বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গিয়ে নিহত রিকশাচালক কমর উদ্দিন খান বাঙ্গির (৪০) সংসার আর চলছে না। রিকশা চালিয়ে পরিবারের জন্য ভাত খাওয়ানোর মানুষটি না থাকায় অত্যন্ত করুণ অবস্থায় দিন পার করছেন। সহায় সম্বলহীন পরিবারের সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তা, তিনবেলা খাবার ও কমর উদ্দিন এর হত্যার বিচার চাইছেন।
নিহত কমর উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৪ আগস্ট বগুড়া শহরে সরকার পতনে বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র-জনতার একদফা আন্দোলনে অংশ নিতে বাড়ি থেকে সকালে বের হয়েছিলেন বগুড়া সদরের চক আকাশ তারা গ্রামের কমর উদ্দিন খান বাঙ্গি। বিকেলে এলাকার কয়েকজনের সাথে দেখা হয়। তারপর ফোন বন্ধ। খোঁজ করার এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায় তার মরদেহ পড়ে আছে বগুড়া শহরের নবাববাড়ী সড়কে। এরপর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পান স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। গোটা শরীরেই বুলেটবিদ্ধ ছিল।
নিহত কমর উদ্দিনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার। স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তান নিয়ে নির্বাক নিস্তব্ধ স্ত্রী তহমিনা আক্তার। গর্ভে রয়েছে ৭ মাসের সন্তান। ষাটোর্ধ্ব মা জমেলাও তাদের সংসারে। সহায় সম্বল বলে কিছুই নেই। আছে শুধু থাকার একমাত্র ঘর। বড় মেয়েটি কাজলীর বয়স এখন ১৭ বছর। ৭ বছরের ছেলে তৌহিদ স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়েন, ২ বছরের আব্দুল্লাহ এখনো মায়ের কোলে আর গর্ভে রয়েছে ৭ মাসের সন্তান। হতদরিদ্র পরিবারটি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে একেবারেই পথে বসেছেন।
নিহতের স্ত্রী তহমিনা আক্তার বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন, চোখে যেন অন্ধকার, তিন সন্তান আর গর্ভের সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই প্রশ্ন তার চোখে মুখে। পরিবারের নিরাপত্তা, তিনবেলা খাবার ও হত্যার বিচার চাইলেন সমাজের বিবেকবান ও সামর্থবানদের কাছে।
কমর উদ্দিনের মা জমেলা বেগম জানান, ছেলে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেও আর ফিরেনি। তার বুকে পিঠেসহ গোটা শরীরেই বুলেটবিদ্ধ ছিল। ছেলে আর ফিরবে না। ভাতও খাওয়াবে না। এখন কিভাবে জীবন চলবে সেই চিন্তাই অশ্রুসিক্ত হচ্ছেন বার বার। কমর উদ্দিনের বড় মেয়ে বিবাহযোগ্য, তাকে বিয়ে দিতে হবে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন কমর উদ্দিন। রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতো, এখন কি হবে, সেই চিন্তা তাদের।
এদিকে খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বগুড়া সদরের চক আকাশ তারা গ্রামের কমর উদ্দিন খান বাঙ্গির পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও সমবেদনা জানিয়েছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশাসহ নেতৃবৃন্দ। গত ১০ আগস্ট তাদের বাড়ি গিয়ে সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রিয় সদস্য ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন, বিএনপি নেতা সহিদ উন নবী সালাম, যুবদলের খাদেমুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম, কাউন্সিলর রুস্তম আলীসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।