মানুষ খাওয়ার অপরাধে। ইউকে টেলিগ্রাফ পত্রিকার একটি খবরে বিশ্ববাসী রীতিমতো হতবাক হয়ে যায়। কয়েকজন ডাক্তারের অস্বাভাবিক মৃত্যুরহস্য বের করতে গিয়ে পুলিশ তাদের সন্ধান পায়। পুলিশের ধারণা, প্রায় ৭০০ থেকে ১ হাজার লোক এই গ্রুপের সদস্য এবং এরা সবাই কম বেশি মানুষের মাংস ভক্ষণ করেছেন। এরা সবাই কমপক্ষে সাতজন মানুষকে সরাসরি হত্যা এবং ভক্ষণের সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে বিচার শুরু হয়। কোর্টে এরা সবাই স্বীকার করেন যে, তারা ডাক্তার হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের ভাষ্য মতে, এসব ডাক্তার ভয়ংকর কালোজাদু বা জাদুকরী বিদ্যার চর্চা করতেন। তারা ডাক্তারদের হত্যা করে তাদের মগজ কাঁচাই ভক্ষণ করেছেন। তারা দাবি করেন, কালো জাদুকর এই ডাক্তাররা বহু মানুষকে হত্যা করে এই জাদুবিদ্যা চর্চা করে আসছিলেন। তাদের নিশ্চিহ্ন করতেই এই হত্যাযজ্ঞ। ডাক্তারদের হত্যা করে তাদের কালোজাদু নিজেদের করে নিতেই হত্যা করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা। ডাক্তারদের মগজ ভক্ষণের ফলে তারা রোগব্যাধি থেকে পুরোপুরি রক্ষা পেয়েছেন। আর জীবনে তাদের রোগব্যাধি হবে না বলেই দাবি করেন তারা। পাপুয়া নিউগিনি পুলিশের ভাষ্য মতে, কয়েক বছর ধরে মানুষ হত্যা  এবং ভক্ষণের মতো পুরাতন রীতি আবার বেড়েছে।

 

ফ্রাঙ্কলিনের জাহাজ

ফ্রাঙ্কলিনের জাহাজ। ধারণা করা হয়, এটি প্রায় ১৬০ বছরের পুরনো। এই জাহাজটি ঘিরে একটি মিথ প্রচলিত ছিল যে, এই জাহাজের যাত্রীরা বেঁচে থাকার তাগিতে একপর্যায়ে মানুষখেকো হয়ে উঠেছিল। পুরোটাই মিথ নাকি কিছুটা সত্যও এখানে জড়িয়ে আছে তা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। তবে যেটুকু জানা যায়, তাতে বলা চলে দুই ব্রিটিশ পর্যটক দুটি ভ্যাসেলে চড়ে বেরিয়ে পড়েন সাগরে। কানাডার আর্কটিকে এসে জাহাজ দুটি হাওয়া হয়ে যায়। এর পর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। সেই থেকে জাহাজ দুটির হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের অমীমাংসিত এক রহস্যই থেকে যায়। প্রায় অর্ধযুগ আগে কানাডা ওই জাহাজ দুটির খোঁজ বের করতে কাজ শুরু করে। ১৮৪৫ সালে স্যার জন ফ্রাঙ্কলিন তার বাছাই করা ১২৮ জন ক্রু নিয়ে কিংবদন্তির নর্থওয়েস্ট প্যাসেজে খুঁজতে যাত্রা করেন। কিন্তু নুনাভুট-এর আর্কটিক এলাকার ভিক্টোরিয়া স্টেটের কিং উইলিয়াম দ্বীপে আসার পর থেকে ‘এইচএমএস বারবাস’ এবং ‘এইচএমএস টেরর’ এর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। কানাডিয়ানরা বছরের পর বছর ধরে বিশ্বাস করেন, মারা যাওয়ার আগে তাদের অনেকে মানুষখেকো হয়ে উঠেছিলেন।

 

মাংসখেকো গাছ

বহুল প্রচলিত একটি গল্প। গহিন জঙ্গল। হঠাৎই একটি গাছের লতা পেঁচিয়ে ধরেছে এক মানুষকে। ধীরে ধীরে লতাটি হাত, পা, গলা ও কোমর আঁকড়ে টেনে নিচ্ছে গাছটি। এরপর গাছটির মুখ খুলে গেল। ভিতরে টেনে নিয়ে গেল মানুষটিকে। এক সময় অদৃশ্য হয়ে গেল মানুষটি! এটি অদ্ভুদ এক অজানা রহস্যের গল্প। কিন্তু আসলে কি তা সত্য? এমন কোনো উদ্ভিদ কি আছে যারা মাংস খায়? মানুষ ধরে খায় এমন উদ্ভিদও কি আছে? ১৮৭৮ সালের কথা। জার্মানির এক ভ্রমণকারী, নাম তার কার্ল লিচি। তিনি একবার গেলেন মাদাগাস্কারের এক জঙ্গলে। সেখানে বসবাস করে মিকাদো উপজাতিরা। তাদের সম্পর্কে জানার জন্য লিচি সেখানে গেছেন। তিনি দেখেছেন তাদের একজন কীভাবে মানুষখেকো একটি উদ্ভিদের সামনে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছেন। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে একটি মেয়ে হাঁটছিল। তার হাতে ছিল লোহার ধারালো একটি অস্ত্র। বনের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাতের অস্ত্র দিয়ে সে দুই পাশের গাছগুলোকে আনমনে খোঁচাখুঁচি করছিল। সামনে পড়ল বড় একটি গাছ। আনারসের মতো দেখতে গাছটির চেহারা। ওপরের দিকে অনেকগুলো লম্বা রোমযুক্ত আকর্ষি বা শুঁড়। নিচের অংশে একটি জলাশয়ের মতো। সেখানে মিষ্টিমধুর রসে ভরা। মেয়েটি চাইল এই গাছে উঠতে। লিচির ভাষায় সে সংগ্রাম করছিল এই গাছটিতে চড়ার জন্য। তার রস পান করার জন্য। দি এটরোসিয়াস ক্যানিবাল ট্রি নামের এই গাছটি চুপচাপ মরার মতো অবস্থায় শুকনো ডালপালা বিস্তার করে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ অসভ্য বর্বর আচরণ করে উঠল গাছটি। এই উদ্ভিদটির রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক শাখা-প্রশাখা। ফণাতোলা বিষধর সাপের মতো দেখতে সেগুলো। মুহূর্তের মধ্যে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল পুরো গাছটি। তারপর সে তার মনোবৃত্তি পূর্ণ করার জন্য কাজ করতে চাইল। ভুতে পাওয়া লোককে যেমন দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখে ঠিক তেমনি মেয়েটির হাত পা কোমর গলা পেঁচিয়ে ফেলল এই ফণাতোলা শুঁড় দিয়ে। শক্ত করে জড়িয়ে পেঁচিয়ে মেয়েটিকে ওপরে তুলে নিয়ে গেল। চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকল মেয়েটি।  হাত-পা আছড়াতে থাকল। ডগাগুলো আরও বেশি করে পাশবিক নির্যাতন করতে থাকল তাকে। বিলাপ করতে করতে একপর্যায়ে মেয়েটির মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকল। তারপর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে সে মারা গেল। তবে আধুনিক সময়ে মানুষখেকো গাছের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

নজোম্বর সিংহের দল

১৯৩২ সালের ঘটনা। তানজানিয়ার নজোম্বে গ্রামের একদল সিংহ মানুষখেকো হয়ে উঠেছিল। কেন এই সিংহগুলো মানুষখেকো হয়ে ওঠে তা নিয়ে একটা গল্প খুব চালু আছে। মাতামুলা মঙ্গেরা নামের এক ওঝা নাকি নিয়ন্ত্রণ করতেন সিংহের পালকে। নজোম্বের গোত্রপ্রধান তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিলে প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে ওঠে মঙ্গেরা। জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকত সে। মধ্য রাতে মন্ত্রপাঠ করত। তারপর পেছন ফিরে মিলিয়ে যেত জঙ্গলে। এর পরেই শুরু হতো সিংহদের হত্যাযজ্ঞ। একপাল সিংহ ঝাঁপিয়ে পড়ত নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর। গ্রামের লোকে বিশ্বাস করত পালাতে গেলে মারা পড়তে হবে। কারণ, গ্রামের চারপাশে পাহারা দিচ্ছে মানুষখেকো সিংহের দল। এভাবেই সিংহের আক্রমণ চলল কিছুদিন। প্রায় ১৫০০ (মতান্তরে ২০০০) লোক মারা গিয়েছিল। এই নজোম্বর হামলা এখনো পৃথিবীতে মানুষখেকোর আক্রমণে মৃতের সংখ্যা হিসেবে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ধারণা করা হয়, প্রায় এক যুগ পর্যন্ত এই সিংহের দল গ্রামবাসীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। নজোম্বের এই বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছিল জর্জ রাশবি নামের এক বিখ্যাত শিকারির সাহসী ভূমিকায়। প্রায় ১৫টি মানুষখেকো সিংহ শিকার করেছিলেন তিনি। তার গুলির হাত থেকে বাঁচতে অন্য সিংহগুলো পালিয়ে যায়।

দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি ঘটে নজোম্বের নিরীহ মানুষদের। স্থানীয়দের অনেকেরই অবশ্য বিশ্বাস ছিল গোত্র বাঁচাতে বাধ্য হয়েই মঙ্গেরাকে ওঝার পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন গোত্রপ্রধান। তার ফলেই বন্ধ হয়েছিল এই গণহত্যা। সত্যি যাই হোক না       কেন, নজোম্বর সিংহের দল এখনো ইতিহাসের এক রোমহর্ষক মানুষখেকো!

 

বাদামি ভালুক

জাপানের ঘটনা। ১৯১৫ সাল। সাংকেবেতসু তখন হোক্কাইডোর একটি গ্রাম। একসময় সাংকেবেতসু কুখ্যাত হয়ে ওঠে এক মানুষখেকোর জন্য। সেই বনে ছিল বিশাল এক বাদামি ভালুক। সে বছর ডিসেম্বরের ঘটনা। ‘ওটা’ পরিবারে হামলা করল ভালুকটি। বাসায় ছিল কৃষকের স্ত্রী আর সদ্যজাত এক বাচ্চা। কেসাগাকে প্রথমেই হামলা করল বাচ্চাটার ওপরে। বাচ্চাকে বাঁচাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল কৃষকের স্ত্রী। জ্বলন্ত চেলাকাঠ ছুড়ে মারা হয়েছিল ভালুকটির দিকে। কাজ হয়নি মোটেও বরঞ্চ খেপে গিয়ে কৃষক স্ত্রীকে টেনে-হিঁচড়ে জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছে দানবটি। কিন্তু এক থাবাতেই মেরে ফেলল সন্তানটিকে। তারপরে এগিয়ে গেল কৃষকের স্ত্রীর দিকে। কৃষকের স্ত্রীর পালাবার জায়গা ছিল না। কৃষকের স্ত্রীর সাহায্যে এগিয়ে আসার মতো ছিল না কেউই। কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই ভালুকের হামলায় রক্তাক্ত হলো বাড়ির দেয়াল। এখানে ওখানে রক্ত আর মাংসের ছড়াছড়ি। ‘ওটা’ পরিবারের সাহায্যার্থে খুব দ্রুতই জনা তিরিশেক লোক জড়ো হয়ে বেরিয়ে পড়ল জঙ্গলে। সৌভাগ্যবশত কেসাগাকের দেখা মিলল খুব কাছেই। গুলি করা হলেও নিমিষেই অন্ধকারে মিলিয়ে গেল জানোয়ারটি। হতভাগ্য মহিলার দেহাবশেষ উদ্ধার করা হলো।

 

উগান্ডার কুমির

উগান্ডা। আফ্রিকার এই দেশে হঠাৎই খবর হয়ে উঠল একটি কুমির। সাম্প্রতিক সময়ে মানুষখেকোর কথা উঠলেই এই দেশের একটি কুমিরের কথা বলতে হয়। ধারণা করা হয়, লেক আলবার্টের সেই কুমিরটি ১৫ বছরে অন্তত ৮৩ জন জেলের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। গত ৩০ মার্চ ৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি কুমির বন্যপ্রাণী বিভাগের রেঞ্জারদের হাতে ধরা পড়ে, যেটি গত এক বছরে ভাইরাকার অন্তত ছয় জেলেকে হ্রদে টেনে নিয়ে গেছে। হিসাব বলে, ২০১৩ সালে কুমিরের হামলার শিকার হয়েছেন সেখানে ৩১ জন। দেশটির বন্যপ্রাণী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, লেক ভিক্টোরিয়া, লেক আলবার্ট, লেক কিয়োগা এবং নীলনদের তীরে গত ১৪ বছরে নাকি অন্তত ৩৪০ জন মানুষ কুমিরের পেটে গেছে। লেক ভিক্টোরিয়ায় মাছ ধরতে গিয়ে একদিন এভাবেই আক্রান্ত হয়েছিলেন স্থানীয় জেলে করিম ওনেই। সন্ধ্যার আলো-অঁাঁধারিতে হ্রদের পানিতে কুমিরের ভাসমান পিঠ দেখে তিনি ভেবেছিলেন জলজ আগাছার স্তূপ। কিন্তু সেটাই হঠাৎ কুমিরের চেহারা নিয়ে তার হাত কামড়ে ধরে এবং টেনে পানিতে নিয়ে যায়। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ওই ঘটনায় একটি হাত হারাতে হয়েছে ৪০ বছর বয়সী করিমকে। সেই সঙ্গে ছাড়তে হয়েছে মাছধরার পেশা। তার বুক আর কাঁধে কুমিরের ধারালো নখের চিহ্ন যে কাউকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে। করিমের ছোট ভাই জাকে কিজতোকেও দুটি হাত হারাতে হয়েছে কুমিরের হামলায়। এ ছাড়া মাংসের টোপ দিয়ে কুমির ধরতে গিয়ে আমাদের লোকজন নিজেরাই আহত হচ্ছে।

 

ভয়ানক কালী নদী

এবার একটি নদীর কথা শোনা যাক। এই নদীটির কুখ্যাতি রয়েছে মানুষ খেয়ে ফেলার জন্য। ভারতের এক ভয়ংকর নদীর নাম ‘কালী নদী’। ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে এক যুবক সাঁতার কাটছিল। হঠাৎ করে তার প্রেমিকা ও অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখের সামনেই সে পানির নিচে অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে যায়। তিন দিন ধরে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জাল ফেলে অনেক খুঁজেও আর পাওয়া যায়নি তাকে। এর তিন মাস পর একই নদীর অন্য এক ঘাটে এক পিতার সামনে হারিয়ে যায় একটি শিশু বালক। এ ক্ষেত্রেও মৃতদেহের কোনো অবশিষ্ট অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দুটি ঘটনার পর অনেক কানকথা ছড়িয়ে পড়ে। নদীতে অশুভ শক্তি রয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। আসলে এই ঘটনার মহানায়ক বা খলনায়ক ছিল পানির নিচে থাকা একটি প্রাণী। মাগুর মাছের মতো একটি ক্যাট ফিস। এই মাছগুলো অনেক বড় এবং মাংসাশী প্রকৃতির হয়ে থাকে। আসলে এই কালী নদীর তীরে হিন্দু অধ্যুষিত ভারত ও নেপালের অনেক শ্মশান রয়েছে যেখানে মৃতদেহ পোড়ানো হয়। এই নদীর পানি দিয়ে আবার সেই ছাই-ভস্ম ধৌত করা হয়। আর এতে সেই মৃতদেহের অর্ধপোড়া দেহ, শরীরের অনেক নরম অংশ এই নদীতে গিয়ে পড়ে। আর মৃত মানুষের মাংস খেয়ে এই মাছগুলো বিশাল আকৃতির হতে থাকে।

 

ভয়ানক হাঙর

সমুদ্রে হাঙরের চেয়ে মানুষখেকোর কুখ্যাতি খুব কম প্রাণীরই মিলেছে। তেমনি একটা ঘটনা ঘটে ১৪ জুলাই ১৯১৬ সালে। রারিতান বে তে জেলেদের জালে ধরা পড়ল অতিকায় এক মাদি গ্রেট হোয়াইট শার্ক। এই হাঙরটির পেট চিরে আতঙ্কে শিউরে উঠল জেলেরা। কারণ হাঙরের পেটে পাওয়া গেল গলে যাওয়া কিংবা আধ-হজম হওয়া মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ঘটনাটি ঘটে নিউজার্সিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এই মৃতের গল্পটিও। নিউজার্সি উপকূলে ছুটি কাটাতে এসেছে কিশোর চার্লস ভ্যানস্যান্ট। নতুন সাঁতার শেখা চার্লসের সার্ফিংয়ে দারুণ আগ্রহ। বারবার ছুটে যাচ্ছিল সমুদ্রের কাছে। একপর্যায়ে সে চলে গেল কিছুটা গভীর সমুদ্রে। সঙ্গে রয়েছে পোষা কুকুর ফ্রেডি। হঠাৎই চার্লসকে সজোরে কামড়ে ধরতেই তার পায়ের মাংস খুলে এলো। ছিঁড়ে গেল ফিমোর‌্যাল আর্টারিগুলো। গলগল করে বইতে লাগল রক্তধারা। কিশোরের চেঁচামেচিতে লাইফগার্ড ছুটে এলেও ব্যাপক রক্তপাতের ফলে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা গেল চার্লস। হাঙরের কামড়ের এমন বহু ঘটনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর