সৌন্দর্য, সৌষ্ঠব, লাবণ্যের প্রতিমূর্তি ছিলেন অড্রে হেপবার্ন। জাদুকরী মুখশ্রী দিয়ে ঘায়েল করেছেন কোটি তরুণের হৃদয়। ২০ শতকের হলিউডের বিশুদ্ধ প্রতিমা। তাঁর অভিনয় অসাধারণ করেছে ‘দ্য চিলড্রেন্স আওয়ার’, ‘প্যারিস হোয়েন ইট সিজলস’, ‘দ্য নানস স্টোরি’, ‘ফানি ফেস’, ‘হাউ টু স্টিল আ মিলিয়ন’, ‘মাই ফেয়ার লেডি’র মতো ছবিকে। এক ‘রোমান হলিডে’র জন্যই আলাদা করে মনে রাখতে হবে তাঁকে। এ কালজয়ী অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
হলিউডের রাজকন্যা
হলিউডের সেই বিখ্যাত সিনেমা ‘রোমান হলিডে’র কথা এখনো ভোলেননি দর্শক। এতে ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন ‘রাজকন্যা’র চরিত্রে অভিনয় করে আজও বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে হলিউডের রাজকন্যাই হয়ে আছেন। অড্রে হেপবার্ন শুধু ব্রিটিশ অভিনেত্রীই ছিলেন না, ছিলেন মানবহিতৈষী। হলিউডের স্বর্ণযুগে হেপবার্ন একজন চলচ্চিত্র ও ফ্যাশন আইকন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট কর্তৃক মার্কিন চলচ্চিত্র ইতিহাসের তৃতীয় সেরা নারী কিংবদন্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং আন্তর্জাতিক সেরা পোশাক-পরিধানকারী তালিকা হল অব ফেমেও স্থান পান। অনেকের মতে তিনি সর্বকালের অন্যতম প্রকৃতিগতভাবে সুন্দর নারী।
বাংলাদেশ সফর
ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ১৯৮৯ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় এসেছিলেন অড্রে হেপবার্ন। এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে ইউনিসেফের বিভিন্ন দাতব্য কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশে তাঁর ভ্রমণ শেষ হয় ২৪ অক্টোবর। অসম্ভব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন।
বাংলাদেশ সফর শেষে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের এক সাক্ষাৎকারে অড্রে হেপবার্ন বলেছিলেন, ‘পাশ্চাত্যে বসে আমরা জানি যে বাংলাদেশ বন্যা আর দুর্যোগের দেশ। কিন্তু আমার কাছে বাংলাদেশ মানে কবিতা আর সৌন্দর্যের দেশ।’
বর্ণাঢ্য অভিনয়জীবন
অভিনয়জীবনের প্রথম দিকে কয়েকটি ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে এবং ১৯৫১ সালে ব্রডওয়ে নাটক জিজিতে অভিনয়ের পর, হেপবার্ন রোমান হলিডে (১৯৫৩) চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন, যার জন্য তিনি প্রথম অভিনেত্রী হিসেবে একই সঙ্গে একটি একাডেমি পুরস্কার, একটি গোল্ডেন গ্লোব এবং একক কর্মসঞ্চালনের জন্য বাফটা পুরস্কার পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর, তিনি অনডিন নাটকে অভিনয়ের জন্য মঞ্চনাটকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য টনি পুরস্কার অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি বেশ-কয়েকটি সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। হেপবার্ন স্বল্প সংখ্যকদের মধ্যে একজন যিনি একাডেমি, এমি, গ্র্যামি ও টনি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ অভিনেত্রী হিসেবে তিনবার বাফটা পুরস্কার অর্জনের রেকর্ড করেন।
ইউনিসেফের দূত ও তাঁর প্রতিমূর্তি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিনয় জগৎ থেকে দূরে সরে আসেন এবং ইউনিসেফের হয়ে জনহিতৈষী কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।
ইউনিসেফের সদর দফতরে হেপবার্নের প্রতিমূর্তি স্থাপন করা হয়। রোমান ছুটি কাটানো রাজকন্যা তথা আমৃত্যু ইউনিসেফের দূত অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন জাতিসংঘের হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন। হেপবার্নের কাজের প্রতি সম্মান জানাতে নিউ ইয়র্কে ইউনিসেফের সদর দফতরে একটি প্রতিমূর্তি স্থাপন করেছে জাতিসংঘ।
‘শিল্পীর শেষ বলে কোনো কথা নেই’
বাংলাদেশেও ইউনিসেফের বিভিন্ন কর্মকান্ড ঘুরে দেখেন হেপবার্ন। আজও সেই স্মৃতি আঁকড়ে আছেন চিত্রনায়িকা শাবানা এবং ববিতা। যারা তখন তাঁর সঙ্গে সেসব কর্মসূচির অংশ হয়েছিলেন।
অভিনেত্রী ববিতা বলেন, ‘১৯৮৯তে হলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা অড্রে হেপবার্ন গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হওয়ার পর বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। জানতে চেয়েছিলাম একজন জনপ্রিয় শিল্পী হয়ে মানবসেবা করতে কেমন লাগছে। উত্তরে তিনি বলেন, একজন শিল্পীর শেষ বলে কোনো কথা নেই। তারা ক্যামেরার আড়ালে থেকেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে যেতে পারেন। তাঁর অনুপ্রেরণা থেকেই নানা সময়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছি। দুনিয়াজোড়া খ্যাতি যার, আমাদের অনেক আপন করে নিয়েছিলেন। মানুষটার মুখে হাসি লেগেই থাকত।’
প্রিয় শহরে চিরঘুমে..
১৯৯৩ সালের ২০ জানুয়ারি বিরল তলপেটের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি। সুইজারল্যান্ডের এক ছোট্ট শহরে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ওই শহরেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন এ মহানায়িকা।