বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোটা সংস্কারে ছাত্ররা আলোচনায় বসতে চেয়েছিল কিন্তু সরকার জমিদারসুলভ আচরণ করে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। এই সরকার দেশের জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য সব দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয়ভাবে টিকে থাকা।
গতকাল বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় নির্দয় দমন-নিপীড়ন বন্ধ, অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাজনীতিকে উন্মুক্ত ও গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার একটার পর একটা ইস্যু তৈরি করে মূল ইস্যুকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়। এখন তারা জামায়াত নিয়ে ইস্যু করেছে- এটিও তাদের আরেকটি প্রজেক্ট। তিনি বলেন, এতদিন সিদ্ধান্ত (জামায়াত নিষিদ্ধ) নেয়নি কেন তারা? আজকে নিচ্ছে কেন? এজন্য তাদের অনেক যুক্তি থাকবে, অনেক কথা তারা বলবে। আমরা যে এসব কথা বলছি, এ জন্যও তারা অনেক কথা বলবে। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। এটি ইস্যু পরিবর্তনের অপকৌশল। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ধরনের ঘটনা স্বৈরাচারী। যারা স্বৈরাচার, জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক থাকে না তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত বহু নিয়েছে। এমনকি এগুলো তাদের নিতে হয় বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্রে। যারা এখানে রাজনীতি করে তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার। এখানে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে সে কার রাজনীতি গ্রহণ করবে? আর কার রাজনীতি গ্রহণ করবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলনের প্রথম থেকে বিএনপি-জামায়াতের ওপর দোষ দেওয়া হচ্ছে। আর আগে থেকে যদি তারা এতকিছু জানতেন তাহলে প্রথমেই কেন থামালেন না। আপনারা কি চাচ্ছিলেন মানুষের এভাবেই প্রাণ যাক? ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশের হামলার অভিযোগ এনে তিনি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা রাজনীতিতে দেখিনি। গোটা জাতির সঙ্গে মশকরা করা হয়েছে। ছাত্রদের মৃত্যুকে হেয় করে দেখা হচ্ছে। সরকারের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। একটা অদৃশ্য শক্তি এই দেশ পরিচালনা করছে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের সরকার বলে কিছু নেই। অদৃশ্য শক্তি অরাজনৈতিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করছে। তিনি আরও বলেন, আজকে এত বড় ক্রাইসিস মুহূর্তে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যে, দেশে কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নেই। কারণ প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার না হলে তো সমস্যার সমাধান হবে না।
নতুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি ছাত্রদের পাশে আছে উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, তাদের (সাধারণ শিক্ষার্থী) অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে যে সংগ্রাম-আন্দোলন তারা করেছে, তাদের সেলুট। বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন কেউ রুখে দিতে পারেনি। দেশপ্রেমিক মানুষ রাস্তায় নেমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ব্যক্তিত্বরা এগিয়ে আসছেন। সবাই সরকারের পতন চায়। তিনি বলেন, এ দেশে জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠোপোষক হলো আওয়ামী লীগ। এ হত্যার বিষয়ে তদন্তে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ করা উচিত। তিনি বলেন, পুলিশের গুলিতে নির্বিচারে অনেক শিশু মারা গেছে, রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে।