রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সকলে মিলে সমতা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা ও পরিকল্পনায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন। নতুনভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের এই যাত্রায় প্রাধান্য দিতে হবে বৈষম্যের শিকার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দাবিকে।
গতকাল অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় সংলাপে আদিবাসী, প্রতিবন্ধী সমাজ প্রতিনিধি, যৌনকর্মী সমাজের অধিকার কর্মী, যুবক এবং নারী অধিকার কর্মী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক, জলবায়ু কর্মী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, দলিত-হরিজন সম্প্রদায়সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ২০ জনের অধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু হয়। পরে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা তাদের জীবনের প্রতিবন্ধকতা ও রাষ্ট্র সংস্কারে নিজেদের আকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ করেন।
বক্তারা বলেন, জাতীয় উন্নয়নে নারীদের কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করা, প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকারি সেবাসহ কর্মক্ষেত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি, দলিত-হরিজন ও যৌনকর্মীদের সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আদিবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করাসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আকাক্সক্ষার মূল্যায়ন ও সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জেন্ডার সংবেদনশীল ও ন্যায্যতার সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়তে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নিশীথা জামান নিহা বলেন, আমরা ছাত্র-জনতা একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা যদিও অস্থায়ীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছি কিন্তু এখনো উদযাপন করতে পারছি না, কারণ আমাদের দেশের বিভিন্ন খাতে এখনো বৈষম্য বিদ্যমান। সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এখনো অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। এখানে সবার জন্য আলোচনার সমান সুযোগ থাকবে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি পুচাইনু মারমা বলেন, চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। যদিও কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো তৈরি করা হয় কিন্তু সেখানে সেবা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধান না করলে আমরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছি তা সমাধান হবে না।
যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা বলেন, আমরা যৌনকর্মীদের জন্য ন্যায়বিচার চাই। সম্প্রতি আমরা সহিংসতার শিকার হচ্ছি। আমরা নিরাপত্তা ও আইনের শাসন চাই। হামলাকারীদের বিচার চাই।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমেরী হক বাঁধন বলেন, আমি অভিভাবকত্ব এবং উত্তরাধিকার আইনে সংস্কার চাই, যাতে বৈষম্য না থাকে এবং আইনগুলো যাতে বর্তমান সময়ে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আমি চাই সব পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের শিক্ষা দিক যে, তারা কীভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করতে পারে এবং কীভাবে অন্যদের অধিকার নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারে।
অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদ বলেন, আমরা এখন সাংবিধানিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈষম্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো পুরোটা করে যেতে পারবে না, তাদের শুরু করে যেতে হবে। কিন্তু শুরুটা হতে হবে সঠিক। যাতে পরবর্তীতে এই ধারায় তরুণদের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কারের সব কার্যক্রম বৈষম্যহীনভাবে চলতে পারে।