বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেশব্যাপী ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পুলিশি বাধার মুখে পড়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মিছিল করেছেন, অবস্থান নিয়েছিলেন হাই কোর্ট মাজার গেটের সামনে। এ ছাড়া জেলায় জেলায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার ঘটনার পাশাপাশি ঘটেছে আটক এবং ধস্তাধস্তির ঘটনাও। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক ও আইনজীবীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি চলাকালে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল ঢুকে পড়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। গতকাল দুপুর পৌনে ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেটে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা প্রবেশ করে। প্রায় ৩০ মিনিট সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ও আইনজীবী সমিতি ভবনের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে আইনজীবী ও পুলিশের অনুরোধে তারা সুপ্রিম কোর্ট এলাকা ত্যাগ করে।
শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা গতকাল দুপুর ১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট দিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গেটে তালা দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে মাজার গেটের পশ্চিম পাশের পকেট গেটে থাকা ব্যারিকেড ভেঙে কয়েকজন আইনজীবী বাইরে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দেন। এরপর দুপুর ১টা ২৭ মিনিটের দিকে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে একই গেটের ব্যারিকেড পুনরায় ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা মাজার গেটের ভিতরে প্রায় ১৫ মিনিট অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে তারা এখান থেকে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের দিকে এগিয়ে যান। দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে মিছিল-স্লোগানে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, গ্রিন ইউনিভার্সির্টি, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন। এখানে সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপি-জামায়াত-সমর্থক আইনজীবীরাও অংশ নেন। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে দিতে মাজার গেট দিয়ে শিক্ষা অধিকার চত্ত্বরের দিকে বেরিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও আন্দোলনকারীদের কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাবির দোয়েল চত্বর থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে হাই কোর্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিশু একাডেমির সামনে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতন্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। ঘটনাস্থল থেকে এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নুসরাত জাহান চৌধুরী এবং প্রভাষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া। এ সময় পুলিশ শেহরীন আমিনের ‘হাত মুচড়ে দেয়’ এবং ‘ধাক্কা দিয়ে’ মাটিতে ফেলে দেয়। এতে তিনি হাঁটুতে ব্যথা পান।
পরে শেহরীন আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ তুলে নিতে চাইলে আমি বাধা দিই। বললাম তার অপরাধ কী? তল্লাশি করার থাকলে আপনি আমাদের সামনে করুন। কিন্তু তিনি (পুলিশ সদস্য) কোনো কথা না শুনে বল প্রয়োগ করেন। আমার হাত মুচড়ে দিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে যেতে চান। আবার ধরতে গেলে পুলিশের ধাক্কায় আমি পড়ে যাই। হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছি, তবে হাত মুচড়ে যাওয়ায় বেশি ব্যথা পেয়েছি।’
অন্যদিকে মৎস্য ভবনের মোড় থেকে মিছিল নিয়ে আরেক দল শিক্ষার্থী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে দিয়ে কদম ফোয়ারার সামনে পৌঁছালে তারাও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ফিরে যাওয়ার সময় সেখান থেকে দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান পুলিশের সঙ্গে গিয়ে দুপুর ২টার দিকে দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। আমাদের বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রমনা জোনের সহকারী কমিশনার। তাই আমরা তার সঙ্গে কথা বলে দুজন শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনি।’
এ ছাড়া শিশু একাডেমির সামনে থাকা শিক্ষার্থীদের একটি দল কদম ফোয়ারার দিক থেকে এসে হাই কোর্ট মোড়ের সামনে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় বিচার দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিকাল ৩টার দিকে তারা কর্মসূচি শেষ করে চলে যান।
বুয়েট : দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামন থেকে মিছিল বের করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে হাই কোর্ট এলাকায় অবস্থানরত অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জড়ো হয়। এর আগে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। এ সময় শিক্ষকদের মাথায় লাল কাপড় বাঁধা ছিল।
মিরপুর : রাজধানীর মিরপুরের বেনারসি পল্লীর একটি সড়কে দুপুর দেড়টার দিকে মিছিল করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের একটি দল তাদের মোটরসাইকেল দিয়ে ঘিরে রাখে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। একই সময়ে মিরপুর-১০ নম্বরের প্রধান সড়কে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে এগিয়ে গেলে মাঝখানে পড়ে পুলিশের ওই দল। পরে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেয় পুলিশ।
শিক্ষকদের সংহতি : রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাদের সঙ্গে শিক্ষকরাও যোগ দেন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।
মিছিলটি শিশু একাডেমির সামনে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে পৌনে ১টার দিকে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে প্রিজনভ্যানে তোলে পুলিশ। পরে আইনজীবী, শিক্ষক, অভিভাবক ও মানবাধিকারকর্মীরা পুলিশের গাড়ি আটকে আটক দুজনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
মার্চ ফর জাস্টিসের সমর্থনে পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা। গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে আইনজীবীদের একটি দল ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিলটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির দিকে চলে যায়। এ সময় তারা মার্চ ফর জাস্টিসের সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে ঢাকার নিম্ন আদালত এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তারা আদালতের প্রধান ফটকগুলো বন্ধ করে রাখে। শুধু আইনজীবী, সহকারী, কর্মচারী ও কাজে এসেছেন এমন ব্যক্তিদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বেলা সোয়া ১টার দিকে আদালত এলাকায় আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ছাড়া অন্য কোনো কিছু জড়িত নেই। আমাদের বিরোধ তাদের সঙ্গে যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারকে কাজে লাগিয়ে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের দুই দফা লাঠিচার্জে সাংবাদিকসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে নগরীর সদর রোড ও ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার পর তাদের হেফাজতে নেওয়া ১৩ শিক্ষার্থীকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হুজাইফা রহমান জানান, মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালনে বরিশাল নগরীর সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে তারা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি এসে তাদের আটকে দেয়। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
জাবি প্রতিনিধি জানান, বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও অংশ নেন। গতকাল দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ ভবন-সংলগ্ন মহুয়াতলা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-সংলগ্ন সড়ক, নতুন প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মহুয়াতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা-গাজীপুর আঞ্চলিক সড়কের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের শিববাড়ী মোড় এলাকায় অবস্থানের চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি চলাকালে গতকাল পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। কয়েকটি স্থানে লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে।
গতকাল দুপুরে নগরীর রয়েল মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শিববাড়ি, ডালমিল মোড়, ডাকবাংলা ও পিকচার প্যালেসসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়লাপোতা এলাকায় শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আহসান উল্লাহ কলেজে আশ্রয় নেয়। তারা ভিতর ঢুকে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে তালা ভেঙে তাদের আটক করে পুলিশ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, আদালত চত্বরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয় এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ওই এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে ১৮ জনকে আটক করে। ঘটনার পর আদালতপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রেফতাররা নিজেদের ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দাবি করলেও পুলিশ বলছে, অধিকাংশ জামায়াত-শিবিরের কর্মী। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে পুলিশের গাড়িতে তারা হামলা চালিয়েছে। যাচাইবাছাই শেষে তাদের নাম-পরিচয় জানানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক জানান, শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি থাকলেও জামায়াত-শিবির কর্মীরা তাতে ঢুকে পড়ে। পুলিশ চুপচাপ থাকলেও হঠাৎ করেই তারা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ছয়জন নিজেদের ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাবি করেছে। পুলিশ বিষয়টি যাচাইবাছাই করে দেখছে। অন্যরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।
রাবি প্রতিনিধি জানান, ছাত্রহত্যার বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসকারীদের শাস্তি এবং দেশে গণ গ্রেফতার বন্ধের দাবিও জানানো হয়। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অনুষ্ঠিত পৃথক দুই কর্মসূচিতে এসব দাবি জানায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক শিক্ষক সমাজ এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, আদালত এলাকার দোয়েল ভবনের সামনে ছিল আইনজীবীদের একাংশ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান। একই সময়ে ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান। জানা যায়, গতকাল বেলা ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আদালত এলাকার দোয়েল ভবন চত্বরে জমায়েত ঘোষণা করে। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার দিকে জেলা পরিষদ ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় আধঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন পুলিশ। এখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর আইনজীবীদের একাংশ আদালত থেকে মিছিল-স্লোগানসহ বেরিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে পারেন।
চবি প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের হত্যা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও র্যালি করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষকরা। বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের ব্যানারে এতে অংশ নেন বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৮০ জন শিক্ষক।
এতে সমন্বয়ক হিসেবে আছেন প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ মিনারে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাজের ব্যানারে একই দাবিতে মানববন্ধন ও র্যালি করেন ১১ শিক্ষক। এতে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের গোলাম হোসেন হাবীব, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মুনমুন নেছা চৌধুরীসহ অন্যরা।
দুই শিক্ষকের বাসায় হামলার অভিযোগ : গভীর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই শিক্ষকের বাসায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হল উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অন্য শিক্ষক হলেন প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান। তারা দুজনই কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও হয়রানির বিপক্ষে সরব রয়েছেন।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পুলিশি বাধায় প- হয়েছে। এ সময় ১০ জনকে আটক করে পুলিশ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর জানান- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আটক করা হয়েছে অন্তত ছয় শিক্ষার্থীকে। শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিকে সামনে রেখে গতকাল সকাল থেকেই শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকেই শহরের আদালত পাড়ার আশপাশে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ কোনো জায়গাতেই তাদের দাঁড়াতে দেয়নি। পরে বেলা ১২টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে পৌরসভা ভবনের সামনে দিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, বুধবার দুপুরে পৌর শহরের উপজেলা মোড় এলাকায় এ বিক্ষোভ করে শতাধিক আন্দোলনকারী। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নরসিংদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন এবং নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী শিরিন সুলতানাকে বিক্ষোভে দেখা যায়।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, দুই দফা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরে শহরের আর্ট গ্যালারি চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিক্ষোভ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ নিয়ে পৌরসভার গেটের দিকে যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মাঝে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যান। গতকাল দুপুরে মহানগরের সুবিদবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মার্চ ফর জাস্টিস স্লোগান নিয়ে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে পদযাত্রা করে নগরীর চৌহাট্টার দিকে রওনা হয় শিক্ষার্থীরা। সুবিদবাজার আসার পর পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে তারা। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলা শহরের মাইজদী বাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও বাঁশের লাঠি নিয়ে হাতে হাত রেখে বিভিন্ন স্লোগানে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নোয়াখালী জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে এসে সমবেত হয়।
নতুন কর্মসূচি : দেশে ছাত্র হত্যা, গণপ্রেপ্তার, হামলা-মামলার প্রতিবাদ এবং ছাত্র সমাজের নয় দফা দাবি আদায়ে আজ ‘রিমেমবারিং দ্য হিরোস’ কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল সহসমন্বয়ক রিফাত রশিদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্মসূচির অংশ হিসেবে নির্যাতনের ভয়ংকর দিন-রাতগুলোর স্মৃতিচারণা; শহীদ ও আহতদের নিয়ে পরিবার এবং সহপাঠীদের স্মৃতিচারণা; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হওয়া নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে চিত্রাঙ্কন-গ্রাফিতি, দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন তৈরি, ডিজিটাল পোর্ট্রটে তৈরি করা হবে। কর্মসূচি পালনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজ্ঞপ্তিতে।