বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মানব উন্নয়নে ৩ ধাপ এগোলো বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে তিন ধাপ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৩৯তম স্থানে। আগের বছর ২০১৫ সালে এই সূচকে বাংলাদেশ ছিল ১৪২তম অবস্থানে। এবার বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকার দেশ ঘানা ও জাম্বিয়া। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মানব উন্নয়ন সূচক ২০১৬ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চম। এই অঞ্চলে সবার চেয়ে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা (৭৫তম)। এর পরের অবস্থান মালদ্বীপের। দেশটি মানব উন্নয়নে ১০৫তম স্থানে অবস্থান করছে। ভারতের অবস্থান ১৩১ আর ভুটান রয়েছে ১৩২তম  স্থানে। এর পরেই বাংলাদেশ। সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পরে রয়েছে নেপাল (১৪৪তম) ও পাকিস্তান (১৪৭তম)।

‘সবার জন্য মানব উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি যৌথভাবে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য এসডিজি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে মানবসূচক উন্নয়ন প্রতিবেদনের মুখ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন ইউএনডিপির পরিচালক ড. সেলিম জাহান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিইডি চিফ নকিব বিন মাহবুব এবং ধন্যবাদ জানান ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি।  প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব উন্নয়ন সূচকে গত তিন বছরের মতো শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের দেশ নরওয়ে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তৃতীয় সুইজারল্যান্ড ও চতুর্থ জার্মানি। পঞ্চম স্থানে যৌথভাবে রয়েছে ডেনমার্ক ও সিঙ্গাপুর। এ ছাড়া সপ্তম স্থানে নেদারল্যান্ডস, অষ্টম আয়ারল্যান্ড, নবম আইসল্যান্ড এবং দশম স্থানে রয়েছে দুটি দেশ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মানব সূচকে আমাদের অর্জনগুলো ভালো। আমরা আরও দ্রুতগতিতে এগোতে পারতাম। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এ কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে সেটি ভয়াবহ। প্রতিবছর আমরা ভূমি হারাচ্ছি। যে দেশগুলোর কারণে আমরা ভুক্তভোগী তারা এর দায় নিচ্ছে না। বিশ্বের ৫টি দেশ চীন, ব্রাজিল, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতো বড় দেশগুলো প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গমন করছে। অথচ ছোট দেশ হিসেবে এর দায় নিতে হচ্ছে আমাদের। তারপরও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। মন্ত্রী জানান, কয়েক বছর ধরে গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশ ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এবার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মানব সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি গর্ব করার মতো। তিনি বলেন, নারীর উন্নয়নে বিভিন্ন সূচকে অবশ্যই ভিন্নতা আছে। তবে সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণের জায়গা থেকে আমরা নারীরা অনেক এগিয়ে গেছি। তবে অংশীদারিত্বের দিক থেকে এখন আমাদের অগ্রগতি আরও নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে নারীর অংশীদারিত্ব পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উল্লেখ করে ড. শামসুল আলম বলেন, সংসদে প্রায় ২০ শতাংশ আসন নারীর দখলে। প্রায় ৪২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত। বাংলাদেশের শ্রম খাতেও নারীর অংশগ্রহণের হার প্রায় ৪৩ শতাংশ। আবুল কালাম আজাদ বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে মানব সূচকে অনেক ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে আছি। সূচক নির্ধারণে যেসব তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে তা আগের। সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে হিসাব করলে মানব সূচকে বাংলাদেশের আরও বেশি অগ্রগতি দেখা যাবে।

সর্বশেষ খবর