মরুভূমিতে অমীমাংসিত বহু রহস্য লুকিয়ে আছে। এখনো নিত্যনতুন রহস্যের খোঁজ মিলছে মরু গহিনে। এসব মরুভূমির উপরিতলের রহস্য। বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলোর তো কোনো কূলকিনারাই হয়নি। কৌতূহলী মানুষ এই রহস্যের পেছনে ছুটছে। দেখা মিলেছে লবণের পাহাড়, যেখানে বৃষ্টি হয়নি গত ৪০০ বছরেও। আবার অল্প বৃষ্টিতে কোথাও রঙিন ফুলে ছেয়ে যায় গোটা মরুপ্রান্তর। কোথাও ছাই হয়ে ১৫০ বছর ধরে বেঁচে আছে মরুগাছ। নীল মানুষ এখনো মরুর বুকে জীবন কাটায়। এমনি রোমাঞ্চে ভরা মরুভূমি নিয়ে আজকের রকমারি-
বন্যার্ত মরু
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গোটা পৃথিবী নানা ধরনের বিরল প্রাকৃতিক ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে। দেশে দেশে এ পরিবর্তন টের পাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। জীবদ্দশায় যা দেখেননি কেউ তেমন প্রাকৃতিক বিস্ময়কর পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছেন তারা। মরুভূমিতে বৃষ্টির কারণে বন্যার খবর নিশ্চয়ই সচরাচর পাওয়া যায় না। কিন্তু হচ্ছে তাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা তারা গত এক দশক ধরে জোরেশোরে বলে আসছেন, সতর্ক করছেন সবাইকে। প্রকৃতি কীভাবে বদলে যাচ্ছে তার প্রমাণ এই বৃষ্টিপাত। সম্প্রতি মরক্কোর দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে সাহারা মরুভূমির কিছু অংশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আকস্মিক তুমুল বৃষ্টিতে এ ধরনের বন্যা বিস্ময়কর ও বিরল বলে মানছেন আবহাওয়াবিদরা। মরক্কোর আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা হুসেইন ইয়াবেব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বক্তব্যে জানান, ‘গত ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এত কম সময়ে এত বেশি বৃষ্টি দেখা যায়নি। আমি নিজেও হতবাক।’ এই বৃষ্টিপাত মরুভূমির নিচে বিশাল ভূগর্ভস্থ পানির স্তরগুলো পুনরায় পূরণে সহায়তা করবে। এই পানির ওপর মরুভূমির বিভিন্ন সম্প্রদায় নির্ভরশীল। উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১২টি দেশে ৯০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাহারা মরুভূমি বিস্তৃত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানে চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ভবিষ্যতে এই এলাকায় ব্যাপক ঝড় ও বন্যার মতো বিষয়গুলো নিয়মিত হয়ে উঠতে পারে। নাসার কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি অনুযায়ী, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে শুকিয়ে থাকা জাগোরা ও টাটা এলাকার মধ্যে অবস্থিত ইরিকুয়ি নামের হ্রদটি এখন পানিতে ভরে গেছে।
মরক্কো সরকার জানায়, সেপ্টেম্বরে দুই দিনের বৃষ্টিপাত বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি হয়েছে। টাটা এলাকাসহ এই অঞ্চলে বার্ষিক ২৫০ মিলিমিটারের (১০ ইঞ্চি) কম বৃষ্টিপাত হয়। তবে রাজধানী রাবাত থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) দক্ষিণে তাগোউনিত গ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের (৩.৯ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত মাসে মরক্কোর বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর আগের বছরে সেখানে ব্যাপক ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। এর মধ্যেই চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে মরক্কোয় বাঁধ দিয়ে তৈরি জলাধারগুলো সব পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এমন বৃষ্টিপাতকে আবহাওয়াবিদরা বহির্মুখী ঝড় বলে অভিহিত করেছেন। এমন পরিস্থিতি আগামী মাস ও বছরগুলোতে এই অঞ্চলের আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারে।
সৌদির মরুভূমিজুড়ে বেগুনি ফুল
সৌদির মরুভূমিজুড়ে ফুলের এমন বাহার কে দেখেছেন কবে? তুমুল বৃষ্টির পর পুরো চেহারাটাই যেন পাল্টে গেছে। রুক্ষ, শুষ্ক মরুভূমিতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। তপ্ত বালু ফুঁড়ে বের হয়েছে লেভেন্ডার। এমন বিরল দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসতে শুরু করেন। ক্যামেরাম্যানরা সে ছবি তুলে ছেড়ে দেন ইন্টারনেটে। হালের ইনস্টাগ্রামে ছবিগুলো জুড়ে দিয়ে তারা লিখেছেন অবিশ্বাস্য সুন্দর! কেউ বলেছেন এ যেন দুনিয়ার বুকে বেহেশতের বাগিচা! বাড়িয়ে বলেছেন কি? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সেখানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে এমন প্রশ্ন করেছেন। সৌদি আরবের বাসিন্দা মুহাম্মাদ আল-মুতাইরি। ছয় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ইরাক সীমান্তের কাছাকাছি রাফহা শহরে পৌঁছেন তিনি। ফুলেল মরুভূমি দেখে জানান, সৌদি আরবে এমন দৃশ্য কেউই আশা করেন না। বেগুনি ফুলগুলো সৌদি আরবে ওয়াইল্ড ল্যাভেন্ডার বা বুনো ল্যাভেন্ডার নামে পরিচিত। তিনি বলেন, এই সুগন্ধ ও দৃশ্য আত্মাকে সতেজ করে তোলে। রাফহা শহরের চারপাশে ধু-ধু মরুভূমিতে এখন যতদূর চোখ যায় কেবল বেগুনি ফুলের সমারোহ। আরেক পর্যটক বলেন, এই দৃশ্য বছরে ১৫ থেকে ২০ দিন থাকে। সূর্যের তাপে তারপর ফুলগুলো শুকিয়ে যায়। রঙিন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেশ আয়োজন করেই এসেছেন তিনি। মরুভূমির মধ্যে তাঁবু টানিয়ে একপাশে আগুন জ্বালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গরম চা পান করছেন। সৌদির মরুভূমিতে ফুল দেখতে সুদূর কাতার থেকে উড়ে এসেছেন আবদুল রহমান আল-মারি। এমন পর্যটকের সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এ ফুল ফোটার ঘটনা বিরল। বৃষ্টিপাত ও বন্যা কারণে তাপমাত্রা কমে আসা ও ফুল ফোটার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
হাজার বছর বয়সি গাছ
মরুভূমির বুকে যেমন প্রাণী বৈচিত্র্যের শেষ নেই তেমনি গাছের ক্ষেত্রেও। অদ্ভুত প্রজাতির সব গাছ মরুভূমির বুকে টিকে আছে। এগুলোর বেশির ভাগই কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মরুভূমিতে নিয়মিত বৃষ্টি হয় না তাই এ গাছগুলো খুব অল্প পানি পেয়েও বেঁচে থাকার বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ। মরুভূমির অনেক বিচিত্র গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ওয়েলউইসিয়া মাইরেবিলস বেশ কৌতূহল জাগানো। এর কারণ আর কিছুই নয়।
এটি দেখতে ছাইয়ের মতো। মনে হবে গাছটি মরে গেছে বহু আগেই। রোদে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া পাতা দেখে এটিকে সজীব ভাবার কোনো কারণই নেই। অথচ এ গাছটি শুধু জীবিতই নয়, এভাবেই টিকে থাকে বছরের পর বছর। মরুভূমির এ আশ্চর্য গাছটিকে নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল লম্বা গবেষণা পরিচালনা করে। জেনে অবাক হতে হয়, এ গাছটি প্রায় ১৫০০ বছর বেঁচে থাকতে পারে। গাছটি মাটির নিচে জমে থাকা খুব সামান্য পানি টেনে নিয়ে আসতে পারে বলেই এত দীর্ঘ জীবন লাভ করে। মরুভূমির কঠিন ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় এ গাছটি বেশ মানিয়ে নিয়েছে।
মরুভূমির জাহাজ
মরুভূমিতে অনেক বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীর দেখা মিললেও উটের কথা আলাদা করে বলতে হয়। উটকে বলা হয় মরুভূমির জাহাজ। মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই মরুভূমি পাড়ি দিতে উটের ওপর নির্ভরশীল। মরুভূমির কঠিন পরিবেশে উট কীভাবে টিকে থাকে এটি কয়েক যুগ আগেও রহস্য ছিল। আসলে মরুভূমি অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকে। আবার সেখানে পানি পাওয়াও খুব সহজ ব্যাপার নয়। তাই উটকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ পানি ছাড়া থাকতে হয়। পানি ছাড়া থাকতে হয় বলে উটের তেমন বড় রকমের কোনো সমস্যা হয় না। পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য উটের দেহে রয়েছে এক আশ্চর্য ব্যবস্থা। গরমের সময় না ঘেমেই দেহের তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করাতে পারে এরা। হয়তো দিন শুরু করল ৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট দিয়ে, আর শেষে তাপমাত্রা দাঁড়াল ১০৫ ডিগ্রি। তাপমাত্রা খুব বেশি উঠে গেলে তখনই কেবল উট ঘামতে থাকে। এতে উটের শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। উটের পশম উটকে মরুভূমির অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করে। তাদের মরুভূমির বালুতে হাঁটতে কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ উটের চওড়া পায়ের নিচ উটকে বালুতে হাঁটতে সাহায্য করে। উটের দেহ মরুভূমিতে টিকে থাকার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। অনেকেই বিশ্বাস করেন, উটের কুঁজে পানি থাকে। আসলে কিন্তু তা নয়। উটের কুঁজে যে পদার্থ জমা থাকে, যা পরে উট খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।
নীল মানুষের চমকপ্রদ তথ্য
মরুভূমিতে ছুটে চলা মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। যাযাবরদের বড় একটি অংশই মরুভূমির বুকে অবস্থান করে। এ যাযাবরদের নিয়ে অনেক গবেষণা করা হলেও এখনো অনেকটাই জানা বাকি। খুব বেশি দিন হয়নি এমনি এক যাযাবর দলের সন্ধান পাওয়া যায় উত্তর আফ্রিকার সাহারায়। এদের নীল রঙের প্রীতি চোখ এড়ায়নি গবেষকদের। পুরুষ, নারী সবাই নীল রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। এ কারণে এ যাযাবর মানুষদের নীল মানুষ নামেই ডাকা হয়। এরা আসলে তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের মানুষ। নীল মানুষদের সমাজ বিশ্লেষণে বেশ চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে। তুয়ারেগ নামের এ উপজাতি সম্প্রদায়ের পুরুষেরা সারা শরীর ঢেকে যায় এমন ভারী পোশাক পরলেও নারীদের ক্ষেত্রে এতটা বাধ্যবাধকতা দেখা যায় না। পরিবারের দেখাশোনা ও সম্পদেও মেয়েদের কর্তৃত্বই শেষ কথা। গবেষকরা দাবি করেন, চতুর্দশ শতাব্দীর রানি তিন হিনানের মাধ্যমে এ উপজাতি গোষ্ঠীর সূচনা হয়েছে। এখানকার পুরুষরা ‘সাহারার নীল মানব’ নামে পরিচিত। যাযাবর পুরুষরা নীল রঙের ভারী পোশাক পরে সারা শরীর ঢেকে রাখে। এমনকি মুখও ঢেকে রাখে। ফটো সাংবাদিক হেনরিয়েতা বাটলার ২০০১ সালে মরু অঞ্চলে প্রথম এ ধরনের উপজাতির দেখা পান। তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে অনেকেই ভুল তথ্য উপস্থাপন করে থাকেন। যেমন এদের গায়ের রং নীল। বাস্তবে অনেক কালো চামড়ার মানুষও এ যাযাবর দলে রয়েছে। নাইজার, মালি, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কো, লিবিয়া অঞ্চলেরও অনেকে এ যাযাবর দলে রয়েছে। এদের আনুমানিক সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন।
মরুভূমির বুকে থাকা রহস্যগুলো মানুষকে সব সময়ই টেনেছে
পৃথিবীর বিচিত্রতার শেষ নেই। এখনো অনেক রহস্যে ডুবে আছে মানুষ। এগুলোর কোনোটির সমাধান হলেও এখনো বহু রহস্য রয়ে গেছে যেগুলোর হয়তো সমাধান আদৌ পাওয়া যাবে না। আকাশ, সমুদ্র আর মরুভূমির বুকে থাকা রহস্যগুলো মানুষকে সবসময়ই টেনেছে। পৃথিবীর পরিচিত মরুভূমির কথা বললে অনেকেই হয়তো বলবেন, সাহারা, তাকলামাকান, গোবি, কালাহারি- এসব মরুভূমির কথা। কিন্তু এমনও কিছু মরুভূমি আছে যেগুলোর বুকে লুকিয়ে থাকা রহস্যগুলো মানুষকে যুগ যুগ ধরে আকৃষ্ট করেছে। এই মরুভূমিগুলো প্রত্যেকটির একেক বিচিত্রতা রয়েছে। সালার ডে ইউনি বা নামিবের মতো মরুসাগরে আবহাওয়ার খেয়ালখুশির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃতি তার বর্ণময়তা নিয়ে কত সুন্দরভাবে হাজির হয়েছে। আবার কোথাও বালুর মধ্যে সূর্যের আলো এমনভাবে প্রতিফলিত হয় যে, মরুভূমি হয়ে ওঠে আয়না, কোনো বালুর সমুদ্র আবার হিংস্র পশুদের আস্তানা। পৃথিবীর যেসব জায়গায় বছরে গড়ে ২৫০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টিপাতের চেয়ে বাষ্পীভবন বেশি হয়, তাকেই আমরা বলি মরুভূমি। পৃথিবীর দীর্ঘতম মরুভূমি সাহারা আয়তনে এত বড় যে, তার মধ্যে গোটা ইউরোপ মহাদেশটাই ঢুকে যেতে পারে। এই মরুভূমিতে একটু দূরে দূরেই দেখা যায় স্যান্ড ডিউনস (বালির স্তূপ)। উচ্চতম স্তূপটি ৯০ মিটার উঁচু। শুষ্ক সাহারায় দিনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও বেশি থাকে। এই বালির সমুদ্রেও বেশ কিছু অংশে খরা প্রতিরোধকারী গাছ লাগিয়ে চাষবাস করা হচ্ছে। ৫০০-এরও বেশি প্রজাতির গাছের সমাবেশ রয়েছে এখানে। আফ্রিকার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মরুভূমি কালাহারি। সমুদ্র থেকে তিন হাজার মিটার উঁচু এই মরূদ্যান সাহারার মতো শুকনা নয়, কিছু অংশে ভালোই বৃষ্টিপাত হয়। আফ্রিকার অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট কালাহারি বিখ্যাত তার অ্যানিমেল সাফারির জন্য। এখানকার আদিবাসী বুশম্যানরা প্রায় ২০ হাজার বছর ধরে মরুভূমিতে বসবাস করছে। আফ্রিকার দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত নামিব মরুভূমি সাহারার মতো বড় না হলেও বৈচিত্র্যময়। এর ৩০০ মিটার উঁচু সসুভেলই স্যান্ড ডিউনটি পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম। শুধু তাই নয়, নামিবই একমাত্র মরুভূমি যেখানে হাতির দেখা মেলে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় মরুভূমি গোবি ও চীনের বৃহত্তম মরুভূমি তাকলামাকানের তাপমাত্রা কখনো মাইনাস ২০ ডিগ্রির নিচে, তো কখনো ৪০ ডিগ্রিরও উপরে থাকে। দুই জায়গায়ই প্রচন্ড তুষারপাত হয়। রয়েছে আটাকামা। পেরু থেকে চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত আটাকামা মরুভূমির যে অংশটুকু চিলির অন্তর্ভুক্ত, তা পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চল। এর কোনো কোনো অংশে প্রায় ৪০০ বছর ধরে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। বলিভিয়ার সালার ডে ইউনি পৃথিবীর দীর্ঘতম লবণাক্ত মরুভূমি। এখানে প্রায় ১০ বিলিয়ন টন লবণ সঞ্চিত আছে এবং বছরে ২৫ হাজার টন লবণ এখান থেকে তুলে নেওয়া হয়।
অদ্ভুত সমাধিস্থল
মরুভূমির বুকে মানুষ সভ্যতার প্রসার করেনি। কিন্তু তবুও যুগে যুগে মানুষ মরুভূমির বুকে হেঁটে চলেছে। মরুভূমির ভিতর দিয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো ছিল জীবনবাজি রেখে শহর পাড়ি দেওয়ার শামিল। অনেকে আবার প্রাণভয়ে এই পথ দিয়ে পালিয়ে গেছে। মরুভূমিতে তাই মানুষের সলিল সমাধির ঘটনা নেহাতই কম নয়। তবে মরুভূমির বুকে যদি সুবিশাল সমাধিস্থলের দেখা পাওয়া যায় তবে বিস্মিত হতেই হয়। এমনই এক সমাধিস্থলের দেখা মেলে ২০০৫ সালে। তুতেন খামেনের সমাধিস্থলের পাশেই
পাওয়া যায় আরেকটি সমাধিস্থল।
সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে ভিতরে ঢোকে। কিন্তু কিছু কফিন ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি কবরটিতে। কোনো মানুষের দেহও নয়। কফিনগুলো পাত্র, অলঙ্কারসহ নানারকম জিনিসে ভর্তি
থাকলেও একটার ভিতরে ছিল আরেকটি কফিন। মনে করা হয় তখনকার কবর চোরদের থেকে বাঁচতে এই নকল কবর বানানো হয়েছিল। তবে এটি রাজকীয় সমাধিস্থল বলেই ধারণা করা হয়।
মরুভূমির অনেক কিছুই এখনো আজানা
মরুভূমির সবটা আমাদের জানা হয়নি। এখনো নিত্যনতুন আবিষ্কার আমাদের চমকে দেয়। চমকের একটি সিরিয়ায় পাওয়া ধ্বংসাবশেষ। সিরিয়া মরুভূমিতে পাওয়া এই ধ্বংসাবশেষের বয়স পিরামিডের চেয়েও বেশি। মিসরীয় সভ্যতারও আগের কোনো সভ্যতার পরিচয় বহন করা এই ধ্বংসাবশেষ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। এই ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মেলে ২০০৯ সালে। রবার্ট ম্যাসন সিরিয়ায় মরুভূমিতে কাজ করছিলেন। হঠাৎ কিছু দালান কোঠার নজির আর নানারকম ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন তিনি। গিজার পিরামিডের বয়স ৪ হাজার ৫০০ বছর। আর এই ধ্বংসাবশেষের বয়স হিসাব করা হয় ৬ থেকে ১০ হাজার বছর। বেশ কিছ ুদিন খোঁড়াখুঁড়ি চলে সেখানে। তবে আজ পর্যন্ত জানা যায়নি মরুভূমির ভিতরে কে এমন দালান-কোঠা বানিয়েছিল আর কেন সেটা নষ্ট হয়ে গেল। এখানে দেখা পাওয়া যায় ‘ডেজার্ট কাইটস’। রয়েছে পাথুরে ফাঁদ। অনুমান করা যায়, হিংস্র প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা শেষ চেষ্টা চালিয়েছিল।
রহস্যাবৃত্ত ফেইরি সার্কেল রয়েছে নামিবিয়াতে
রহস্য বৃত্ত বা ফেইরি সার্কেল রয়েছে নামিবিয়াতে। নামিবিয়ার প্রত্যন্ত এক মরুভূমিতে পথ চলতে গিয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যান পর্যটকরা। কারণ আর কিছুই নয়। সেখানে দেখা মিলল বালুর ছোট ছোট বৃত্ত। কোনো কারণ ছাড়াই কেন এই মরুভূমির বালুকণা সম্মিলিতভাবে এই বৃত্তাকার ধারণ করে আছে সে এক অমীমাংসিত রহস্য। ২ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারা এই গোলাকৃতির জিনিসগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ফেইরি সার্কেল। কারণ এই সার্কেল বা চক্রের প্রান্তে এক ধরনের ঘাস জন্মাতে দেখা গেলেও এর মধ্যখানে কোনো ধরনের গাছ, ঘাস বা কোনো কিছুই জন্মায় না। এমনকি অনেক যত্ন ও সার পাওয়ার পরেও না। বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত প্রাকৃতিক এই গোল চক্রগুলোর কোনো রহস্য ভেদ করতে পারেননি। এদের বয়স সর্বোচ্চ ৭৫ বছর হয়ে থাকে। ৭৫ বছর পর এমনিতেই অদৃশ্য হয়ে যায় গোল চক্রগুলো। তবে তার আগে কি করে এগুলোকে নেই করে দেওয়া যায় সেটা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে সবার কাছে। নামিবিয়ার মরুভূমির এক হাজার ৮০০ কিলোমিটারজুড়ে এদের দেখা পাওয়া যায়।