ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সব পদে সরাসরি নির্বাচনসহ কোটা বা মনোনীত প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।
গতকাল রাজধানীর ফজিলাতুন্নেছা কনভেনশন হলে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ আয়োজিত আগামীর এফবিসিসিআই শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তারা। সভায় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন রাজেশ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক হাফেজ হাজী মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ, হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, আমির হোসেন, মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, মাহবুবুল আলম রুনু, মেহেদী আলী, আনোয়ার হোসেন, টোয়াব সভাপতি রাফিউজ্জামান, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, এফবিসিসিআই সব সংগঠনের প্রাণ কেন্দ্র হবে। কোনো উৎসবের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হবে না। আমরা সংস্কার চাই, প্রথমে সংস্কার করতে হবে পরে নির্বাচন দিতে হবে। নমিনেটেড প্রথা বাতিল করতে হবে। তারা আরও বলেন, দুই বছর পর কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। নতুন নেতৃত্ব আসবে। তাহলে এফবিসিসিআইয়ে গণতন্ত্রের চর্চা হবে। জিবি মেম্বারদের ভোটে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হবে। এফবিসিসিআইয়ে জিবি মেম্বারদের মূল্যায়ন করা হয় না। তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ এফবিসিসিআই হবে জিবি মেম্বারদের আশ্রয়ের জায়গা। নতুন ভবনে অ্যাসোসিয়েশনের অফিস হবে।
সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন রাজেশ বলেন, আজকের এই আয়োজনের মূল বিষয়বস্তু আগামীর এবিসিসিআইয়ের। আপনারা সবাই জানেন, বর্তমানে ব্যবসাবাণিজ্যে মন্দাভাব যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে আমাদের ঋণ নিতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরিবারের সদস্যদের ফিঙ্গার দিতে হয়। অথচ বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আগে এসব মানা হয়নি। সহজ শর্তে তাদের ঋণ দিত। আমাদের এনবিআর, কাস্টমস থেকে হয়রানির স্বীকার হতে হয়। ভ্যাট, ট্যাক্স, কাস্টমস, এসএসকোডের নামে হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে চাই। সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা বলবেন না- এরকম ব্যবসায়ী সংগঠন আমরা চাই না।
তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক এফবিসিসিআই চাই। গত নির্বাচনে প্যানেল দিয়ে আমরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমরা যৌক্তিক সংস্কার চাই। ৪ কোটি ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমরা এফবিসিসিয়ের সংস্কার চাই। আমরা যৌক্তিক সংস্কার চাই। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ওপর গত ১৬ বছর যে প্রেশার ছিল, সেজন্য আমাদের হাড় কালো হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। যোগ্য ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের এখানে আসা উচিত।
আমরা আবার জেগে উঠব। কোনো না কোনোভাবে আমরা এগিয়ে যাব। দুর্নীতিবাজ রাজনীতি ও দুষ্টু আমলাদের কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, আমরা আর অনির্বাচিত কোনো পরিচালক এফবিসিআইতে দেখতে চাই না।
আমাদের সাড়ে ৪ কোটি ব্যবসায়ীর সংগঠন হলেও গত ১৫ বছর এফবিসিসিআই শুধু ৫০০ থেকে ৭০০ ব্যবসায়ীর প্রতিনিধিত্ব করেছে। এর ফলে গত ১৫ বছর এফবিসিসিআইয়ের তোষামোদের জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ ব্যবসায়ী দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করতে পেরেছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মেহেদী আলী বলেন, আমরা এক দরবেশের গুহা থেকে বের হয়েছি, আরেক দরবেশের গুহায় ঢুকতে চাই না। বিদেশ ভ্রমণের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ট্যাক্স পেয়ার হওয়ার পরও আমাদের কোনো সামাজিক নিরাপত্তা নেই। আমরা সরকারকে ৫ শতাংশ ট্যাক্স দিই। অথচ একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পেনশন পাচ্ছে। আমাদের কী আছে। আমরা আরও ৩ শতাংশ বেশি ট্যাক্স দিতে চাই। যাতে আমাদের টাকা থেকেই আমাদের পেনশন দেবে। আগামী নেতৃত্বে যারা আসবে তারা যেন এই বিষয়টা চূড়ান্ত করবেন। একই সঙ্গে আগামীতে আমরা সুন্দর একটা এফবিসিসিআই দেখতে চাই।
ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাহদাৎ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এফবিসিসিআইয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। নির্বাচন ছাড়া যেন কেউ নির্বাচিত হতে না পারে। এ পর্যন্ত যে কয়জন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন- সেগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে। আগামীতে যেন এটা না হয়। দেশ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে সেটা কি এফবিসিসিআই জানত না। তারাও জানত, কারণ তারা এই পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল।
টোয়াব সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, এফবিসিসিআইতে কোনো সিলেক্টেড, অটো সিলেক্টেড, কোটা নেতা চলবে না। জিবি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত সদস্যরাই এফবিসিসিআইয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন। প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের আমরা বেশি সেট চাই না। যারা ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের কাজ করবে। ব্যক্তি বিশেষ কাজ করবে না। দুবারের পর কেউ যেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন না করতে পারে সে বিষয়টি দেখতে হবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, আমরা এফবিসিসিআইয়ের সংস্কার চাই। গত ১৬ বছর ভোট প্রদানের সুযোগ ছিল না ব্যবসায়ীদের। আমাদের সবার মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। ঐক্য নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।