ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সদ্যবিদায়ী মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সম্পর্কিত দুই মামা ফারুক ও মাসুদ সেরনিয়াবাত করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাপসের ধানমন্ডির বাসায় বসে ইজারা, টেন্ডারসহ সব কার্যক্রমের ঠিকাদার তারাই নিয়োগ দিতেন। এ কাজের সব তথ্য সিটি করপোরেশন থেকে সরবরাহ করতেন মেয়রের সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) নাসিরুল হাসান সজীব। এরাই ঠিকাদার নির্দিষ্ট করতেন। এদের মধ্যে যেসব ঠিকাদার কমিশন বেশি দিতেন তাদের কাজ দেওয়া হতো। এদিকে সিটি করপোরেশনের কয়েক হাজার কোটি টাকা মেয়র রেখেছেন নিজের মালিকানাধীন ব্যাংকে। বিদায়ী মেয়র ব্যারিস্টার তাপসের মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকের তিনি একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। তিনি দক্ষিণ সিটির এফডিআর, বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য ফি মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেন। শুধু এ ব্যাংকেই করপোরেশনের স্থায়ী আমানত ৫০০ কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। এ ছাড়া চার খাল সংস্কার প্রকল্পের ৮৭৬ কোটি, শাহবাগ শিশু পার্কের উন্নয়নকাজের ৬০৩ কোটিসহ কয়েকটি প্রকল্পের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা এ ব্যাংকে জমা রয়েছে।
সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, মেয়র লাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠানের পদে থাকতে পারবেন না। তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাপস মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ১২ মে মধুমতি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এরপর সিটি করপোরেশনের আর্থিক ফান্ড, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ সব ধরনের লেনদেন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করে সংস্থাটি। এর মধ্যে ডিএসসিসির স্থায়ী আমানত ৫০০ কোটি টাকা এফডিআর হিসেবে মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেন। এ ছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকাও সংগ্রহ করে ব্যাংকটি। নতুন করে চলতি অর্থবছরে ট্রেড লাইসেন্স ও নবায়ন ফি সংগ্রহের দায়িত্ব পায় ব্যাংকটি। হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্সের টাকা চুক্তি অনুযায়ী সাত দিন জমা থাকার কথা থাকলেও পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১৫ দিন ধার্য করে। সেটিও মানে না মধুমতি ব্যাংক। ট্রেড লাইসেন্স ও ট্যাক্সের জমা করা এ টাকা নির্দিষ্ট সময় ব্যাংকটি নিজস্ব কাজে ব্যবহার করে। এর লভ্যাংশ সিটি করপোরেশন পায় না। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আসে মধুমতি ব্যাংকে। এ ছাড়া ব্যাংকটির একটি বুথ করপোরেশনের আট তলায় রয়েছে। এ বুথের জন্য রুম ছেড়ে দিলেও আর্থিক কোনো চুক্তি হয়নি। মেয়রের মৌখিক নির্দেশে নগর ভবনে বুথ বসিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্যাংকটি। দক্ষিণ সিটির সব টেন্ডার ও ইজারার গডফাদার ছিলেন ফারুক ও মাসুদ সেরনিয়াবাত নামে মেয়রের দুই আত্মীয়। এ দুজনই ইজারা কাকে দেবেন নির্দিষ্ট করতেন। বাছাই করা ঠিকাদারদের মধ্যে যারা কমিশন বেশি দিতেন তাদের ইজারা দেওয়া হতো। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহ. শের আলী সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে কল দিলে সাড়া দেননি।