দেশের জাতীয় নির্বাচন এবং বিভিন্ন খাতে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ চেয়েছে বিএনপি। এ সংলাপের বিষয়ে যাতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খুব দ্রুতই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিকে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। গতকাল বিকালে রাজধানীর বেইলি রোডে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের ব্যাপারে এ আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
এদিকে গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, আগামীকাল ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার ও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপ শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার ও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপ শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এটি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেও শুরু করা হতে পারে। তবে তার আগে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের তারিখ ও সময়সূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দকে বহন করা গাড়ি যমুনায় প্রবেশ করে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অংশ নেন। আলোচনায় নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয় গুরুত্ব পায় বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ১২ আগস্ট বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রথম বৈঠক করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আজকে আমাদের আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী, এই অন্তর্বর্তী সরকার- যার নেতৃত্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রয়েছেন, তাদের আন্তরিকতা, দেশপ্রেম এবং যোগ্যতা দিয়ে তারা দেশকে খুব দ্রুত একটা স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারবেন। একই সঙ্গে তারা একটা নির্বাচনের দিকেও যেতে পারবেন। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো তারা করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা উনারাই (অন্তর্বর্তী সরকার) বলবেন, কত দিনের মধ্যে তারা (নির্বাচন দিতে) পারবেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কবে আলোচনা করবে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। ‘বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয়েছে কি না?’ এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কোনো তারিখ বলিনি। প্রয়োজনে উনারাই তো তারিখ বলবেন, আমরা তারিখ বলব না। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএনপি প্রতিনিধিরা মূলত বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ভাবনা, নির্বাচন নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। তারা বলেছেন, এই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। ভবিষ্যতেও এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যেন- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। সে ব্যাপারে তারা অনুরোধ করেছেন। তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা ও সম্ভাবনা আছে সে ব্যাপারেও তারা একমত পোষণ করেন। সব শেষে তারা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, বর্তমান সরকার সংস্কার এবং নির্বাচন সম্পর্কিত এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেবে সেটা নিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন এবং তারা সেটার একটি সমন্বিত অংশীদার হবেন।