দেশে এখন জোর আলোচনা চলছে সংবিধান সংশোধন নিয়ে। এক পক্ষ বলছে নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে এবং সেজন্য সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান লিখতে হবে। আবার আরেক পক্ষ বলছে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হবে, যার জন্য বর্তমান সংবিধানকেও সংশোধন করতে হবে। দুই দলের পক্ষেই প্রবল যুক্তি রয়েছে। এখন এ যুক্তিতর্ক খন্ডুনোর জন্য বর্তমান যে সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে সেই সরকার সংবিধান সংশোধন করার জন্য একটি কমিশন গঠন করে দিয়েছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই শপথ গ্রহণ করেছে যে, ‘আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব’। কাজেই অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংশোধনের যে প্রক্রিয়া তারা নিজেরাই শুরু করেছে তা আগামীতে যে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগে জটিলতা দেখা দিতে পারে তা অনস্বীকার্য।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৫ আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপ্লবের ফসল। এ সরকার অন্তর্বর্তী সরকার না হয়ে বিপ্লবী সরকার হলেই যথোপযুক্ত হতো। আমাদের অজ্ঞাত কারণে এ সরকার নিজেদের অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে চলমান সংবিধানের অধীনে পতিত সরকারের রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণ করে। যদিও সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিধান নেই। যাই হোক সেই বিতর্ক তুলে এখন কোনো লাভ নেই। জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নিয়েছে, তাই চলমান সময়ে এ সরকারের বৈধতা নিয়ে কোনো যুক্তিতর্ক ধোপে টিকবে না। তবে ভবিষ্যতে প্রতিকূল স্রোতে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেবে।
সংবিধান এমন কোনো ঐশ্বরিক কিতাব নয় যা মানুষ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধানের দশম ভাগে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা ১৪২ (ক) ও (খ)তে পরিষ্কারভাবে দেওয়া আছে। পাঠকের সদয় অবগতির জন্য সংবিধানের ১৪২ ধারাটি হুবহু নিচে উল্লেখ করা হলো :
‘১৪২। এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও- (ক) সংসদের আইন-দ্বারা এই সংবিধানের কোনো বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হইতে পারিবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, (অ) অনুরূপ সংশোধনীর জন্য আনীত কোনো বিলের সম্পূর্ণ শিরনামায় এই সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন করা হইবে বলিয়া স্পষ্টরূপে উল্লেখ না থাকিলে বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা যাইবে না; (আ) সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত না হইলে অনুরূপ কোনো বিলে সম্মতিদানের জন্য তাহা রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হইবে না; (খ) উপরি-উক্ত উপায়ে কোনো বিল গৃহীত হইবার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট তাহা উপস্থাপিত হইলে উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিবেন, এবং তিনি তাহা করিতে অসমর্থ হইলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’
কাজেই সংবিধানসম্মতভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হলে অবশ্যই বর্তমানে চলমান সংবিধানের ১৪২ ধারা মেনেই করতে হবে। সংবিধান সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পুনর্লিখন সংবিধান বলবৎ থাকলে সংসদ ও সংসদ সদস্যগণ সহজেই করে ফেলতে পারত। কারণ মন্ত্রীদের মতো সংসদ সদস্যগণ সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের কোনো শপথ নেন না। তাছাড়া পতিত সরকার আরেকটি ফ্যাসাদ বাঁধিয়ে দিয়ে গেছে, ৭ক ও ৭খ নতুন করে সংবিধানে সন্নিবেশিত করে ১৪২ ধারার ক্ষমতাকেও সীমিত করে দিয়েছে। তাছাড়া সংসদও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই চলমান সংবিধানের অধীনে শপথকৃত অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বর্তমান সংবিধান সংশোধনের দৃশ্যমান কোনো পথ খোলা নেই। তবে যদি এ সরকার বিপ্লবী সরকার হতো এবং রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ না নিয়ে সরকার গঠিত হতো তাহলে সংবিধানের এ ১৪২ ধারা ও ৭ক ও ৭খ কোনোটাই প্রযোজ্য হতো না। কারণ তখন তারা নিজেরাই নিজেদের মতো করে জনগণ ও সময়ের প্রয়োজনে যে কোনো সংবিধান রচনা করতে পারত। কিন্তু যে কোনো অজ্ঞাত কারণে অন্তর্বর্তী সরকার সে সুযোগ আপাতত হাতছাড়া করে ফেলেছে। তবে পথ যে খোলা নেই তা নয়।
বর্তমানে চরম বাস্তবতা হলো এ সংবিধানের কতিপয় ধারা বিলুপ্ত করতেই হবে। কারণ এ ধারাগুলো জনগণ মানে না এবং জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যেমন ৭ক ও ৭খ। সংবিধানের ৭ক ও ৭খ পাঠকদের সদয় অবগতির জন্য হুবহু নিচে উল্লেখ করা হলো। [৭ক। (১) কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় -(ক) এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে- তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। (২) কোনো ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত- (ক) কোনো কার্য করিতে সহযোগিতা বা উসকানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে- তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে। (৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দন্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত হইবে।
সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করা হয়েছে ৭খ ধারা অনুযায়ী। সেখানে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।
উল্লিখিত ৭ক ও ৭খ ধারা দুটি পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অশুভ মস্তিষ্কের ফসল। তিনি অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে অনৈতিক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ দ্বারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্বার্থ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছিলেন। যা বিএনপিসহ কোনো বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি মেনে নেয়নি এবং জনগণও কোনো প্রকার সমর্থনও প্রকাশ করেনি। এ ধারা দুটি সংবিধানে থাকতে পারবে না এবং জনগণ তা কোনো অবস্থাতেই থাকতে দেবে না। কিন্তু আমাদের কিছু ভুল পদক্ষেপের কারণে এ ধারা দুটি রহিত করতে অযথা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ জটিলতা বর্তমানে গঠিত কমিশনের মাধ্যমে দূর করা যাবে ভাবতে হবে। তা ভবিষ্যতে আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে সংবিধান যথাবিহীত বলবৎ আছে তাই এই সংবিধানের কোনো ধারাই কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধানের বর্তমান ৭খ বলবৎ থাকা অবস্থায় সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সব অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে। তাছাড়া বলবৎ সংবিধানের কোনো পরিবর্তনের প্রচেষ্টাও ৭ক অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাই ভবিষ্যতে গণেশ উল্টে গেলে আমাদের অনেককেই হয়তো বিপন্ন অবস্থায় পড়তে হতে পারে। আমি বলছি না সে ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। তবে গত জুন মাসেও আমরা কেউই বর্তমান পরিবেশ অনুমান করতে পারিনি। তবে তাই বলে আমাদের পিছিয়ে এলে হবে না। ফ্যাসিবাদ নির্মূল আমরা করেছি, এখন ফ্যাসিবাদ যেন দেশে জন্মগ্রহণ করতে না পারে তার মূল আমাদের অবশ্যই উৎপাটন করতে হবে। আমি বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে আশাতীত আশাবাদী। দেশ শাসন, গঠন ও পরিচালনায় এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তাই বর্তমান ছাত্র ও যুব শক্তিকে শতভাগ কাজে লাগাতে হবে। তাদের সহজ ও সাবলীল চলাচলের জন্য প্রবীণদের রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ। বিশ্ব এখন বিন্দুতে মিলে যাচ্ছে। এখন উন্নত বা অনুন্নত বলে কিছু নেই। শুধু গ্রহণ বা অ্যাডাপ্টেশনের যুগ। যে যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করতে পারবে সে জাতিই সামনে এগিয়ে যাবে। এখন কোনো সীমান্ত রেখা বা বাধা নেই। বিশ্ব উন্মুক্ত একটি বিশাল প্রান্তর। উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যে বা যারা এগিয়ে যাবে বিশ্ব থাকবে তাদের করায়ত্ত। এখন রাষ্ট্্র, সংবিধান, সরকার, রাজনীতি, জনগণ কতগুলো মূল্যহীন অনুভূতি যার বাস্তব কোনো রূপ থাকবে না। আমাদের শুধু ফ্যাসিস্ট পতন করতে বিপ্লবে বসে থাকলে হবে না। আমাদের চিন্তা, চেতনা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনেও বিপ্লব আনতে হবে। তাহলেই আমরা জাতি ও দেশ হিসেবে টিকে থাকতে পারব এবং সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
ফিরে যাই সংবিধানে। নতুন একটি সংবিধান রচনা ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু চরম বাস্তবতা হলো- বর্তমানের সাংবিধানিক অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন বা পুনর্লিখনের কোনো সুযোগ আছে কি না ভাবতে হবে। যদি এর কোনো একটিও করতে হয় তাহলে আমাদের কিছুটা পেছনে ফিরে গিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে। কাজটি কঠিন বা অসম্ভব কিছু নয়। সবাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরা আবার শুরু করতে পারব। তাই আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে একটি ধারণা উঁকিঝুঁকি মারছে। বলতে সাহস পাচ্ছি না তবু দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমার ধারণাটি সবার সঙ্গে শেয়ার করার দুঃসাহস দেখাচ্ছি :
১। অনতিবিলম্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বদলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি নতুন বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে, যেখানে অর্ধেক জুলাই বিপ্লবের পক্ষের রাজনৈতিক দল থেকে (ছাত্র ও যুবকসহ) আনুপাতিক হারে এবং বাকি অর্ধেক বর্তমান উপদেষ্টা, বিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য পেশাজীবী এবং বৈষম্যবিরোধী যোগ্য নেতাদের মধ্য থেকে নিতে হবে।
২। বর্তমান সংবিধান বিলুপ্ত করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার জন্য দেশের স্বনামখ্যাত, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিয়ে ৯ সদস্যের সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে, প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সব ধর্মের নেতৃবৃন্দসহ সব রাজনৈতিক শক্তি, আলোচনা করে গঠনের ৩৬৫ দিনের মধ্যে খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে বিপ্লবী সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে।
৩। নতুন খসড়া সংবিধান প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে বিপ্লবী সরকার একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া বিপ্লবী সরকার প্রয়োজনীয় ঘোষণা দিয়ে কার্যকর করবে।
৪। নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রণয়নকৃত খসড়া সংবিধান জনগণের অনুমোদনের জন্য গণভোটের ব্যবস্থা করবে। গণভোট স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, বৃহত্তর জনগণের দৃশ্যমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে।
৫। গণভোটের পরের দিন থেকে পরবর্তী অনধিক ৩৬৫ দিনের মধ্যে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা ও সততা, ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা ও প্রার্থীদের সন্তোষজনক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৬৫ দিনের পরবর্তী ১৩৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে এবং জাতীয় নির্বাচন সমাপ্তির অনধিক পাঁচ দিনের মধ্যে গেজেট আকারে ফলাফল ঘোষণা করতে এবং পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সাংবিধানিক সরকার গঠিত হবে।
৬। বিপ্লবী সরকারের রাষ্ট্রপতি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে প্রথম সাংবিধানিক সরকারের পূর্ণ মেয়াদকালে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং বিপ্লবী সরকারের সব সদস্যগণও ইচ্ছা করলে প্রথম নির্বাচিত সাংবিধানিক সরকারের পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত সরকারের সদস্য হিসেবে বহাল থাকবেন।
এখানে আরেকটি বিষয় সবার বিবেচনার জন্য আগেভাগে বলে রাখতে চাচ্ছি। নতুন সংবিধানে কী লেখা হবে তা আমি জানি না এবং এ মুহূর্তে জানা সম্ভবও নয়। তবে সংবিধান রচনার মান্যবর সদস্যগণের কাছে আমার নিম্নলিখিত দুটি আবেদন থাকবে :
১। সংসদের আসন যেন অনধিক ৪৫০ আসনের হয়। তার মধ্যে বর্তমান ৩০০ আসনকে যেন ৩৫০ আসনে বর্ধিত করা হয়। মহিলা আসন বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। মহিলাগণও সরাসরি নির্বাচন করবেন।
২। ৪৫০টি আসনের মধ্য থেকে যেন অনধিক ১০০টি আসন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের জন্য রাখা হয়। দেশের অনধিক ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় যাদের ছাত্র সংখ্যা প্রতিটিতে ১০ হাজারের বেশি তাদের প্রতি ১০ হাজারের জন্য জাতীয় সংসদে দুটি করে আসন থাকবে। তবে প্রথম পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মোট আসন ১০০টির বেশি হবে না। তবে প্রয়োজনে আলোচনা করে পরবর্তী সংসদে তারুণ্যের চাহিদা বিবেচনা করে আসন সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। বর্ণিত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ও জিএস তাদের ছাত্র সংসদের মেয়াদকাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের সদস্যও থাকবেন। একটি ছাত্র সংসদের মেয়াদ শেষে নতুন ছাত্র সংসদের ভিপি ও জিএস পূর্বেকারদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। তবে তারা কোনো অবস্থাতেই কোনো রাজনৈতিক দলের সাধারণ সদস্যও হতে পারবেন না। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে তিনি বা তারা সংসদ সদস্যের পদ থেকে বরখাস্ত হবেন এবং তাদের এহেন কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যথা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে জাতীয় সংসদেও আসন আপনাআপনি শূন্য হয়ে যাবে এবং পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদে তাদের আসন শূন্য থাকবে।
জুলাই বিপ্লবে যে ৫৫ জন অকুতোভয় সমন্বয়কারী নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বিপ্লবী সরকারের অধীনে নতুন সংবিধানে নির্বাচিত জাতীয় সংসদে একবারের জন্য সংসদ সদস্যের আসন দেওয়া যায় কি না এ নিয়েও সবাইকে ভাবার অনুরোধ জানাব। পুরনো ধ্যানধারণা বাদ দিয়ে নতুন কিছু ভাবতে হবে। আসুন সবাই মিলে দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাই।
♦ লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য, কিশোরগঞ্জ-২