দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম নগর, ১৬টি উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি লাপাত্তা হয়ে গেছেন। জনপ্রতিনিধিরা লাপাত্তা হওয়ায় কার্যত ভেঙে পড়েছে স্থানীয় সরকারের প্রায় সব স্তর। উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধিরা না থাকায় বেকায়দায় পড়ছেন নাগরিকরা। জন্ম সনদ, জাতীয়তা, ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে কাউকে পাচ্ছে না তারা। ফলে চরম বেকায়দায় নাগরিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার পতনের পর থেকে লাপাত্তা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়াও নগরীর ৪১ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের বেশিরভাগই প্রকাশ্যে আসছেন না। ফলে নগর ভবনের দৈনন্দিন কার্যক্রমে গতি নেই। একইসাথে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলররা না থাকায় নাগরিকরা জরুরি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বক্তব্য জানতে সিটি মেয়র রেজাউল করিমকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাউন্সিলর জানিয়েছেন, তারা নগরে থাকলেও নিরাপদ থাকার চেষ্টা করছেন। আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে তারা ওয়ার্ড ও সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে আসবেন। নাগরিকরা যে ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছেন সেটাও স্বীকার করছেন তারা।
এদিকে, চট্টগ্রামের ১৬ আসনের এমপিদের পাশাপাশি বেশিরভাগ উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের এখনো প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করলেও অনেকেই এখনো পর্যন্ত দেশে আছেন। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা উপজেলা পরিষদে যাওয়া নিরাপদ মনে করছেন না।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত উত্তর চট্টগ্রামের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সব সময় মানুষের জন্যই রাজনীতি করেছি। সকলের সহাবস্থান চেয়েছি। কিন্তু দলীয় অনেক বিষয় থাকে। যেগুলোতে চাইলেও হস্তক্ষেপ করা যায় না। আর যেহেতু আমাদের দলীয় প্রধান দেশের বাহিরে, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের একের পর এক গ্রেফতার করছে, আমরা কিভাবে নিরাপদ বোধ করব।’
অন্য একজন উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এলাকার মানুষ ফোন করছে। এলাকায় ফিরতে বলছে। এমনকি অন্য দলের লোকজনও। কিন্তু সরকার পতনের পর এক শ্রেণীর নব্য রাজনীতিকের জন্ম হয়েছে। তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী বলে দাবি করছে। মানুষজনকে হেনস্থা করছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ না করলে কিভাবে এলাকায় যাব?’
অন্যদিকে ইউনিয়ন পর্যায়েও ভেঙে পড়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। চট্টগ্রামের বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা। অনেক এলাকায় ঠিকাদাররাও লাপাত্তা হওয়ায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলার ৬ নং ইছাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘সম্পত্তি সংক্রান্ত কাজে জরুরি ভিত্তিতে একটি ওয়ারিশ সনদ দরকার। গত তিন দিন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি। নির্দিষ্ট ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সবকিছু পূরণও করেছি। কিন্তু চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়া ওয়ারিশ সনদ সম্পূর্ণ হচ্ছে না।’
জানা গেছে, মেয়র থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সমর্থিত প্রার্থী হওয়ায় অজানা আতঙ্কে তারা নিজের এলাকা থেকে দূরে অবস্থান করছেন। অনেকে দেশের চলমান পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার অতীতে প্রভাব বিস্তার করায় এই পরিস্থিতিতে এলাকায় যাওয়া অনিরাপদ মনে করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত