‘চুমকি চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে...; হ্যাঁ, চলচ্চিত্রের গানেই সঙ্গী হয়ে দেদার সাফল্য পেয়ে যান জীবন্ত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলম। ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্রের গান দিয়েই তাঁর জনপ্রিয়তা। বর্তমান সময়ে এই কিংবদন্তি শিল্পীর অল্প করে গানের গল্প তুলে ধরা হলো-
গান নিয়ে কেমন আছেন?
অনেক ভালো আছি। এখনো টিভি চ্যানেলসহ নানা অনুষ্ঠানে আমাকে গান করার জন্য ডাকা হয়, এর চেয়ে বেশি ভালো থাকা আর কাকে বলে। এরই মধ্যে বেশকিছু প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেশের অবস্থা একটু খারাপ হওয়ায় সেগুলো পিছিয়ে গেছে। এখন সার্বিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, কাজগুলো নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ব আশা করছি।
মূলত চলচ্চিত্রের গান দিয়ে আপনার জনপ্রিয়তা শুরু, এই মাধ্যমে এখন কেমন ব্যস্ত?
দেখুন, এখন বছরে কয়টা মানসম্মত গল্প ও গানের ছবি হচ্ছে যে আমাদের মতো সিনিয়র শিল্পীদের দিয়ে গাওয়াবে। এখন গানে গভীরতা বলে কিছু নেই। এজন্যই কালজয়ী নয়, ক্ষণস্থায়ী হয় এখনকার গান। আগে একটি গান তুলতে প্রচুর সময় লাগত। আর এখন এক বসাতেই গান লেখা, সুর দেওয়া, গাওয়া হয়ে যাচ্ছে। মানে গান সৃষ্টি করা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। সহজ হয়ে যাওয়া জিনিসের গ্রহণযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব খুবই কম। এভাবে তো সৃষ্টিশীল কাজ হয় না। আগে বড় মাপের সব চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ছিল, তারা ভালো ভালো ছবি নির্মাণ করত। তাতে আমাদের প্লেব্যাকের জন্য ডাকা হতো। এখন যে ভলো ছবি একেবারেই হচ্ছে না তা কিন্তু নয়, পরিমাণে কম।
তাহলে এখনকার শিল্পীদের নিয়ে কী বলবেন?
এখনো অনেক ভালো গীতিকার, সুরকার আর শিল্পী আসছে। টেকনিক্যাল সাপোর্টেরও উন্নতি হয়েছে। তবে একজন গুরুর বা অভিভাবকের খুবই অভাব চলছে। সংগীত হচ্ছে গুরুমুখী বিদ্যা। গুরু ছাড়া প্রকৃত সংগীত কখনো হয় না। এখন ঘরে ঘরে ইউটিউব। এই মাধ্যমে সহজে গান গেয়ে ইউটিউবে আপলোড করা যাচ্ছে। ডলার আয় করছে। আসলে আমাদের দেশে এখন যন্ত্রশিল্পীর খুব অভাব। যন্ত্রশিল্পীদের মাধ্যমেই একজন শিল্পীর গানের মাধুর্য ছড়ায়। শুধু কিবোর্ড দিয়ে তো আর প্রকৃত গান হয় না। তাই সৃষ্টির পরপরই হারিয়ে যাচ্ছে এমন গান।
আপনার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট কোন সময়টা বা কোন গান?
যদি গান শেখার কথা বলি তাহলে বলব যে সময়টায় সমর দাশ আমাকে শেখালেন। সেই শিক্ষাটাই আমার গান গাওয়ার স্টাইলকে বদলে দিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে খুব কাজে এলো। দ্বিতীয়ত, প্রথম যে গানটি রুনা লায়লার সঙ্গে গাইলাম। ‘পাখির বাসার মতো দুটি চোখ তোমার ঠিক যেন নাটোরের বনলতা সেন-’ এই গানটি আমাকে এতটাই জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল যে কেউ ভাবেইনি এ গানটি এত হিট করবে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গান করছি এখনো। যতদিন পারি গেয়ে যেতে চাই। দোয়া করি চলচ্চিত্র ও গানের সুদিন যেন আবার নিয়মিত হয়।