শিরোনাম
সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হোক কোরবানি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হোক কোরবানি

আর এক দিন পরই বিশ্ব মুসলমান একযোগে মেতে ওঠবে ত্যাগের উৎসবে। কোরবানির আনন্দে। অবশ্য এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে গরু কেনা, হাটবাজারে দৌড়ঝাঁপসহ নানান প্রস্তুতি। এ যে আমরা কোরবানি করছি, পশুর গলায় ছুরি বসিয়ে রক্ত ঝরাচ্ছি, কেন করছি বলুন তো? অনেকেই বলবেন, আল্লাহর হুকুম পালন করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য।

কিন্তু আল্লাহতায়ালা কি আমাদের এ কোরবানি দেখে খুশি হচ্ছেন? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘লান ইয়ানালাল্লাহা লুহুমুহা ওয়ালা দিমাউহা ওয়ালাকিয়্যানা লুহুত্তাকওয়া মিনকুম। আমার আদরের বান্দারা শোনো! তোমরা যে এত দৌড়ঝাঁপ করে পশুর রক্ত ঝরাচ্ছো, আমার কাছে কিন্তু এ রক্তমাংস কিছুই পৌঁছে না। পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া’ (সূরা হাজ্জ : ৩৭)।

তাকওয়ার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্যই আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদিকে কোরবানির হুকুম দিয়েছেন। কোরবানি এমন একটি ইবাদত, এখানে খুব সহজেই রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছার সুযোগ আছে। মানুষকে দেখিয়ে গরু কিনতে হয়। পশুর গলায় ছুরি চালানোর সময়ও মানুষ থেকে আড়াল হওয়ার সুযোগ নেই। আবার সেই পশুর গোশত দান করার সময় সবাইকে দেখিয়ে দান করতে হয়। এই যে, সবাইকে দেখানোর এত আয়োজন, এর মধ্যেই আসল পরীক্ষা। আমি যখন মানুষকে দেখিয়ে কোরবানি করছি, গোশত বণ্টন করছি, তখন কিন্তু আল্লাহতায়ালা আমার অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছেন, বান্দার মন কোনদিকে ঘুরছে? বান্দা কী মানুষকে দেখানোর জন্য কোরবানি করছে নাকি তার মন আমার দিকে স্থির রেখেছে?

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইন্নাল্লাহা লা য়ানজুরু ইলা সুয়ারিকুম ওয়ালা ইলা আমওয়ালিকুম ওয়ালা কিন ইয়ানজুরু ইলা কুলুবিকুম। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের কাজ কিংবা বাহ্যিক কিছু দেখেন না। তিনি তাকিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তরের দিকে। তোমরা যখন কোনো কাজ কর, তখন তা কার উদ্দেশ্যে কী নিয়তে করছ, তিনি তা পর্যবেক্ষণ করেন।’ আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়্যাত। মানুষের প্রতিটি কাজ তার উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে। ভালো উদ্দেশ্যে কাজ করলে সে ভালো ফল পাবে। আর খারাপ উদ্দেশ্যে কাজ করলে সে খারাপ ফল পাবে।’

খুব দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয়, কোরবানি এলে আমাদের সমাজে এক ধরনের ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কে কত বড় পশুর রক্ত ঝরাতে পারবে, কার গরুতে কত বেশি গোশত হয়েছে, গরু কিনে ঠগ হলো না জিত হলো—এসব আমাদের নিত্যচর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। আমার প্রতিবেশী থেকে কম দামের গরু কোরবানি দিলে আমরা নিজেদের জন্য অপমান মনে করি। আবার পরিচিত কারও থেকে বেশি দামের পশু কিনলে গর্ববোধ করি। এক কথায় বলতে গেলে, আমাদের কোরবানি তাকওয়ার চেয়ে লোক দেখানোর প্রবণতাই থাকে বেশি। সূরা মাউনে আমাদের সম্পর্কেই আল্লাহ বলেছেন, ‘ফাওয়াইলুল্লিল মুসাল্লিন। আল্লাজিনাহুম আনসালাতিহিম সাহুন। ধ্বংস ওইসব লোক দেখানো ইবাদগোজার মানুষগুলোর জন্য। যারা ইবাদত করে অন্য মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে।’

পাঠক ভাই, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা কোরবানি যেন আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে না আনে সে দিকে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘ভালো ও মঙ্গলকাজে প্রতিযোগিতা কর।’ আমরা অবশ্যই চাইব, আল্লাহর রাস্তায় দামি পশুটি কোরবানি করার জন্য। বেশি বেশি মানুষকে গোশত বিলিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু যে কথাটি মনে রাখতে হবে তা হলো, আমাদের এই দামি পশু কিংবা গোশত বিলানোর দৃশ্য কিন্তু আল্লাহর ক্যামেরায় ধরা পড়বে না। ধরা পড়বে ওই মুহূর্তে আমার আপনার মনের চিত্র। তো আমরা যদি বড় পশু কোরবানি করেও মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো গর্ব-অহংকার-রিয়া না করি তবে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করবেন। আর রাসুল (সা.) এর সেই বাণী আমাদের বেলায় অক্ষরে অক্ষরে সত্য হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে আগেই আল্লাহতায়ালা বান্দার কোরবানি কবুল করে নেন। আর কেয়ামতের দিন এই পশুর পিঠে চড়েই বান্দা পুলসিরাত পার হবে।’

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শুদ্ধ কোরবানি করার তাওফিক দিন। আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে আমরা যা কিছুই কোরবানি করি, হে আল্লাহ, আপনি তা কবুল করে নিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসিসর সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর