শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

নারী ভোগ্যপণ্য নয়— বলেছে কোরআন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নারী ভোগ্যপণ্য নয়— বলেছে কোরআন

পৃথিবী যখন গভীর অন্ধকারে ডুবে ছিল, ‘মানবতা’ শব্দটি হারিয়ে গিয়েছিল পৃথিবী নামক ডিকশনারি থেকে; তখনই আলোর মশাল হাতে মানবতার বাণী নিয়ে নাজিল হলো ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন। কোরআন এসে প্রথমেই যে ঘোষণা করল তা হলো, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা সবাই সমান। হ্যাঁ! কেউ যদি নিজেকে আলাদাভাবে চেনাতে চায়, আর দশজন থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে চায়; তবে সে যেন ভালো কাজে, তাকওয়ার কাজে প্রতিযোগিতা করে। কোরআনের ভাষায়, ‘তোমরা তাকওয়া ও ভালো কাজে প্রতিযোগিতা কর।’ এভাবে কেউ যখন তাকওয়ার সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার সাধনা করবে তখনই সে হয়ে উঠবে শ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহর কাছে সে-ই বেশি মর্যাদাবান, যে তাকওয়ার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেছে।’

তাকওয়ার মানদণ্ড ছাড়া আর কোনো মানদণ্ডে কেউ কারও চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। আইয়ামে জাহিলিয়াতের সময় এটি ছিল একটি বৈপ্লবিক ঘোষণা। কারণ, তখন মানুষ নানান মানদণ্ড বানিয়ে ফেলেছিল একজন আরেকজন থেকে বড় হওয়ার জন্য। কেউ বংশ পরিচয়কে মানদণ্ড বানিয়েছিল, কেউ বানিয়েছিল অর্থ-সম্পদকে। এমনই একটি মানদণ্ডের নাম ‘পুরুষ হয়ে জন্মানো’। সেই সমাজে পুরুষ হয়ে জন্মানো মানেই নারীর চেয়ে বড় হয়ে ওঠা! এ ধারণাটিই ভেঙে দিয়েছে কোরআন। কোরআন স্পষ্টভাবে বলেছে, নারী-পুরুষ কোনো মানদণ্ড নয়। মানদণ্ড হলো তাকওয়া এবং ভালো কাজ। তখন মনে করা হতো, ভালো কাজের পুরস্কার শুধু পুরুষের জন্যই নির্ধারিত। নারীর জন্য কোনো পুরস্কার-প্রতিদান নেই। এ ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে কোরআন ঘোষণা করেছে, ‘নারী কিংবা পুরুষ ভালো কাজ যে-ই করুক, তাকেই সুন্দর-সুখী জীবন দান করব। আর তাদের জন্য আরও বেশি প্রতিদান আছে তাদের প্রতিপালকের কাছে।’ এমনিভাবে নারীর উত্তরাধিকার আইন, নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক এবং পারিবারিক বিষয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলেছে ইসলাম। তখনকার সময়ে পুরুষ যত খুশি বিয়ে করত। শুধু তাই নয়, নারীকে ভোগের পর তার দায়দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি চিন্তাও করত না তারা। ইসলাম বলেছে, নারী কোনো ভোগ্যপণ্য নয়। তার থেকে উপকার পেতে হলে যোগ্য মর্যাদা ও মূল্য দিয়েই পেতে হবে। ভাবতে পারেন, যেখানে নারীর কোনো অর্থনৈতিক অধিকারই ছিল না, সেখানে নারীকে বিয়ে করার জন্য মোহর ফরজ করে দেওয়া হয়েছে। তখনকার সময়ে এটা সত্যিই খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল। কোরআন বলে দিয়েছে, এভাবে যখন-তখন নারীকে বিয়ে করা ও তাকে বিদায় করা যাবে না। বিদায়ের সময়ও তাকে কোনো কষ্ট দেওয়া যাবে না। সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘তাকে যদি ছেড়ে দাও তবে ভদ্রোচিতভাবে যেতে দাও। কোনো ধরনের অভদ্রতা-অসৌজন্যমূলক ব্যবহার তার সঙ্গে করতে পারবে না।’

ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে একটি বড় অভিযোগ হলো কোরআন নাকি বলেছে পুরুষ চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পারবে। বিষয়টি ঠিক তেমন নয় যেমন বলা হয়। সে সমাজে মানুষ দেদার বিয়ে করত। কোরআন বলেছে, এভাবে হিসাব ছাড়া বিয়ে চলবে না। একটি বিয়ের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখো। তবে যদি অগত্যা বিয়ে করতেই হয় তবে চারটি পর্যন্ত করতে পারবে। এর বেশি করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর মাত্র একটি ধর্মগ্রন্থই পুরুষের বিয়ের সংখ্যায় লাগাম পরিয়েছে, তা হলো আল কোরআন। কোরআন বলেছে, একটি বিয়েই কর। তার পরও যদি প্রয়োজন হয়, যেমন স্ত্রী অসুস্থ কিংবা সন্তানধারণে অক্ষম অথবা এ রকম কিছু তাহলে তুমি দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবতে পারো। এভাবে সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি আছে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া একের অধিক বিয়ে কোনোভাবেই উচিত নয়। তাই তো দেখি, ৯৯ ভাগ মুসলমানই একটি বিয়ের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছেন। আর যারা কোরআনের নির্দেশের বাইরে গিয়ে প্রয়োজন ছাড়াও একাধিক বিয়ে করছেন তাদের ঘরে অশান্তি লেগেই আছে। সব শেষে বলতে চাই, বর্তমান পৃথিবীতে আবার সেই জাহেলি সমাজের মতো নারীরা অমর্যাদার জীবনযাপন করছেন। তাদের মানুষ নয়, ভোগ্যপণ্যের চোখে দেখছে আধুনিক পৃথিবী। তাই আমাদের কর্তব্য হলো, ইসলাম নারীর যে সম্মান-মর্যাদা দিয়েছে সেই হারানো সম্মান-মর্যাদা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর