রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ফেনী কলেজের সেই বদ্ধভূমিতে নির্মান হয়েছে সেফটি ট্যাংক!

ফেনী কলেজের সেই বদ্ধভূমিতে নির্মান হয়েছে সেফটি ট্যাংক!

বধ্যভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছে ফেনী কলেজের অনার্স ভবন! ভবনটির পেছনের অংশে সারি সারি লাশ যেখানে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল সেখানে নির্মান করা হয়েছে সেফটি ট্যাংক। স্থানটিকে সংরক্ষণ না করে ক্যাম্পাসের অন্যত্র করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বধ্যভূমি স্মৃতি স্তম্ভ।

ফেনী কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানে না ক্যাম্পাসে বধ্যভূমির কথা। কিছু শিক্ষার্থী বধ্যভূমির এই স্মৃতি স্তম্ভটিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত বিজয় স্তম্ভ হিসেবে জেনে আসছে। কেউ জানে না বধ্যভূমির প্রকৃত স্থানটি কোথায়। এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আক্ষেপের শেষ নেই।

১৯৭৩-১৯৭৫ সালে কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্র মিলনাগার সম্পাদক ও সাবেক ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মোতালেব ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ জানান, বধ্যভুমির উপরই নির্মান করা হয়েছে কলেজের অনার্স ভবন এবং সেফটি ট্যাংক। '৭১- এর এপ্রিল মাসে হানাদার বাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে ফেনীকে তাদের দখলে নিয়ে প্রথমেই ফেনী কলেজ ও পলিটেকনিকেল ইনষ্টিটিউট সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অবস্থান নেয়। ফেনী কলেজের এই স্থানটিতে তখন ছিল ফুটবল খেলার গোলবার। ফেনীতে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে ফেনী কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকরা। সেই প্রতিহিংসায় হানাদার বাহিনী কলেজ ক্যাম্পাসের এই স্থানটিকে তাদের টর্চার সেল বানিয়ে গন মানুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। এই স্থানটিকে সংরক্ষণ না করে ক্যাম্পাসের অন্যত্র করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।

মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের জানান, হানাদার বাহিনী কুটির হাট ব্রীজের উপর নিয়ে শত শত নিরাপরাধ সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি করে হত্যা করে জোয়ারের পানিতে ভাসিয়ে দেয়। সাংবাদিক নুরুল করিম মজুমদার জানান, শহরের দাউদপুর ব্রীজের নীচে এমন কোন দিন নেই যেদিন কোন না কোন বাঙ্গালীকে হানাদার বাহিনী মেরে মাটিতে পুতে রাখেনি। পরশুরামের নুরুল ইসলাম মজুমদার (বীর মুক্তিযোদ্ধা) জানান, মালিপাথর, চিথলিয়া, সালিয়া, বিলোনিয়া ও পরশুরাম কলেজ রোডের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণতো দূরের কথা আজও চিহ্নিত করা হয়নি। ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান জানান, জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য বধ্যভূমি রয়েছে তার মধ্যে ফেনী কলেজের বধ্যভূমিটি একমাত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পুরোপুরি সংরক্ষণ করা হয়নি।

স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হলেও মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে সরকার তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে জাতিকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করবে এমনটাই আশা করছে ফেনীর সকল মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ।

বিডি-প্রতিদিন/১৪ ডিসেম্বর ২০১৪/আহমেদ

সর্বশেষ খবর