গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভার, আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা গতকালও বিক্ষোভ করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনা টহলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। শ্রমিকরা জানান, গতকাল সকাল ৮টার দিকে সড়কে টহলরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। সেনা সদস্যরা শ্রমিকদের সড়কে অবস্থান না করা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, এমন কোনো কাজ না করতে অনুরোধ করেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাজীপুর : নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য দূর করে সমহারের ভিত্তিতে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকালও গাজীপুরে কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বেকার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় কয়েকটি কারখানা ভাঙচুর করা হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে শিল্প পুলিশের এএসপিসহ পাঁচ সদস্যসহ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় আরও অন্তত সাত/আটজন আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন ও স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের পাশাপাশি সমঅধিকারের ভিত্তিতে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের ভোগড়া বাইপাস, ছয়দানা, হাজীর পুকুর, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে বেকার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ‘ইস্ট ওয়েস্ট’ ও ‘প্রীতি গার্মেন্টসের’ চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। এ সময় তারা ইটপাটকেল ছুড়ে কয়েকটি কারখানার দরজা-জানালার কাচ ও গেট ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোশারফ হোসেনসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশসহ সেনাসদস্যরা সেখানে গিয়ে মহাসড়কের ওপর থেকে শ্রমিকদের থেকে সরিয়ে দেয়।
এদিকে একই দিন সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার ট্রান্সকম বেভারেজ কারখানার শ্রমিকরা বেতনভাতা বৃদ্ধি ও বৈষম্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে কারখানার প্রধান গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে মালিক পক্ষ কয়েকটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছেন বলে জানা গেছে।
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে সেনা টহল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক : আশুলিয়ার শিমুলতলায় বন্ধ থাকা দি ড্রেস অ্যান্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকাল থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নেন। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কারখানার মূল ফটক ও কারখানার উল্টো পাশে অবস্থান নেয়। কারখানার শ্রমিক সালমা আক্তার সকাল ৮টার দিকে সড়কে টহলরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তারা শ্রমিকদের সড়কে অবস্থান না করা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, এমন কোনো কাজ না করতে অনুরোধ করেন।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মেদ মুঈদ বলেন, আশুলিয়ার অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। গত কয়েক দিনের বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে চলা বিক্ষোভের চিত্র গতকাল দেখা যায়নি কোথাও। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, জেলা পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।