রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেন শত শত কৃষক। গত বছর কফিতে কার্ডে বা ফুল না আসায় এবছর ভালো ফলনের আশা করেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে পচন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ফুলকপি ক্ষেত। আক্রান্ত গাছ থেকে ফুলকপি নষ্ট হতে শুরু করেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বালিয়াকান্দির কৃষকেরা।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় ১৬ হাজার ৩৭২ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। উপজেলায় ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে ১৮০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়।
আজ শনিবার সকালে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের হাতিমোহন, নটাপাড়া, গুপ্তলক্ষনদিয়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আগাম শীতকালীন সবজি পরিচর্যা করছেন কৃষকেরা। মাঠের পর মাঠ ফুলকপির চাষ হয়েছে। তবে বেশিরভাগ জমির ফুলকপির কার্ডে (ফুলে) পচন ধরেছে। ফুলকপির কার্ডে বা ফুল প্রথমে বাদামি রং এর গোলাকৃতি দাগ দেখা যাচ্ছে। অনেক কার্ডে বড় আকারে দাগ তৈরি হয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে কার্ডগুলোতে পচন ধরেছে। অনেক ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন কৃষকের রোপণকৃত সম্পর্ণ জমির ফুলকপি পচন রোগে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেত থেকে সেগুলো তুলে ফেলছেন কৃষকেরা। এছাড়া এই ইউনিয়নের কয়েক’শ কৃষকের জমির কফিও পচন রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জামালপুর ইউনিয়নের নটাপাড়া গ্রামের কৃষক কালিদাস বৈরাগী বলেন, আমি এবার ৮০শতাংশ জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। আবার সমস্ত জমির ফুলকপি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এই রোগ হয়েছে। এই মাঠের আমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমি ২লাখ টাকার কফি বিক্রি করতে পারতাম। আমি কোন ফুলকফি বিক্রি করতে পারিনি। গত বছর কফির বীজের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর এবার পতন রোগে শেষ হয়ে গেলাম।
একই গ্রামের কৃষক বিপুল বৈরাগী বলেন, ফুলকপি শুধু আমাদের এই মাঠেই হয়। এবার পচন রোগে বেশিরভাগ জমি আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগ কফির ফুলে পচন ধরে। পচনের এক সপ্তাহের মধ্যে ফুল আর গাছ পচে মাটিতে মিশে যায়। কোন ওষুধ দিয়ে পচর রোগ ঠিক করা যায় না। আমরা স্থানীয় দোকান থেকে দোকানির পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করি কিন্তু কাজ হয় না।
অতিবৃষ্টি, ভালো বীজের সংকট ও কৃষকদের প্রশিক্ষণের অভাবে প্রতি বছর আগাম শীতকালীন সবজিতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকেরা। এমন ক্ষতি অব্যাহত থাকলে কৃষকেরা ঋণগ্রস্ত হয়ে যাবেন বলে মত দেন বেশির ভাগ কৃষক। বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক কৃষকের জমিতে কার্ডপচা রোগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে দাবি তাদের।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতবছর বীজের কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। আমি চেষ্টা করে বীজ কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ এনে দিয়েছিলাম। এ বছর বেশ কিছু জমির ফুলকপি কার্ড পচন রোগ হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কত হেক্টর জমির কফি ক্ষতি হয়েছে আমরা সেই তথ্য সংগ্রহ করছি।
তিনি বলেন, বালিয়াকান্দির বেশির ভাগ কৃষক একই জমিতে বারবার এক ফসল চাষ করেন। জামালপুরের ওই অঞ্চলে আষাঢ় মাঘ মাস পর্যন্ত একই জমিতে তিনবার ফুলকপির আবাদ করেন। এই কারণে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষকেরা বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন যে কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকদের চাষাবাদ করার অনুরোধ কৃষি কর্মকর্তার।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল