হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটের পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তেহরান। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, হামলায় ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একসঙ্গে ১০০-এরও বেশি মিসাইল ছুড়েছে ইরান। এদিকে, তেল আবিবের দিকে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ভূপাতিত করতে অঞ্চলটিতে মোতায়েন মার্কিন সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইরানের তরফে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কিছুক্ষণ পরই হোয়াইট হাউসের তরফে এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের ‘সিচুয়েশন রুম’ পরিস্থিতি মনিটরিং করেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, জর্ডানের রাজধানী আম্মানের আকাশ দিয়ে মিসাইল উড়ে যেতে দেখা গেছে। মিসাইলের কারণে জর্ডানেও সাইরেন বেজে ওঠে। ওই সময় অনেক মানুষ বাইরে বের হয়ে আসেন। ইরানের মিসাইল হামলার মধ্যেই একটি বিবৃতি দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এতে তারা বলেছে, ইরান এখনো মিসাইল ছুড়ছে এবং সেগুলো আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাধারণ ইসরায়েলিদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সেনাবাহিনী আরও বলেছে, যেসব বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে; সেগুলো হয় মিসাইল আটকানোর কারণে হচ্ছে অথবা আঘাত হানার কারণে হচ্ছে।
এদিকে, উ™ূ¢ত পরিস্থিতিতে জর্ডান তার আকাশসীমায় সব ধরনের বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাতে জানিয়েছে আলজাজিরা। অপরদিকে, ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের জাফা এলাকায় এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আটজন নিহত হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ইরানের তরফে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঠিক পূর্বে বন্দুক হামলার এ ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে জড়িত দুজনকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত এপ্রিলে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছিল ইরান।
এর আগে ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের ছত্রীবাহিনী, কমান্ডো ও সাঁজোয়া ইউনিটগুলোর অভিযানের মধ্য দিয়ে লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে তারা। হিজবুল্লাহর শক্তিকেন্দ্রগুলো নিশানা করে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে দেশটি। তারা আরও জানায়, গতকাল দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে তাদের বাহিনীগুলোর তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। তবে স্থল হামলা চালানোর এ দাবি মিথ্যা বলে পাল্টা দাবি করেছে লেবাননি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
এই স্থল অভিযান শুরুর আগে ইসরায়েল ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর নেতাদের ধ্বংস করে দেয়। গত সপ্তাহে বৈরুতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লার প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে তারা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার রাতে এ অভিযান শুরু করা হয়েছে এবং তাদের ৯৮তম ডিভিশন এটি পরিচালনা করছে। দুই সপ্তাহ আগে গাজা থেকে এনে এই ডিভিশনটিকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। এর আগে এই ডিভিশনটি কয়েক মাস ধরে গাজায় হামাসের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী আরও জানায়, তাদের বিমান বাহিনী ও গোলন্দাজ বাহিনীর সমর্থন নিয়ে দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘সীমিত, স্থানীয় লক্ষ্যগুলোতে’ স্থল অভিযান চালাচ্ছে তারা। সীমান্তের আশপাশের গ্রামগুলোতে অবস্থান নিয়ে থাকা হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ‘ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য আসন্ন হুমকি’ হয়ে উঠেছিল বলে দাবি করেছে বাহিনীটি। বাহিনীটি জানায়, সীমান্ত বরাবর হিজবুল্লাহর যেসব শক্তিকেন্দ্র ইসরায়েলকে হুমকি দিচ্ছিল তাদের লক্ষ্য করেই এই স্থল অভিযান চালানো হচ্ছে, এটি লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে শুরু করা কোনো যুদ্ধ নয়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ‘ইসরায়েলি গ্রামগুলোর অপর পাশের গ্রামগুলোকে সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছে হিজবুল্লাহ। এগুলো ইসরায়েলে একটি হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল।’
লেবাননে ইসরায়েলি সেনাদের প্রবেশের তথ্য মিথ্যা : লেবাননের ভিতর সীমিত আকারে স্থল হামলা শুরু হয়েছে বলে গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জানায় দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তবে স্থল হামলা চালানোর এ দাবি মিথ্যা বলে পাল্টা দাবি করেছে লেবাননি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
মোসাদের হেডকোয়ার্টার লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর হামলা : দখলদার ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হেডকোয়ার্টার এবং সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ‘ইউনিট ৮২০০’-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তেল আবিবের উপকণ্ঠে অবস্থিত মোসাদ হেডকোয়ার্টার এবং গিলিলতে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ইউনিট ৮২০০-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ফাদি-৪ রকেট ছোড়া হয়েছে।’ মোসাদের হেডকোয়ার্টার লক্ষ্য করে তেল আবিবে হামলার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড মধ্য ও উত্তর ইসরায়েলের বেসামরিকদের জন্য নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা।