শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হৃদরোগ প্রতিরোধের সহজ উপায়

হৃদরোগ প্রতিরোধের সহজ উপায়

বর্তমানকালে রোগীদের হার্ট ব্লক হওয়ার প্রবণতা ও গড়-পরতায় আক্রান্ত হওয়ার বয়স থেকে এটা লক্ষণীয়, অনেকে ৪০ বছর বয়স থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আপনাদের বয়স কি ৩০ বছর? যদি তাই হয় তবে এখন থেকেই হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কারণ বেশ কয় বছর আগেই আপনার শারীরিক গঠন (বৃদ্ধি) সম্পন্ন হয়ে গেছে, কিন্তু আপনার গত ১০ বছরের যে খাদ্যাভ্যাস ছিল তাও আপনি বজায় রেখেছেন, এটা ধরে রাখলে দিনে দিনে আপনার শরীরে চর্বি জমতে থাকবে। কারণ আপনার শারীরিক বৃদ্ধি রহিত হয়ে গেছে, তার জন্য যে বাড়তি খাদ্যের প্রয়োজন হতো তারও আর আপানার শরীরের প্রয়োজন নেই। তাই সমপরিমাণ খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেই এ বয়সে আপনার শরীরে চর্বি জমতে থাকবে এবং ওজন বৃদ্ধির (মেদ) সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়বে মানে আপনার রক্তনালীতে চর্বি জমা হয়ে ব্লক বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এ বয়সে খাদ্যে তেলচর্বির পরিমাণ কমাতে হবে। অনেকে প্রশ্ন করেন আমরা কি তেল ব্যবহার করব তবে প্রথম শর্ত হলো খাদ্যে তেলচর্বি ব্যবহার সীমিত করবেন। যদি আপনি কায়িকশ্রম কম করেন তবে অধিক তেলচর্বি খেলে আপনার শরীরে তা চর্বি হিসেবে জমা হতে থাকবে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বে। তবে যারা অধিক কায়িকশ্রম সম্পাদন করেন তারা অনেকভাবে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা থেকে রেহাই পাবেন এবং রক্তে কোলেস্টেরলের (চর্বি) পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দ্বিতীয় শর্ত হলো যতটা সম্ভব প্রাণিজ চর্বি ব্যবহার কম করুন, তার পরিবর্তে উদ্ভিজ্য তেল ব্যবহার করুন। পশুর চর্বি থেকে মাছের চর্বি অনেকগুণে নিরাপদ, প্রায় উদ্ভিজ্য তেলের সমান নিরাপদ। অনেকে প্রশ্ন করেন মাছের তেলচর্বি খাওয়া ঠিক হবে কিনা। মাছের তেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে মানে মাছের তেলে ওমেগা-থ্রি নামক চর্বি থাকায় এটা হৃদরোগীদের জন্য উপকারী তবে প্রথম শর্ত কিন্তু ভুলবেন না মানে আপনার কতটুকু পরিমাণ খাওয়া নিরাপদ তার চেয়ে বেশি তেল চর্বি কখনই খাওয়া যাবে না। উদ্ভিজ্য তেল সবচেয়ে নিরাপদ চর্বি বা তেল, তবে এক্ষেত্রে কি ধরনের উদ্ভিজ্য তেল খাওয়া উচিত? প্রথমত অলিভওয়েল ব্যবহারের একটি সর্বজনীন মতৈক্য আছে কারণ ভূ-মধ্যসাগর এলাকায় হৃদরোগের প্রবণতা অনেক কম। ওই এলাকার হৃদরোগ কম হওয়ার কারণ হিসেবে তাদের অলিভওয়েল ব্যবহার করাকেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, কেনোলা

ওয়েল যা আমেরিকা ও কানাডায় বেশি উৎপন্ন হয় এবং তারা বেশ কিছু গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, এটা অলিভওয়েলের কাছাকাছি নিরাপদ। তবে কেনোলা গাছ, ফল, ফুল ও বীজ দেখতে কিন্তু আমাদের সর্ষের মতো। সয়াবিন, সূর্যমুখী তেল এবং বর্তমান সময়ের আমাদের দেশীয় তেল- রাইজব্রেন ওয়েল, সর্বোপরি আমাদের খাঁটি সরিষার তেলও কিন্তু খাদ্য হিসেবে নিরাপদ।

আগে বলেছিলাম আপনার শারীরিক গঠন (বৃদ্ধি) শেষ হয়ে গেছে, তা কিন্তু সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আপনার ধারাবাহিক কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে এখনো আপনার শারীরিক কলেবর বৃদ্ধি করা সম্ভব। নিয়মিতভাবে কায়িকশ্রম সম্পাদন করলে আপনার মাংসপেশির কলেবর বৃদ্ধি পাবে, হাড়ের পূরত্ব বাড়বে, আপনার স্নায়বিক যোগ্যতা বাড়বে এবং সর্বোপরি আপনার শারীরিক যোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত কায়িকশ্রম আপনার শরীরের মেদ জমা রহিত করবে। শরীরের যেসব ভাঁজে চর্বি জমা হয়, কায়িকশ্রমের মাধ্যমে ওইসব ভাঁজ ব্যবহার হয়, যা শারীরিক নড়াচড়ার জন্য খুবই প্রয়োজন। কায়িকশ্রম সম্পাদনের জন্য অধিক শক্তির প্রয়োজন হয় এবং ব্যক্তি যদি খাদ্য গ্রহণ সীমিত রেখে কায়িকশ্রম সম্পাদন করেন তবে ওইসব ভাঁজ থেকে চর্বি সরে গিয়ে তা শক্তি উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আপনার শারীরিক গঠন ফিরে পেতে সাহায্য করবে। কায়িকশ্রম সম্পাদনের মাধ্যমে আপনার মাংসপেশি বৃদ্ধি করতে পারবেন (যা ব্যায়ামবীরগণ করে থাকেন)। অনেককে জিমে গিয়ে তা করতে দেখা যায়, অথবা জিমের মতো পরিশ্রম নিয়মিতভাবে করেও শরীর গঠন করতে পারেন। দেখা যায় যারা জিমে যান তাদের একটা বিরাট অংশ কিছুদিন ব্যায়াম করে আবার জিমে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তবে জিমে গিয়ে ব্যায়াম শিখে তা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ধারাবাহিকভাবে কাজে লাগিয়ে শ্রম সম্পাদন করলে তা থেকে অধিক সুফল পাওয়া যাবে এবং তা আপনার অভ্যাসে পরিনত হবে।

ডা. এম. শমশের আলী, সি. কনসালট্যান্ট,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং

মুন ডায়াগনস্টিক। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১

সর্বশেষ খবর